হাওড়ার বিলাসবহুল এক ক্লাব তথা রিসর্টের সুইমিং পুলে ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’র পার্টিতে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল এক তরুণীর। মৃতের নাম শুভঞ্জিতা বসাক। বছর পঁচিশের ওই তরুণীর বাড়ি বেলেঘাটায়। তবে তিনি বেশ কিছু দিন ধরেই গড়িয়ার শ্রীরামপুর রোডের একটি পরিবারে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে থাকতেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ডোমজুড় থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে গড়পাতে বিলাসবহুল ওই ক্লাবে রবিবার সন্ধ্যায় ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ উপলক্ষে এক পার্টির আয়োজন করা হয়। সেই পার্টিতে বন্ধুদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন শুভঞ্জিতা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিষেক সিংহ, রোহিত ত্রিপাঠী এবং প্রিয়ঙ্কা ভট্টাচার্য। পার্টি চলাকালীন হঠাৎই রিসর্টের কর্মীদের নজরে আসে, শুভঞ্জিতা ক্লাবের সুইমিং পুলের জলে ডুবে যাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা জল থেকে তাঁকে তুলে আনেন। এর পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দুল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে শুভঞ্জিতাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশের কাছে তাঁর বন্ধুরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে পুলের জলে পড়ে গিয়েছিলেন শুভঞ্জিতা। কিন্তু পড়ে যাওয়ার সময় তাঁরা তাঁকে দেখতে পাননি বলে ওই বন্ধুদের দাবি। হাওড়া জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনায় মৃতের বাড়ির লোকেদের ডাকা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ওই তিন বন্ধুকেও।
কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল?
পুলিশ জানিয়েছে, পার্টিতে প্রায় সকলেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। সেই অবস্থায় তাঁরা নেমেছিলেন সুইমিং পুলের জলে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলেই জলে পড়ে যান ওই তরুণী। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ক্লাবে কি নজরদারির অভাব ছিল?
পার্টি উপলক্ষে ক্লাবে ওই রাতে বেশ ভিড় হয়েছিল। তবে নজরদারির কোনও অভাব ছিল না বলে রিসর্ট কর্মীদের দাবি। সেখানকার এক কর্মী বলেন, “ভিড় বেশি হওয়ায় সুইমিং পুলে জলের পরিমাণ কমানো হয়েছিল। যে হেতু পুল চত্বরে কোনও ক্যামেরা লাগানো যায় না, তাই কড়া নজরদারির ব্যবস্থা ছিল। আমাদের এক কর্মীই প্রথম ওই তরুণীকে জলে পড়ে যেতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গেই উদ্ধার করা হয় তাঁকে।”
বছর তিনেক আগে শুভঞ্জিতার বিয়ে হয়েছিল সম্রাট সরেনের সঙ্গে। এ দিন এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। সম্রাটবাবু জানান, রবিবার রাতে প্রিয়ঙ্কা ভট্টাচার্য নামের এক তরুণী তাঁর শ্বশুরবাড়িতে টেলিফোন করে খবর দেন, শুভঞ্জিতার একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের দ্রুত এসএসকেএম হাসপাতালে চলে আসতে বলেন ওই তরুণী। শ্বশুরবাড়ি থেকে এই খবর দেওয়া হয় সম্রাটবাবুকে।
এ দিন সকালে হাওড়ার ওই ক্লাব তথা রিসর্টে এসেছিলেন অভিষেক সিংহ। তাঁর দাবি, হাসপাতালে শুভঞ্জিতাকে নিয়ে গেলেও তিনি ওই তরুণীকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতেন না। বন্ধু তো দূরের কথা, তাঁর নামও জানতেন না তিনি। অভিষেক বলেন, “ঘটনার সময় ক্যাশ কাউন্টারে ছিলাম। আমি আদৌ পুলে নামিনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দৌড়ে যাই। গিয়ে দেখি, অজ্ঞান হওয়া ওই তরুণীর মুখে মুখ লাগিয়ে আপৎকালীন ব্যবস্থা নিচ্ছেন প্রিয়ঙ্কা।” তিনি জানান, অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। হাসপাতালে গিয়ে প্রথম শুভঞ্জিতার নাম শোনেন বলে তাঁর দাবি। তবে প্রিয়ঙ্কাকে তিনি আগে থেকে চিনতেন বলে জানিয়েছেন ওই তরুণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy