Advertisement
০৬ মে ২০২৪

১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে মদন

সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার মদন মিত্রকে চার দিন সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। একই সঙ্গে চার দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুদীপ্ত সেনের আইনজীবী নরেশ ভালোড়িয়াকেও। এঁদের দু’জনকেই ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেছিল সিবিআই। শনিবার সকাল থেকেই বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আলিপুর আদালত চত্বরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। গ্রেফতার মন্ত্রী মদন মিত্রকে আদালতে পেশ করার আগেই আলিপুর আদালত চত্বরকে ছোটখাটো দুর্গে পরিণত করে ফেলেছিল পুলিশ।

পৌঁছলেন মদন। আদালত চত্বর তখন উত্তাল।

পৌঁছলেন মদন। আদালত চত্বর তখন উত্তাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:১০
Share: Save:

সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার মদন মিত্রকে চার দিন সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। একই সঙ্গে চার দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুদীপ্ত সেনের আইনজীবী নরেশ ভালোড়িয়াকেও। এঁদের দু’জনকেই ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেছিল সিবিআই।

শনিবার সকাল থেকেই বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আলিপুর আদালত চত্বরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। গ্রেফতার মন্ত্রী মদন মিত্রকে আদালতে পেশ করার আগেই আলিপুর আদালত চত্বরকে ছোটখাটো দুর্গে পরিণত করে ফেলেছিল পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস থেকে রবার বুলেট নিয়ে তৈরি রয়েছেন শ’তিনেক পুলিশের এক বিশাল বাহিনী। মদন-অনুগামীদের ঠেকাতে রাখা হয়েছিল গার্ডওয়াল। কিন্তু পরিবহণমন্ত্রীর গাড়ি আদালত চত্বরে ঢুকতেই শুরু হয় ব্যাপক হাঙ্গামা। কাতারে কাতারে তৃণমূল সমর্থক এসে জড়ো হন সেখানে। ভেঙে যায় গার্ডওয়াল। গোটা আদালত চত্বরে কার্যত নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রীর উদ্দেশে পুষ্পবৃষ্টি হতে থাকে। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে বিশাল পুলিশ বাহিনী হিমশিম খেয়ে যায়। মদনবাবুকে কোনওক্রমে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।

বস্তুত, এ দিন মদনবাবুর হাজিরার আগেই আদালত কক্ষেও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তৃণমূল সমর্থক এক দল আইনজীবী আদালত কক্ষে ঢুকে সংবাদমাধ্যমকে বের করে দেওয়ার আর্জি জানাতে থাকেন। যদিও শেষমেশ মঞ্জুর হয়নি সেই আবেদন। বক্তব্য পেশের সময়েও সিবিআই আইনজীবীদের প্রবল বাধা দেন তৃণমূলের আইনজীবীরা।


উত্তপ্ত আদালত চত্বরে তছনছ গার্ড রেল।

এ দিন সকালে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের দু’টি গাড়িতে করে আদালেত নিয়ে যাওয়া হয় মদন মিত্র এবং আইনজীবী ভালোড়িয়াকে। আদালত থেকে বেরনোর সময়ে আর এক প্রস্থ ধস্তাধস্তি হয় মদন মিত্রের গাড়িকে ঘিরে। ধাক্কাধাক্কির জেরে ভেঙে যায় মন্ত্রীর গাড়ির লুকিং গ্লাস এবং লালবাতিটি। ভেঙে যায় ভালোড়িয়ার গাড়ির সামনের কাচও।

সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মদনবাবুকে নিয়ে ফিরে আসেন সিবিআই অফিসাররা। সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার সময়ে তিনি বলেন, “যা বলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। আমি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। এর বেশি কিছু বলব না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” সিবিআই সূত্রে খবর, সন্ধ্যায় ফের একদফা জেরা করা হয় মদনবাবু ও ভালোটিয়াকে। রাত সওয়া ৮টা নাগাদ মন্ত্রী সিজিও কমপ্লেক্স থেকে ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানার উদ্দেশে বেরোন। যদিও সকালের মতো দলীয় সমর্থকদের ভিড় এখন একেবারেই ছিল না। বাইরে অপেক্ষায় ছিল সংবাদমাধ্যম। মদনবাবু বলেন, “যাঁরা আমার হয়ে পথে নেমেছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনও ভাষাই নেই।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, অমিত শাহর সভার পরই কি আপনাকে গ্রেফতার করা হল? মদনবাবু বলেন, “ আমি তো জ্যোতিষী নই। সেটা আমি কী করে বলব?” যে সব অভিযোগে আপনাকে গ্রেফতার করা হল সে সম্পর্কে কিছু বলবেন? তাঁর উত্তর: “সেটা বিচারেই প্রমাণ হবে।”


আদালত থেকে বেরনোর সময় পথরোধ তৃণমূল সমর্থকদের।

শুক্রবার সকাল থেকে ঘণ্টা পাঁচেক জেরার পর মদন মিত্রকে গ্রেফতার করে সিবিআই। মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় অবরোধ। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রেল ও রাস্তা অবরোধ করা হয়। মন্ত্রীর গ্রেফতারির প্রতিবাদে এ দিন দুপুরে কলকাতায় গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস। পরে সেখানকার অবস্থান মঞ্চে ফিরে আসে মিছিল। ওই মঞ্চ থেকে ফের এক বার পরিবহণমন্ত্রীর পাশে থাকার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা জানান, এই ধর্না কর্মসূচি প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। তিনি আরও জানান, আগামী বুধবার এ বিষয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হবে। অন্য দিকে, সারদা কাণ্ডে অন্য যে সব প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম সামনে এসেছে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবিতে পথে নামে বাম দলগুলিও। দুপুর ৩টে নাগাদ শুরু হয় তাদের মিছিল। কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান এবং বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল। ফলে মদনের গ্রেফতারির পরের দিন নাকাল সাধারণ মানুষ।

মদনের গ্রেফতারির পরই নবান্নে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পরিবহণমন্ত্রীকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সরকার বা বিধানসভার অধ্যক্ষ কাউকেই সরকারি ভাবে জানায়নি সিবিআই। পরে তা সমর্থন করেন মুখ্যমন্ত্রীও। কিন্তু সে দাবি খারিজ করে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মন্ত্রীর গ্রেফতারির খবর ওই দিন সন্ধ্যায় অধ্যক্ষকে মেল করে জানানো হয়েছে।

ছবি: রণজিত্ নন্দী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra saradha scam cbi sudipto sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE