গত শুক্রবার ডাকাতির হুমকি চিঠিটা প্রথম পেয়েছিলেন মালদহের ইয়াসিন বিবি। তারপর একে একে ইংরেজবাজারের বাধাগছ এলাকার ছ’টি অবস্থাপন্ন বাড়ি থেকে ডাকাতির হুমকি চিঠি পাওয়া যায়। পুলিশ প্রশাসন থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যেকেরই রীতিমতো ঘুম ছুটে যায়। এই ঘটনার পর শুক্রবার রাতেই পুলিশ সন্দেহজনক তিন যুবককে গ্রেফতার করলেও পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে প্রথম থেকেই বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। শনিবার রাতে মালদহের মানিকচকের দামোদরপুরে বোমাবাজির ঘটনার পর তা বিক্ষোভের আকার ধারণ করে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন বাসিন্দারা। রবিবার সকাল থেকেই মালদহ-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করেন বাসিন্দারা। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। বিক্ষোভকারীদের আর্জি জানানোর পরেও অবরোধ না উঠলে তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করা হয় বলে অভিযোগ।
কী ঘটেছিল?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পাশের গ্রাম বাধাগছের ৬টি বাড়িতে ডাকাতির হুমকি চিঠি আসায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল মানিকচকের দামোদরপুর গ্রামেও। দামোদরপুরের বাসিন্দারা রাত পাহারাও শুরু করেছিলেন। শনিবার রাত ১২টা নাগাদ ভুটভুটি করে ইংরেজবাজারের রথবাড়ি থেকে সবজি বিক্রি করে আতাউর সহ তিন জন বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় ইংরেজবাজার থানার চন্ডীপুর গ্রামের কাছে দ্রুত গতিতে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের থেকে দুষ্কৃতীরা বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, বোমার আঘাতে আতাউর সবজি(৪৫) নামে এক বাসিন্দার মৃ্ত্যু হয়। জখম হন এক ছাত্র সহ চার জন। ওই ঘটনার পরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ইংরেজবাজারের চন্ডীপুর ও মানিকচকের দামোদরপুর পাশাপাশি এই দুই গ্রামে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, হুমকি চিঠি পাওয়ার পরেও এলাকায় পুলিশের যথেষ্ট টহলদারি ছিল না। কারা এই হুমকি চিঠি দিচ্ছিল তা জানতেও কোনও রকম তদন্ত চালায়নি পুলিশ। এই অভিযোগে তাঁরা রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের উপরে লাঠি চার্জ করায় দুপুর দু’টো নাগাদ অবরোধ উঠে যায়।
যদিও লাঠি চালানোর ঘটনা মানতে চাননি মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এ দিনের ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তুলে দেওয়া হয়েছে। লাঠি চালানোর কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
গত শুক্রবার ডাকাতদের হুমকির চিঠি আসে শোভানগর গ্রামে। ওই ঘটনা চাউর হয়ে যেতেই মিল্কি এবং মানিকচকের চৌকিমিরদাঁদপুর, ধরমপুর-সহ লাগোয়া গ্রামগুলিতে ডাকাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই গ্রামগুলিতেও শুরু হয় রাত পাহারা। রাত পাহারা চলাকালীন শুক্রবার রাতে গ্রামবাসীরা সন্দেহভাজন তিনজনকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে তাদের বাইক পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ।