পেশোয়ারের হামলার পরে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে শুরু করল পাক সরকার। তুলে নেওয়া হল সন্ত্রাসের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ। ওয়াজিরিস্তানে চলল বিমান হানা। এই লড়াইয়ে আফগানিস্তানের সাহায্য পেতে কাবুলে গিয়েছেন পাক-সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ। জানা গিয়েছে, পেশোয়ার হামলার মূল চক্রী তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি) নেতা উমর নারাই আফগানিস্তানেই আছে। এর মধ্যে কুলাচিতে একটি মেয়েদের কলেজে বিস্ফোরণের সংবাদ পাওয়া গিয়েছে।
পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জানিয়েছেন, এত দিন সন্ত্রাসবাদের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়া যেত না। ২০০৮ থেকে এর উপরে স্থগিতাদেশ ছিল। এ দিন প্রধানমন্ত্রী শরিফ তা তুলে নেন। এর ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর থেকে বাণিজ্য ক্ষেত্রে পাকিস্তান যে সব ছাড় পেত তা আর পাওয়া যাবে না। পেশোয়ারের ঘটনার পরই পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছিল, তালিবানদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান বন্ধ করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সেই বার্তাই এ দিন ফের এক বার শুনিয়েছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। এ দিন এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই পিছু হঠবে না সেনা। ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযান চলবেই। আসিফ এ দিন দাবি করেন, শুধু উপমহাদেশের নয়, বিশ্ব সন্ত্রাসের আঁতুড় ওয়াজিরিস্তান।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী যখন এই দাবি করছিলেন তখন ওয়াজিরিস্তানে পাক-বায়ুসেনা অভিযান চালাচ্ছিল। হামলায় কয়েক জন জঙ্গির মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই আক্রমণ পূর্ব-পরিকল্পিত না পেশোয়ারের স্কুলে হামলার ফলশ্রুতি তা এখনও স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি অভিযান চালাচ্ছে মার্কিন ড্রোনও। পেশোয়ার হামলার দিনই পূর্ব আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় ১১ জন জঙ্গি মারা গিয়েছে। এর মধ্যে চার জন টিটিপি-র জঙ্গি। জঙ্গিরা একটি ট্রাকে করে যাওয়ার সময়ে এই হামলা হয়। অন্য দিকে, নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই সন্ত্রাসের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ তুলে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থগিতাদেশের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যের সময়ে নানা ছাড় পায় পাকিস্তান। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত কোনও দেশেই মৃত্যুদণ্ড নেই। কিন্তু বাণিজ্য লবির চাপে তিনি পিছিয়ে আসেন। তবে তালিবানদের সামনে কড়া হতে শরিফ এই পথ বেছে নিলেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অপ্রত্যাশিত ভাবে তেহরিক-ই-তালিবানের হামলার নিন্দা করেছে আফগানিস্তানের তালিবানরা। আফগান তালিবান সংগঠন, ‘ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান’-এর মুখপাত্র শিশু ও নিরপরাধদের হত্যার তীব্র নিন্দা করেছেন। স্বজনহারাদের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছে তারা। কিন্তু আফগানিস্তানে বহু নিরাপরাধের হত্যার জন্য এই সংগঠনই দায়ী। দু’দেশের তালিবানরাই মোল্লা ওমরকে তাদের নেতা বলে মানে। এ দিনই দক্ষিণ আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশের একটি ব্যাঙ্কে তালিবানি হামলায় ১০ জনের প্রাণ গিয়েছে। ভাল, খারাপ তালিবান বলে কিছু হয় না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। সব তালিবানের বিরুদ্ধেই লড়াই চলবে বলে তিনি জানান। তাই তালিবান দমন করতে আফগানদের সাহায্যে চাইতে কাবুলে গিয়েছেন পাক-সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ। সঙ্গে গিয়েছেন পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ডিজি লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল রিজওয়ান আখতার। পাক সেনাপ্রধান আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং আফগানিস্তানে ন্যাটোর সেনাপ্রধান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আফগান সেনার সঙ্গে যৌথ ভাবে তালিবান দমন অভিযান চালানো যায় কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি, পেশোয়ার হামলার মূলচক্রী উমর নারাই আফগানিস্তান থেকে নানা নির্দেশ পাঠাচ্ছে। পাক-প্রশাসনের হাতে তেমন বেশ কিছু তথ্য রয়েছে। নারাইকে খুঁজতে সেই তথ্য আফগান সেনা, ন্যাটো সেনার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হবে। পাশাপাশি, রাহিল শরিফ তেহরিক-ই-তালিবানের প্রধান মোল্লা ফজলুল্লাকে বিচারের জন্য পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছেন।
পেশোয়ার হামলা নিয়ে এ দিন পেশোয়ারের গভর্নর-এর ভবনে এক সর্বদল বৈঠকের ডাকেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy