জিএসএলভির সফল যাত্রা।
লাল গ্রহে সফল অভিযানের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে মহাকাশ গবেষণায় ইসরো আগেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ বার মহাকাশে তাদের প্রথম মানব অভিযানকে সফল করার দিকে বড়সড় পদক্ষেপ করল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে সফল উৎক্ষেপণ জিএসএলভি মার্ক-৩-এর। অত্যাধুনিক এই রকেটটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে সবচেয়ে ভারীও বটে।
মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য উৎক্ষেপণ হলেও জিএসএলভির গুরুত্ব অন্য জায়গায়। এর মাধ্যমে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রাথমিক কাজটিও সেরে রাখল ইসরো। রকেটটির মধ্যে ছিল ক্রু মডিউল অ্যাটমসফিয়ারিক রি-এন্ট্রি এক্সপেরিমেন্ট (কেয়ার)। বিজ্ঞানীদের যাবতীয় নজর ছিল এই কেয়ারের দিকেই। কাপ কেকের আকারের যন্ত্রটির ওজন প্রায় তিন টন। প্রায় ন’ফুট লম্বা এই ‘কেক’টিকে পরিমণ্ডলের বাইরে নিয়ে গিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ রক্ষায় পুরোপুরি সফল ইসরো। পৃথিবীতে ফেরার সময়ে বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে যাতে রকেটের কোনও ক্ষতি না হয় তার জন্য নেওয়া হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থা। অ্যালুমিনিয়ামরে সঙ্কর ধাতুর সঙ্গে রকেটের বাইরে ব্যবহার করা হয়েছিল বিশেষ তাপরোধী কবচ। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২৬ কিলোমিটার উপরে ওঠার পর ফের নামতে শুরু করে ক্যাপসুলটি। এসে পড়ে বঙ্গোপসাগরে পূর্ব নির্ধারিত জায়গায়। পরে তা উদ্ধার করে ইসরোকে ফিরিয়ে দেবে উপকূলরক্ষী বাহিনী। নিরাপদে নামার জন্য এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল বিশালাকায় এক প্যারাশুট। প্রায় ১০২ ফুট ব্যাসের এই প্যারাশুটটি ভারতে তৈরি বৃহত্তম। ইসরোর বিশেষ অনুরোধে এটি বানায় ডিআরডিও।
ইসরো জানিয়েছে, কেয়ার মডেলে এক সঙ্গে দুই থেকে তিন জন মহাকাশচারী থাকতে পারে। ১৬শো ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ রোধে সক্ষম এই ক্যাপসুল।
উৎক্ষেপণের প্রতিক্ষায়।
সফল এই উৎক্ষেপণের পর উল্লসিত ইসরো চেয়ারম্যান কে রাধাকৃষ্ণনবলেন, “মহাকাশ গবেষণায় আজ এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা চার টনের অতিকায় কৃত্রিম উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় এ এক বিশাল পদক্ষেপ। দশ বছরের প্রচেষ্টার সুফল পেলাম আজ।” এ দিনের সফল অভিযানে ইসরোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। টুইটারে তিনি জানান, “এই সাফল্য ইসরোর বিজ্ঞানীদের মেধা ও পরিশ্রমের ফল। ইসরোর সব বিজ্ঞানীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।” মহাকাশে মানুষ পাঠানোর বিষয়ে এখনও ইসরোকে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি ভারত সরকার। এ দিনের অভিযানের পর সেই অনুমতিও মিলবে বলে আশা করছে ইসরো।
মঙ্গলে পা রেখে বিশ্বের কাছে বার্তা দিয়েছিল যে ‘যুবক’, জিএসএলভির মাধ্যমে তারই এ বার পরিণত হয়ে ওঠার পালা।
ছবি: এএফপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy