Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শহরের দু’প্রান্তে ফের অটোর ‘দাদাগিরি’, আক্রান্ত এ বার নেতাও

এত দিন নিরীহ যাত্রীদের হেনস্থা করার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে অটোচালকদের বিরুদ্ধে। এ বার তাদের ‘দাদাগিরি’র শিকার হতে হল খোদ শাসক দলের এক নেতাকেই। নিয়ম ভেঙে বেশি যাত্রী তোলা এবং হেডলাইট নিভিয়ে অটো চালানোর প্রতিবাদ করায় কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি সৃজন বসুকে হেনস্থার অভিযোগ উঠল। সোমবার রাতে উত্তর কলকাতার সিঁথিতে এই ঘটনা ঘটে। অন্য দিকে, মঙ্গলবার সকালে টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে খুচরো নিয়ে বচসার জেরে এক স্কুলছাত্রীকে গালিগালাজ করেন এক অটোচালক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৯:৪৮
Share: Save:

এত দিন নিরীহ যাত্রীদের হেনস্থা করার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে অটোচালকদের বিরুদ্ধে। এ বার তাদের ‘দাদাগিরি’র শিকার হতে হল খোদ শাসক দলের এক নেতাকেই। নিয়ম ভেঙে বেশি যাত্রী তোলা এবং হেডলাইট নিভিয়ে অটো চালানোর প্রতিবাদ করায় কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি সৃজন বসুকে হেনস্থার অভিযোগ উঠল। সোমবার রাতে উত্তর কলকাতার সিঁথিতে এই ঘটনা ঘটে। অন্য দিকে, মঙ্গলবার সকালে টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে খুচরো নিয়ে বচসার জেরে এক স্কুলছাত্রীকে গালিগালাজ করেন এক অটোচালক। তার প্রতিবাদ করায় ওই অটোচালকের নিগ্রহের শিকার হলেন এক মহিলা।

দমদম এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই অটোরাজ চলছে। অভিযোগ, বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই প্রচুর অটো চলে এখানকার বেশ কয়েকটি রুটে। এর উপর নিয়ম ভেঙে বেশি যাত্রী তোলা তো রয়েইছে। কখনও হেডলাইট নিভিয়েও অটো চালান এক শ্রেণির বেপরোয়া চালক। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই এ সবের প্রতিবাদ করে আসছেন সৃজনবাবু। স্থানীয় নেতা হওয়ার সুবাদে তাঁর প্রতিবাদে কিছুটা সুফল মেলে বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু সোমবার ফল হল উল্টো।

কী হয়েছিল ওই রাতে?

সৃজনবাবু জানান, সন্ধ্যা তখন সাড়ে ৭টা। দমদম রোড ধরে একটি অটো আসছিল। হেডলাইট নেভানো সেই অটো কাছে আসতেই তিনি দেখেন, তাতে সাত জন যাত্রী তোলা হয়েছে। চালককে তিনি অটো দাঁড় করাতে বলেন। এর পর যাত্রীদের নেমে যেতে বলা হয়। যাত্রীরা নেমে যেতেই তাঁর সঙ্গে ওই অটোচালকের বচসা বাধে। এর পর আরজিকর-৩০এ বাসস্ট্যান্ড রুটের ওই অটোটিকে কাছের তৃণমূল পার্টি অফিসে নিয়ে যেতে বলেন ওই নেতা। তাঁর কথায়, “অটোরাজের প্রতিবাদ দীর্ঘ দিন ধরেই করি। এ দিন আলো নেভানো অটোটিকে দাঁড় করিয়ে দেখি ভিতরে সাত জন যাত্রী ঠেসাঠেসি করে তোলা হয়েছে। পার্টি অফিসে অটোটিকে নিয়ে এসে ট্রাফিক পুলিশকে খবর দিই।” পুলিশ এসে ওই অটোচালককে আইন ভাঙার অপরাধে একটি কেস দেয়। বিষয়টি এর পর সাময়িক ভাবে মিটেও যায়।

কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরে ফের গোলমাল বাধে। সৃজনবাবুর অভিযোগ, ওই অটোচালক কিছু ক্ষণ পর প্রচুর লোকজন নিয়ে পার্টি অফিস চত্বরে আসেন। সৃজনবাবুকে গালিগালাজ করা হয়। এমনকী, প্রতিবাদ করায় তাঁকে চূড়ান্ত হেনস্থাও করা হয় বলে ওই নেতার অভিযোগ। তিনি বলেন, “আমায় হেনস্থা করা হয়। শুধু তাই নয়, পার্টি অফিসের অদূরে রাখা আমার গাড়িতেও ইট ছোড়া হয়।”

কিন্তু হামলাকারীদের পরিচয় কী?

