বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পিছনে আল-কায়দার মতো কোনও জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। পাশাপাশি, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। গত বৃহস্পতিবার অষ্টমীর দিন দুপুরে ওই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দু’জনের। গ্রেফতার করা হয় দুই মহিলাকে।
কী হয়েছিল সে দিন?
ঘড়িতে তখন বেলা ১২টা। হঠাত্ই বিস্ফোরণ ঘটে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি কী ঘটেছে তা জানতে কৌতূহলী মানুষ বিস্ফোরণস্থলের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখেন চার দিকে তখন ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। এলাকার মধ্যে এ রকম বিস্ফোরণ হওয়ায় প্রথমে তাঁদের মনে হয়েছিল গ্যাস সিলিন্ডার ফেটেছে। সঙ্গে সঙ্গে খবর পৌঁছয় পুলিশের কাছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে প্রাথমিক ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথাই ভেবেছিল। কিন্তু বাড়ির ভিতরে ঢুকে তাঁদের চক্ষু চড়ক গাছ। তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি এত বিস্ফোরক ও বোমা উদ্ধার হবে ওই বাড়ি থেকে!
ওই দিন বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন শামিম ওরফে শাকিল আহমেদ, স্বপন ওরফে সুভান মণ্ডল এবং আব্দুল হাকিম নামে তিন ব্যক্তি। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথেই মারা যান শাকিল। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় স্বপন মণ্ডলের। আব্দুল হাকিম গুরুতর অবস্থায় এখন চিকিত্সাধীন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘরের ভিতর থেকে প্রচুর বিস্ফোরক, সকেট বোমা এবং বেশ কয়েকটি জেহাদি সংক্রান্ত বই পাওয়া গিয়েছে। ওই দিনই আটক করা হয় দুই মহিলাকে। রবিবার তাদের বর্ধমান মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ন’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
খোদ বর্ধমান শহরের বুকে এ রকম বিস্ফোরণে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তার উপর এত বিস্ফোরক কেন মজুত করা হয়েছিল সেটা তাদের উদ্বেগের কারণ আরও বাড়িয়েছে। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে ঘরে থাকা আলমারি সপ্লিন্টারে ফুটো হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে, বিস্ফোরকগুলি অ্যামোমিয়াম নাইট্রেট জাতীয়। এই ধরণের বিস্ফোরক সাধারণত কোনও নাশকতার কাজে ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ-র একটি দলও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শাকিলের বাড়ি নদিয়ার করিমপুরের বারবাজপুরে। স্বপনের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে এবং আব্দুলের বাড়ি বীরভূমের মহম্মদবাজারে। গত তিন মাস আগে ওই এলাকার একটি বাড়ি ভাড়া নেন শাকিল, স্বপন ও আব্দুল। তাঁদের সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকতেন শাকিলের স্ত্রী গুলশনা বিবি ওরফে রাজিয়া বিবি এবং হাকিমের স্ত্রী আমিনা বিবি।
জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা রবিবার জানিয়েছেন, নিয়মিত ভাবে বোমা তৈরি করে সেগুলো সরবরাহ করত ওই তিন ব্যক্তি। বাংলাদেশের কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগেরও একটা অনুমান করা হচ্ছে। জখম আব্দুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্ফোরণের মূল পান্ডার একটি স্কেচও তৈরি করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy