আইনরক্ষার দায়িত্ব যাঁদের হাতে, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইন ভাঙার অভিযোগ উঠল।
এক যুবককে বিবস্ত্র করে মারধর করে সেই ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আপলোড করার অভিযোগ উঠল চার জন ইএফআর জওয়ানের বিরুদ্ধে। গত ৫ ডিসেম্বর সালুয়ার ঘটনা। অভিযোগকারীর কথায়, “ওই দিন রাতে বাড়ির বাইরে শৌচকর্ম করতে বেরলে সালুয়ার তৃতীয় ব্যাটালিয়নের চার ইএফআর জওয়ান তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। জোর করে তাঁর অপ্রীতিকর ছবিও তোলা হয়।” যদিও প্রথমে পরিবারের কাউকে ওই যুবক ঘটনার কথা জানাননি। পরে সোশ্যাল সাইটে নিজের অপ্রীতিকর ছবি দেখে গত সোমবার বছর তেইশের ওই যুবক আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ওই ঘটনায় পরিবারের লোকেরা সমস্ত ঘটনার কথা জানতে পেরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার রাতে খড়্গপুর গ্রামীণ থানায় ওই যুবক ও তাঁর পরিবারের লোকেরা সুমন রাই ও তিন জন অজ্ঞাতপরিচয় ইএফআর জওয়ানের নামে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার পুলিশ ওই চার জনের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন, মারধর ও সোশ্যাল সাইটে আপত্তিকর ছবি আপলোড করার অপরাধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা রুজু করেছে। ইএফআরের ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের কমান্ডিং অফিসার ফারাক আব্বাস বলেন, “আমাকে খড়্গপুরের এসডিপিও ঘটনার বিষয়ে জানিয়েছেন। আমি তাঁকে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। এ বিষয়ে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
ওই যুবকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সালুয়ায় বিধবা মা ও দিদিকে নিয়ে থাকেন ওই যুবক। পাশের ইএফআর কোয়ার্টারেই তাঁর দাদা ও অপর এক দিদি থাকেন। ওই যুবকের দাদা ও জামাইবাবুও বর্তমানে ইএফআর জওয়ান হিসেবে কর্মরত। দাদা কর্মসূত্রে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় থাকেন। জামাইবাবুও কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকেন। সালুয়ার কোর্য়াটারে একাই থাকেন বৌদি। অপর একটি কোয়ার্টারে থাকেন ওই যুবকের দিদি-জামাইবাবু। ওই যুবকের অভিযোগ, “গত ৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা নাগাদ শৌচকর্ম করতে বাড়ির বাইরে যাই। সেই সময় চার ইএফআর জওয়ান আমার পরিচয় জানতে চায়। নিজের পরিচয় দেওয়ার পরই তাঁরা আমাকে মারধর শুরু করে। প্রতিবাদ করলে আমাকে ইএফআর-এর তৃতীয় ব্যাটালিয়নের ব্যারাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, “ব্যারাকে আমাকে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে মারধর করা হয়। মহিলাদের অন্তর্বাস পরিয়ে চামড়ুশাই জঙ্গলে আমায় ফেলে রেখে তাঁরা পালায়। জোর করে ওই অবস্থায় তাঁরা আমার ছবিও তোলে। ওই রাতে কোনওমতে বেঁচে বাড়ি ফিরি।”
বাড়ির কেউ বিষয়টি টের পায়নি? উত্তরে অভিযোগকারী বলেন, “গভীর রাতে মা ও দিদি ঘুমিয়ে থাকায় আমি কাউকে কিছু বলিনি। গত ১৮ ডিসেম্বর এক বন্ধু সোশ্যাল সাইটে আমার অপ্রীতিকর ছবি প্রকাশিত হওয়ার কথা জানায়। সেখান থেকেই আমি সুমন রাই নামে এক জওয়ানকে চিনতে পারি। যদিও বাকি জওয়ানদের পরিচয় জানিনা। গত সোমবার আমি নিজেও বন্ধুর মোবাইলে ওই ছবি দেখি।” গত সোমবার বিকেলে দিদি বাপের বাড়িতে আসে। এরপর ওই যুবকের দিদি মা ও বোনকে নিয়ে কিছু ক্ষণ পরে নিজের কোয়ার্টারে ফিরে যাচ্ছিল। ওই যুবকের দিদির কথায়, “প্রথমে ওই ঘটনার কথা কিছুই জানতাম না। ওই দিন রাতে কোয়ার্টারে ফিরে যাওয়ার সময় ভাই হাতে একটি চিঠি দিয়ে বাড়িতে গিয়ে পড়তে বলে। বাড়ি গিয়ে ওই চিঠি পড়ে সমস্ত ঘটনার কথা জানতে পেরে ফের বাড়িতে ছুটে আসি। বাড়ি গিয়ে দেখি, ভাই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে।” তিনি বলেন, “আর কিছুক্ষণ দেরি হলে ভাইকে বাঁচাতে পারতাম না। পরে পরিবারের সকলে মিলে আলোচনা করে পুলিশ ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিই।”
উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বরও ডেবরায় এক নাবালিকা ছাত্রীকে ইভটিজিং করার অভিযোগ ওঠে সিআরপির এক সাব ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে। ঘটনায় গ্রেফতারও হন ওই সাব ইন্সপেক্টর। গত ৯ নভেম্বর খড়্গপুরের মাদপুরে এক কিশোরীকে বাড়িতে ঢুকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে এক ভিলেজ পুলিশের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হন ওই ভিলেজ পুলিশও। এরপরে ফের এ ধরনের ঘটনা ঘটায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। অভিযোগকারীর মায়ের কথায়, “অবর্ণনীয় ঘটনা। ওই ঘটনার কথা মনে পড়লেই আমার অসুস্থ লাগছে।” এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি তিনি। ফোনে ওই যুবকের দাদারও বক্তব্য, “এই ধরনের ঘটনা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। এটা ভেবে খারাপ লাগছে, আমার পেশার কোনও কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy