আলিপুর, গরফা, বারাসত, কালীঘাট, হরিদেবপুর!
পুলিশের উপরে হামলার এই তালিকা কোথায় শেষ হবে বা আদৌ শেষ হবে কি না কেউ জানে না।
বুধবার গভীর রাতে এই তালিকায় নাম লিখিয়েছে হরিদেবপুর। ওই দিন রাত ১২টা নাগাদ এলাকার শাসক দলের দুই সমর্থক ডব্লু আর পুটুর মধ্যে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে প্রথমে হরিদেবপুরের মতিলাল গুপ্ত রোড এবং পরে ধাওয়ান কলোনিতে যান স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীরা। এই কলোনিতেই বাড়ি ডব্লুর। হাতের সামনে তাঁকে পেয়ে ভ্যানেও তোলে পুলিশ। এর পরেই এলাকার বেশ কিছু মহিলা ডব্লুকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরেন। শুরু হয় তুমুল বিতণ্ডা। দলে কোনও মহিলা পুলিশ না থাকায় ‘নিধিরাম’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা। ক্ষুব্ধ মহিলারা পুলিশকে ধাক্কাধাক্কি, মারধর, শুরু করে দেয় বলে অভিযোগ। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ভ্যান থেকে নেমে অভিযুক্ত ডব্লু পুলিশের চোখের সামনে গিয়েই হেঁটে হেঁটে উধাও হয়ে গেলেও তাঁকে আর বাধা দেওয়ার সাহস দেখাননি কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। যদিও এ দিন বিকেলে এই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
যদিও কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার ডিসি রশিদমুনির খান পুলিশের মার খাওয়ার খবর অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “এক জনকে গ্রেফতার করতে গেলে এলাকার মহিলারা বাধা দিলে ধস্তাধস্তি বাধে। এই ঘটনায় কোনও পুলিশকর্মী জখম হননি। ধস্তাধস্তির সময় মহিলারা ডব্লুকে ছিনিয়ে নেন। পলাতক ডব্লুর গতিবিধির উপরে আমরা নজর রাখছি। খুব শীঘ্রই তাঁকে ধরা হবে।” পুলিশ এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে আঘাত, সরকারি কাজে বাধাদান এবং সংঘর্ষ বাধানোর অভিযোগে মামলা করেছে। দু’টি ধারাই জামিন অযোগ্য। বৃহস্পতিবার দিনভর ডব্লু-সহ অন্য অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকারই একটি পরিত্যক্ত জায়গায় বুধবার রাতে মদ খাওয়া নিয়ে ডব্লু সিংহ এবং পুটুর অনুগামীদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ প্রথমে ঘটনাস্থল এবং পরে ডব্লুর বাড়িতে যায়। অভিযোগ, প্রথমে ডব্লুর স্ত্রী এবং তাঁর ছেলেরা পুলিশকে বাধা দেয়। এর পরে আরও দশ-পনেরো জন মহিলা পুলিশকে ঘিরে ধরে ধাক্কাধাক্কি এবং মারধর শুরু করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় একটি প্রস্তাবিত বেসরকারি আবাসনে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের বরাত নিয়ে পুটু আর ডব্লুর মধ্যে নতুন করে বিরোধ শুরু হয়েছে। তাঁরা দু’জনেই তৃণমূলের সমর্থক বলে বাসিন্দারা জানান। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মদতেই ডব্লু এবং পুটুর বাড়বাড়ন্ত। যদিও ১২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের সোমা চক্রবর্তী বলেন, “যে-ই অন্যায় করুক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়াতেই কালীঘাট রোডে মার খেতে হয় দুই পুলিশকর্মীকে। ভেঙে দেওয়া হয় পুলিশের মোবাইলও। এক মহিলা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ায় মাঝরাতে মত্ত অবস্থায় এক মহিলা-সহ তিন জন পুলিশকর্মীদের মারধর করেছিলেন। সম্প্রতি আলিপুর থানা ভাঙচুরের ঘটনাতেও দেখা গিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে কর্তব্যরত পুলিশ নিজেকে বাঁচাতে ফাইল দিয়ে মাথা বাঁচাচ্ছেন।
এ ছাড়াও গত পাঁচ মাসে বন্ডেল রোড, গিরিশ পার্ক, পার্ক স্ট্রিট, বড়বাজার, তিলজলা, বেহালা, সন্তোষপুর, কসবা, গড়ফা, বারাসত-সহ বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশকে আক্রান্ত হতে হয়েছে সাধারণের হাতে। গত অগস্ট মাসেও হরিদেবপুরে পুলিশ আক্রান্ত হয়েছিল সাধারণের হাতে। তারও আগে পারিবারিক এক বিবাদ মেটাতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল হরিদেবপুর থানার এক হোমগার্ডের। বুধবার রাতে পুলিশ মেরে এক অভিযুক্তকে কার্যত ছিনতাই করে নেওয়ার ঘটনায় বিস্মিত পুলিশেরই একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, এই ভাবে চলতে থাকলে পুলিশের মর্যাদা বলে কিছু থাকবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy