Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

হোম ম্যাচে অধীর, পাঠান বাইরে, নীরবে নির্মল

ভোটের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রেরই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়ালেন অধীর চৌধুরী। তাঁর অঙ্ক, খাস বহরমপুর যত বেশি ভোট দেবে, তাঁর তত লাভ।

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী এবং ইউসুফ পাঠান।

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী এবং ইউসুফ পাঠান। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ০৭:২৯
Share: Save:

গোরাবাজার ঘাটের কাছে দড়ি পাকানো চেহারার এক বৃদ্ধ কানের কাছে এসে বলে গেলেন, ‘‘ভোটটা আপনাকেই দিয়েছি’ আবার।’’ হরিদাসমাটির এক স্কুলের সামনে ছাতা মাথায় এক প্রৌঢ় হেসে এগিয়ে এসে বললেন, অনেক রোগা হয়ে গিয়েছেন তো! আবার চুঁয়াপুরের বুথ‌ে ঘণ্টাদুয়েক লাইনে অপেক্ষমাণ জনতার মধ্যে রব উঠল, ‘‘দাদা, ভোটটা দিতে পারব তো? দেখুন একটু।’’ বরাভয়ের ভঙ্গিতে হাত তুলে বুথের ভিতরে ঢুকে গেলেন ‘দাদা’।

ভোটের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রেরই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়ালেন অধীর চৌধুরী। তাঁর অঙ্ক, খাস বহরমপুর যত বেশি ভোট দেবে, তাঁর তত লাভ। এই আশাতেই আগাম বলে রেখেছিলেন, ‘‘কোথাও পরমাণু বোমা পড়লেও বহরমপুরের বাইরে যাব না!’’ কঠিন লড়াইয়ে ‘হোম গ্রাউন্ডে’ই বেশি নজর থাকল পাঁচ বারের সাংসদ ও কংগ্রেস প্রার্থীর।

তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ইউসুফ পাঠানকে আবার শহর থেকে ‘অ্যাওয়ে ম্যাচ’ খেলতে পাঠাল তৃণমূল কংগ্রেস! সকালে উঠে বেলডাঙা, বড়ঞা, ভরতপুরের বুথে বুথে অবাক চোখে ভোট দেখে বেড়ালেন প্রাক্তন ক্রিকেটার। পরে বহরমপুরে ফিরে ভোটের শেষ লগ্নে ব্যারাক স্কোয়ারের মাঠে তাঁকে ব্যাট হাতেও পেল কচি-কাঁচারা। তাঁর মুখে শোনা গেল ‘খেলা হবে’! আর তার মাঝে তৃণমূল কংগ্রেসের দফতরে বিশ্রামের ফাঁকে পাঠান বললেন, ‘‘মানুষের বিপুল উৎসাহ। মানুষের এই মনোভাব আমাদের জন্য ইতিবাচক।’’ ঘুরে ঘুরে ভোট দেখার এমন অভিজ্ঞতা তাঁর এই প্রথম। বাংলায় তৃণমূলের হয়ে ভোট লড়তে এসে গুজরাতের বাসিন্দা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য গর্ব হয় বলে যে বিতর্ক বাধিয়েছেন, সেই খবরও পেয়েছেন। তবে তাঁর প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর জন্য গর্ব হয় বললে অসুবিধার কী আছে! ‘ভি’ দেখিয়েই দলের দফতর ছেড়ে বেরিয়েছেন পাঠান। রাতেই কলকাতা হয়ে তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা।

পাঁচ বছর আগে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল এবং পুলিশ-প্রশাসনের প্রবল চাপ সামলেও অধীর যে প্রায় ৮০ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন, সেটা সম্ভব হয়েছিল বহরমপুর ও কান্দি থেকে পাওয়া ‘লিডে’র দৌলতে। কংগ্রেসের অভিযোগ, সে বার ২৬৯টা বুথ গন্ডগোল করে দেওয়া হয়েছিল। মাঝে পুরভোটে বহরমপুর শহর তৃণমূল এবং বিধানসভা ভোটে বিজেপি হয়েছে। তাই এ বার অধীর মনে করেছেন, বহরমপুরে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মসৃণ ভোট নিশ্চিত করবেন। এবং কংগ্রেসের আশা, লোকসভায় বহরমপুরের মানুষ ‘দাদা’র পাশেই থাকবেন। গত বারের মতো অভিযোগ অবশ্য এ বার ওঠেনি। যেখানেই আশঙ্কার মেঘ দেখেছেন, লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা সরাসরি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাবকে ফোন করে জানিয়েছেন। অধীরের কথায়, ‘‘কিছু জায়গায় গোলমাল করার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। আমাদের এজেন্টদের বার করে দেওয়া হয়েছিল। কমিশনকে জানানোর পরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিয়েছে। বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৭৬% ভোট পড়েছে। চিন্তার কিছু নেই!’’

আবার তৃণমূলের দাবি, অধীর যখন বহরমপুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন, অন্যান্য বিধানসভা এলাকায় তারা ‘ভোট করিয়ে’ নিয়েছে! প্রার্থী পাঠানকেও হাজির করিয়ে মানুষের উৎসাহ বাড়ানো হয়েছে। দলের মুর্শিদাবাদ-বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারের মন্তব্য, ‘‘গত বারের ভুল এ বার হয়নি, গত বারের মতো ভোটও হয়নি। ফলও গত বারের মতো হবে না!’’

বহরমপুর কেন্দ্রে সোমবার দিনভর নজরে ছিলেন দুই রাজনৈতিক ‘হেভিওয়েট’ ও তারকা-প্রার্থী অধীর ও পাঠানই। তুলনায় নজরের আড়ালে ভোট দিয়ে, এখানে ওখানে ঘুরে দিন কাটিয়েছেন নির্মল সাহা। ‘ভুঁইফোড় কিছু মস্তান’ ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে অভিযোগ পেয়ে কমিশনে যোগাযোগ করেছেন। বিজেপির চিকিৎসক-প্রার্থী বলছেন, ‘‘আমি তো এখানে আন্ডারডগ! সেটাই আমার সুবিধা। ভাল লাগছে, একটাও বোমা পড়েনি, ভোট হয়ে গেল! এ বার যে ফলই হোক, সেটা মানুষের রায়ের বাস্তব প্রতিনিধিত্ব হবে।’’ কী হতে পারে সেই ফল? নির্মলের সহাস্য জবাব, ‘‘আমার ভরসা বিবেক! ডাক্তারবাবুকে দেখে মানুষ যদি নরেন্দ্র মোদীর জন্য বিবেক-ভোট দিয়ে থাকেন, তার পরে দেখুন কী হয়!’’

ডাক্তারবাবুর দিকেই আপাতত তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে এক পোড়-খাওয়া রাজনীতিক এবং এক মারকুটে ক্রিকেটারকে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE