অপরূপা পোদ্দার, বিদায়ী সাংসদ, আরামবাগ। — ফাইল চিত্র।
অর্থাভাবে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ভোটে লড়তে পারছেন না। টিকিট না পাওয়ার কারণ হিসাবে কার্যত একই কথার পুনরাবৃত্তি তৃণমূলের এক বিদায়ী সাংসদের। তিনি আরামবাগের দু’বারের লোকসভা সদস্য অপরূপা পোদ্দার। তাঁকে এ বার আর আরামবাগে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন মিতালি বাগ। টিকিট না পাওয়া নিয়ে এত দিন পর মুখ খুললেন অপরূপা। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অপরূপা জানালেন, ভোটে লড়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই হাতে। এ কথা জানতে পেরেই মনে হয় তাঁকে এ বার টিকিট দেননি নেতৃত্ব।
গত লোকসভা ভোট থেকেই বিজেপির কাছে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আসন হয়ে উঠেছে আরামবাগ। এতটাই যে, সেখানে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে আরামবাগ থেকে বাম জমানায় অনিল বসু প্রায় ৬ লক্ষ ভোটে জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন, সেখানে গত লোকসভায় অপরূপা জেতেন মাত্র ১,০৪২ ভোটে। সে বার ওই লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র তিনটি বিধানসভা জেতে তৃণমূল। বিধানসভাতেও সেই হিসাবে কোনও বদল আসেনি। তৃণমূলের অন্দরের খবর, লোকসভা ভোটে নামমাত্র ব্যবধানে জয়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল পাঁচ বছরের মেয়াদ জুড়ে সাংসদের সার্বিক ‘পারফরম্যান্স’। সূত্রের খবর, অপরূপার কাজে খুশি ছিলেন না ঘাসফুল নেতৃত্ব। তাঁরা মনে করেছেন, অপরূপাকে আবার প্রার্থী করলে আরামবাগে বিজেপির জয় অবশ্যম্ভাবী। মূলত সেই কারণেই প্রার্থীবদল করে তৃণমূল। অপরূপার জায়গায় প্রার্থী হন মিতালি বাগ। এ বার তা নিয়ে নিজের ‘অভিমানে’র কথা জানালেন বিদায়ী সাংসদ।
সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অপরূপার দাবি, ভোটে লড়তে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা তাঁর হাতে নেই। এ কথা তিনি হুগলির এক প্রবীণ সাংসদ এবং জেলা থেকে মন্ত্রী হওয়া দু’জনকে জানিয়েছিলেন। অপরূপার ধারণা, এই তিন জনের কাছ থেকে টাকা না থাকার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন নেতৃত্ব এবং তার পরেই টিকিট ‘কাটা’ গিয়েছে তাঁর। অপরূপা বলেন, ‘‘কেন টিকিট পেলাম না তার উত্তর দিতে পারবেন হুগলির এক বর্ষীয়ান সাংসদ এবং হুগলি থেকে রাজ্য মন্ত্রিসভার দুই সদস্য। হয়তো আমি যোগ্য ছিলাম না বলেই টিকিট পাইনি। ২০১৯ সালেও আমি লিখেছিলাম যে, যখন আমি ভোটে লড়তে যাই তখন আমার কাছে টাকা ছিল না। আজকের দিনেও আমার কাছে ভোটে লড়ার জন্য টাকা নেই, এটা হুগলি গ্রামীণের দুই মন্ত্রী জানতেন, সেই সাংসদও জানতেন। হয়তো, দিদিকে বা উপরের নেতৃত্বকে তাঁরা বলেছেন তাই...কারণ ভোটে লড়তে গেলে তো টাকা লাগে। আমার কাছে টাকা ছিল না।’’
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃণমূলের ‘জনগর্জন সভা’র ঠিক আগের দিন, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন মাঠ পরিদর্শনে। সেখানে অভিষেকের সঙ্গেই কাজের তদারকি করতে দেখা গিয়েছিল অপরূপাকেও। কিন্তু পর দিন যখন প্রার্থিতালিকা ঘোষণা হয়, সেখানে অপরূপার নাম ছিল না। তালিকায় নাম না দেখে তৃণমূলের একাধিক টিকিট প্রত্যাশী প্রকাশ্যে ক্ষোভ, অভিমান জানিয়েছিলেন। বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ টিকিট না পেয়ে আবার বিজেপিতেই ফিরে যান। অসন্তোষের কথা বিভিন্ন ভাবে জানান, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মৌসম নুর, শান্তনু সেনেরা। ঘটনাচক্রে, অপরূপা যে দিন অভিমানের কথা প্রকাশ্যে জানালেন, তার কিছু ক্ষণ আগেই বরাহনগর বিধানসভার উপনির্বাচনে সায়ন্তিকাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল। যদিও অপরূপাকে এত দিন এ নিয়ে কিছুই বলতে শোনা যায়নি। শুক্রবার আচমকাই নির্মলা সীতারামনের সুর শোনা গেল অপরূপার গলায়। টিকিট না পাওয়ার কারণ হিসাবে তুলে ধরলেন অর্থাভাবের প্রসঙ্গ। পাশাপাশি, জুড়ে দিলেন দুই মন্ত্রী এবং এক সাংসদকে বিষয়টি জানানোর কথা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অভিমানী অপরূপা টিকিট না পাওয়ার পিছনে ঘুরিয়ে দায়ী করলেন ওই তিন জনকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy