Advertisement
E-Paper

পদে না থাকলে জিভ টেনে ছিঁড়ে নিতেন, হুঁশিয়ারি মমতার

বেলা আড়াইটে। শনিবারের বারবেলা। সদ্য গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র যখন সিবিআই কব্জায় আলিপুর আদালতের পথে, তখন ময়দানে প্রতিবাদ মঞ্চ কাঁপিয়ে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:০৭
ময়দানে গোষ্ঠ পালের মুর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ মঞ্চে মমতা। ছবি: সুদীপ আচার্য।

ময়দানে গোষ্ঠ পালের মুর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ মঞ্চে মমতা। ছবি: সুদীপ আচার্য।

বেলা আড়াইটে। শনিবারের বারবেলা। সদ্য গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র যখন সিবিআই কব্জায় আলিপুর আদালতের পথে, তখন ময়দানে প্রতিবাদ মঞ্চ কাঁপিয়ে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

মদনের গ্রেফতারি নিয়ে আদালত চত্বরে যখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তৃণমূল, তখন মুখ্যমন্ত্রী ওই মঞ্চ থেকে বলছেন, “মদন চোর, এটা আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই। যদি বলেন, মদন পুজো কমিটিতে গিয়েছে, আমি বিশ্বাস করব। যদি বলেন, মদন কোনও খেলার মাঠে গিয়েছে, আমি বিশ্বাস করব। যদি বলেন, কোনও খেলোয়াড়ের স্পনসরশিপ নিয়ে মদন মাথা ঘামিয়েছে, আমি বিশ্বাস করব। কিন্তু, মদন সারদার টাকায় বৌ-বাচ্চাদের খাওয়াবে, আমি বিশ্বাস করি না।”

মদনের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি শনিবার মমতা তুলোধোনা করেছেন বিজেপিকে।

শুরুতেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, খেলাধুলোর সমর্থক হিসেবেই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু, খেলাধুলো কী ভাবে বিপন্ন সেই ব্যাখ্যায় খুব একটা না গিয়ে বারে বারেই আক্রমণ শানিয়েছেন কেন্দ্রীয় শাসক দলের বিরুদ্ধে। ‘হরিদাস’, ‘ক্রীতদাস’, ‘দলদাস’ এ সব শব্দে বিঁধেছেন বিজেপি নেতৃত্বকে। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী পদে না থাকলে ‘টেনে জিভ ছিঁড়ে’ দিতেন বলেও শনিবার হুমকি দেন মমতা। পরের সংযোজন, যে হেতু তিনি একটা পদে আছেন, তাই কিছু বলছেন না। তাঁর কথায়: “বেশি বাড় বেড়ো না। ঝড়ে পড়ে যাবে।”

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের জেরে রাজ্যের দু’টি ফুটবল ক্লাবের অ্যাকাউন্ট আপাতত বন্ধ। একই তদন্তে নেমে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নীতু এবং মোহনবাগান কর্তা তথা তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এর মধ্যেই সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার সিবিআই গ্রেফতার করেছে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রকে। মমতার ইঙ্গিত, এই ঘটনাক্রমে ‘প্রমাণিত’ রাজ্যের ক্রীড়াজগত্‌ কী ভাবে ভেঙেচুরে, দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া হচ্ছে! এ দিন গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে তৃণমূল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতাতেও একই অভিযোগ উঠে আসে। এর প্রতিবাদে গোটা রাজ্যের সমস্ত ক্লাবকে রাস্তায় নামার নির্দেশও দেন তিনি। কিন্তু বিরোধী শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, প্রতারণার দায়ে কয়েক জনকে গ্রেফতার করলে কী ভাবে প্রমাণিত হয় যে, গোটা ক্রীড়াজগত্‌ আক্রান্ত?

এ দিনও মমতা সারদা এবং সিবিআই, গোটা ঘটনাক্রমকে রাজনৈতিক চক্রান্ত হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন। সারদার পাল্টা হিসেবে তিনি ফের সহারা তত্ত্বকেই আঁকড়েছেন। এমনকী, সহারার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি মোবাইলের স্ক্রিনে সভায় হাজির সবাইকে মঞ্চ থেকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সেই ছবি নিয়ে ১০ হাজার পোস্টার ছাপিয়ে তা কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেন তৃণমূল নেত্রী।

বিরোধীরা ‘বাম্বু’ দিচ্ছে বলে এ দিনও অভিযোগ করেন মমতা। তিনি জানান, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন লড়ছে, তাদের কিছু হচ্ছে না। অথচ, তৃণমূলের মতো যারা কষ্ট করে নির্বাচনে লড়াই চালায়, তাদের পিছনে ‘বাম্বু’ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোরের এক কর্মিসভায় তিনি প্রকাশ্যে ‘শালা’ শব্দটি উচ্চারণ করেন। পরে যদিও তিনি শব্দটি প্রত্যাহার করে নেন। অথচ, এ দিন ওই শব্দটিকে তিনি ‘কথামৃত’র ভাষা বলে দাবি করেন।

চিট ফান্ড মানেই বেআইনি নয়। চিট ফান্ডের নাম করে যখন মানুষকে ‘চিট’ করা হয়, সেটা বেআইনি। এ দিন মমতা এই ব্যাখ্যাই শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, “সহারাকে চুরি করতে শিখিয়েছ! আর, যে তার টাকায় খেলেছে, তার দোষ?” মমতা কেন্দ্রীয় সরকারকে এ দিন ‘ন্যাকাচণ্ডী’ও বলেন। এমনকী, সিবিআই-এর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি জানান, খোদ সুপ্রিম কোর্টই এই সংস্থাকে খাঁচার তোতা পাখি হিসেবে অভিহিত করেছিল। এর পরেই তাঁর সংযোজন, “যখন রাজ্যে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম হচ্ছিল, তখন কি মায়ের দুধ খাচ্ছিল! তাপসী মালিককে যে খুন করল, সে তোমার সম্পদ!” তবে, বিরোধীদের তিনি ধিক্কার জানাতে চান না বলে এ দিন জানান মমতা। তাঁর কথায়, “ওই শব্দটিরও একটা ভার আছে।”

মদনের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে মমতা পরিবহণমন্ত্রীর ছেলেদের কথা তুলে বলেন, “ওরা জানিয়েছে, মদন ওদের বলেছিল, জেরা তেমন একটা কিছুই হচ্ছে না। কোন কলেজে পড়েছি, সেই সব আর কী। ১০ মিনিটের মধ্যেই ও বলেছিল বাড়ি ফিরে আসবে। কিন্তু তার পরেই দিল্লি থেকে একটা ফোন আসে। এর পরেই ওকে গ্রেফতার করা হয়।” মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “মামদোবাজি! হাতের মোয়া!” তিনি জানান, রাজ্যসভায় যাতে তৃণমূল কোনও ভোট না দিতে পারে, তাই তাদের দুই সাংসদকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে। এর পরেই তিনি বলেন, “যাকে ইচ্ছে গ্রেফতার করবে। দু’দিন থাকবে, চলে আসবে। ঘরের ভাত খাচ্ছিল, জেলের ভাত খাবে। কী করবে!”

mamata rally madan mitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy