ভোট আসে ভোট যায়। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে দিন কাটে লালগোলা থানার ছাইতানি গ্রামের বাসিন্দা তাসলিমা নাসরিনের। বরং ভোট এলেই তিনি ভয় পান। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটের দিনে রাজনৈতিক সংঘর্ষে তাঁর স্বামী রওশন আলির (৪২) মৃত্যু হয়। সে দিনের ঘটনার স্মৃতি আজও তাসলিমার কাছে জীবন্ত।
সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল?
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ৮ জুলাই পরিবারের সঙ্গে লালগোলার ময়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৬ নম্বর ছাইতনি উত্তরপাড়া বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন রওশন। লালগোলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বাম-কংগ্রেস জোট হলেও আক্ষরিক অর্থে ওই পঞ্চায়েতে কোনও জোট হয়নি। ভোটকে কেন্দ্র করে বাম-কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে বচসা শুরু হয়। সেখান থেকে ঘটনা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। ঘটনার মধ্যস্থতা করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হতে গুরুতর জখম হন রওশন। তাঁকে প্রথমে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
গ্রামবাসীদের মতে, রওশন সরাসরি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও এলাকায় সিপিএম-এর সমর্থক বলেই পরিচিতি ছিল তাঁর। শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিল রওশন। রওশন পেশায় ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিক। বছরের বেশির ভাগ সময় রাজ্যের বাইরে থাকতেন। ইদের কিছু দিন আগেই কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। তাসলিমা বলেন, “আমার চোখের সামনে রওশনকে ওরা সবাই মিলে মারতে শুরু করে। আমি বহু কাকুতি-মিনতি করলেও ওরা সেদিন আমার কথা শোনেনি। ইদের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন রওশন। ভোট-পর্ব শেষ করে কাজে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এটা জানতাম না যে, আমার জীবনে ওকে সঙ্গে নিয়ে এটাই আমার শেষ আনন্দের উৎসব ইদ।”
তাঁদের দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ইদের দিনে আল্লার কাছে পরিবারের সকলে মিলে দোয়া করেছেন। তবে ভোটের দিনে রাজনৈতিক সংঘর্ষে রওশনের মৃত্যুর কারণে এবং সন্তানদের যথাযথ লালন-পালনের উদ্দেশে রাজ্য সরকার থেকে তাসলিমাকে একটি সরকারি দফতরে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে সেখানেই কর্মরত রয়েছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)