সৃজনবাবু বলেন, “আইএনটিটিইউসি-র নাম ভাঁড়িয়ে একদল অটোচালক এই কাজ করেছেন।” তবে, হেনস্থাকারীদের মধ্যে যে ওই সংগঠনের বেশ কিছু কর্মী ছিলেন তা মানছেন দলেরই একাংশ। এলাকার বাসিন্দারা যাঁকে ওই এলাকায় অটো ইউনিয়ন সামলাতে দেখেন, স্থানীয় সেই তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেন বলেন, “আমি কোনও ইউনিয়নের সঙ্গেই জড়িত নই। তবে সৃজনবাবুর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। যে ইউনিয়নের সদস্যেরাই এটা করুন না কেন, কোনও ভাবেই তা বরদাস্ত করা যাবে না। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” সিঁথি থানার পুলিশ জানায়, লিখিত অভিযোগ মিলেছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অন্য দিকে, এ দিন সকালে রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার টালিগঞ্জ মোড়ে খুচরো নিয়ে বচসার জেরে এক মহিলার হাত মুচড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এক অটোচালকের বিরুদ্ধে। পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ওই অটোচালকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা রুজু করেছে। তাঁর খোঁজে তল্লাশিও শুরু হয়েছে।

হরিদেবপুরের বাসিন্দা ওই অভিযোগকারিণী জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে থেকে রানিকুঠি যাওয়ার অটোতে ওঠেন তিনি। এক অটোচালক রানিকুঠি যাবেন না বলায়, তিনি পাশের অটোয় গিয়ে ওঠেন। আগে থেকে সেই অটোয় এক স্কুলছাত্রী এবং এক জন বয়স্ক যাত্রী ছিলেন। মহিলার অভিযোগ, অটোতে ওঠার পরেই চালক ভাড়া দাবি করেন। ৬ টাকা খুচরো দিলে তবেই তিনি যাবেন বলে জানান ওই চালক। কথা মতো ভাড়া মিটিয়ে দেন ওই মহিলা। অন্য দুই যাত্রী যদিও জানান, তাঁদের কাছে খুচরো নেই। দশ টাকার নোট দিতে যান ওই ছাত্রী। কিন্তু টাকা না নিয়ে তাঁদের অটো থেকে নেমে যেতে বলেন ওই অটোচালক। বয়স্ক যাত্রীটি নেমে গেলেও ছাত্রীটি নামেননি। অভিযোগ, এর পর ওই ছাত্রীকে গালিগালাজ শুরু করেন চালক। তারই প্রতিবাদ করেন ওই মহিলা।

ওই মহিলা বলেন, “এক স্কুলছাত্রীকে এ ভাবে গালিগালাজ করছেন দেখে তার প্রতিবাদ করি। এর পর ওই ছাত্রীর ভাড়াও আমি মিটিয়ে দিই।” এ নিয়ে অটোচালকের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। তিনি বলেন, “আমি ওই অটোচালককে বলি, এ ভাবে গালিগালাজ করা ঠিক নয়। উনি না থেমে একই ভাবে গালিগালাজ করতে থাকেন। এর পর হঠাত্‌ই আমার হাতটা টেনে ধরে মুচড়ে দেন তিনি।”

ঘটনার পরে ওই মহিলা চিত্‌কার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ। কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশকে বিষয়টি জানাতে গেলে ওই চালক অটো নিয়ে পালিয়ে যায়। এর পর রিজেন্ট পার্ক থানায় অভিযোগ জানানো হয়। পুলিশ জানায়, ওই চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

auto rash driving misbehave
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE