নিজের তৈরি গাড়ির পাশে শেখ জয়নাল। —নিজস্ব চিত্র।
সুকুমার রায়ের ‘খিচুড়ি’ কবিতার হাঁসজারু বা বকচ্ছপের কথা মনে পড়ে? কল্পনার ভেলায় ভেসে দু’টি প্রাণীর সন্ধি করে কবি ওই অদ্ভুত প্রাণীগুলির সৃষ্টি করেছিলেন। ঠিক সেরকমই এক অদ্ভুত বাহন নির্মাণ করেছেন শেখ জয়নাল।
আচমকা গাড়িটি দেখে মনে হতে পারে একটি হুড খোলা যান। কিন্তু ভাল করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, সেটি আদতে একটি ব্যাটারি চালিত টোটো। তার খলনলচে বদলে তার ‘মেক ওভার’ করেছেন গাড়ির মালিক জয়নাল। এই গাড়ির সাজসজ্জা তিনি আগেই করেছিলেন, গত কয়েকমাস ধরেই সিউড়ির বুকে চলছে এই বিশেষ গাড়ি কিন্তু সম্প্রতি গাড়িটি সকলের নজর কেড়েছে রামনবমীর দিনে।
রামনবমীর সকালে সিউড়িতে তৃণমূল নেতা কর্মীদের আয়োজিত শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শতাব্দী রায়। শোভাযাত্রায় সকলে পায়ে হেঁটে অংশ নিলেও কিছুটা হাঁটার পর জয়নালের ওই গাড়িতে চেপে শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিদায়ী সাংসদ। রামনবমীর মিছিলে শতাব্দী ওই গাড়িতে পরিক্রমার পরে হঠাৎ করেই পরিচিতি বেড়েছে গাড়ি ও তার মালিক শেখ জয়নাল। নানা জায়গা থেকে ডাক আসতেও শুরু করেছে তাঁর। হুড খোলা গাড়িটি এখন রাজনৈতিক প্রচারের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
প্রচণ্ড গরমে পায়ে হেঁটে জনসংযোগে প্রার্থীরা হাঁপিয়ে উঠলেই খোঁজ পড়ছে জয়নালের গাড়ির। ভোটের মরশুমে গাড়ির ভাড়া কিছুটা বেশি, আবার সহজলভ্যও নয়। কিন্তু জয়নালের গাড়ি অল্প টাকার বিনিময়ে মেলে, ডাক পড়লেই হাজির হয় সর্বদা। তবে তাঁর এই শিল্পকর্মের কদর যেখানে থাকবে, শুধু সেখানেই গাড়ি ভাড়া দেন জয়নাল। কড়িধ্যার টোটো ইউনিয়নের সম্পাদক শেখ জয়নালের বাড়ি কড়িধ্যার কানাইপুরে। রামনবমীর মিছিলে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিয়েবাড়ি বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও গাড়ি ভাড়া দিয়েছেন তিনি। আগামী ৩০ এপ্রিল কংগ্রেসের একটি মিছিলেও গাড়িটি ভাড়া দেওয়ার কথা চলছে।
এক সময় একটি গ্রিল কারখানার মালিক জয়নাল বহু কষ্টে টোটোটি কিনেছিলেন। ব্যবসায় ক্ষতির পরে টোটো চালিয়েও খুব একটা লাভ হচ্ছিল না তাঁর। এরই মধ্যে হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক যন্ত্রপাতি দেখভালের কাজ পান তিনি। এরপরই নিজের গ্রিলের কাজের অভিজ্ঞতা ও কল্পনাশক্তিতে ভর করে প্রায় দশ মাসের প্রচেষ্টায় ও দু’ লক্ষ টাকা ব্যয়ের পরে টোটোর ব্যাটারি ও
ইঞ্জিনের উপর নানা গাড়ির বিভিন্ন কল-কবজা যুক্ত করে যানটিকে রূপান্তর করলেন জয়নাল। ৬-৭ কুইন্টাল ওজনের ওই গাড়ি একটানা প্রায় একশো কিলোমিটার পথ চলতে সক্ষম।
জয়নালের কথায়, “এখন ‘জয়নালের গাড়ি’ বলতে সকলে এক ডাকে আমাকে চেনেন। এটাই পাওনা। আমি ব্যবসার জন্য গাড়ি বানাইনি। নতুন কিছু করার জেদেই এই গাড়ি তৈরি করেছি। আগে আমাকে শুধু এলাকার লোক চিনতেন। রামনবমীর পর থেকে পরিচিতি কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। এখন অনেকেই গাড়ি ভাড়া নিতে চাইছেন।” তাঁর সাফ কথা, “গাড়ি তৈরির খরচ তো তুলতে হবে, তা ছাড়া আমার কাজ সকলেই দেখুন, সেটুকুই চাই।আমি রাজনীতি দিয়ে পরিচিত হতে চাই না, আমার গাড়ি দিয়েই আমার পরিচয় হোক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy