Advertisement
E-Paper

আগের ভোটে বলা ৩৭০ বাতিল, রামমন্দির করেছেন মোদী, ফের জিতলে আরও এক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি

রামমন্দির নির্মাণ হয়েছে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদালোপও হয়েছে। এ বার একটানা তৃতীয় বারের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরলে আরও একটি পুরনো প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ্বাস দিল বিজেপি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৫৩
বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী।

বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী। ছবি: পিটিআই।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদালোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। পদ্মশিবিরের তরফে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কার্যকর হবে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন। সেই প্রতিশ্রুতি মতো নিজেদের লক্ষ্যপূরণ করে ফেলেছে বিজেপি। এ বার আর এক লোকসভা ভোটের আগে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) চালুর প্রতিশ্রুতি দিল তারা।

দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে সব ধর্মের মানুষ বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, জমি-সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে এক এবং অভিন্ন আইনের আওতায় আসবেন। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মের যে পার্সোনাল ল বা ব্যক্তিগত আইন রয়েছে, সেগুলি কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে যাবে। বিজেপি অবশ্য এই প্রথম অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলছে না। বিজেপির পূর্বসুরি সংগঠন জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় স্লোগান তুলেছিলেন, “এক দেশ মে দো বিধান, দো প্রধান অউর দো নিশান নেহি চলেগা।” এই স্লোগান অবশ্য বিজেপির রাজনৈতিক আদর্শের বিগ্রহস্বরূপ শ্যামাপ্রসাদ দিয়েছিলেন কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদালোপের দাবি জানিয়ে। তবে এক দেশে বিভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিগত আইন থাকা নিয়ে বার বার আপত্তি তুলেছে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) প্রভাবিত সংগঠনগুলি।

১৯৯৮ সালে বিজেপি প্রথম তাদের রাজনৈতিক ইস্তাহারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে জোট সরকারের বাধ্যবাধকতার জন্য আগের বিজেপি সরকার যে সমস্ত আদর্শগত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি, তার অনেকগুলিই পূরণ করে ফেলেছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ মোদী সরকার। এ বারের ঘোষণা, ফের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় ফিরলে সারা দেশেই এ বার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করবে পদ্মশিবির।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

ইতিমধ্যেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দেশের প্রথম রাজ্য হিসাবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করেছে বিজেপি শাসনাধীন উত্তরাখণ্ড। সে রাজ্যের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অনুযায়ী, যদি কোনও যুগল ‘একত্রবাস’ বা ‘লিভ-ইন’ করতে চান, তবে অবশ্যই পুলিশ বা জেলা আধিকারিকদের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি তাঁদের বয়স ২১ বছরের নীচে হয়, তবে বাবা-মায়ের সম্মতির প্রয়োজন। ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘রেজিস্ট্রি বিবাহ’ বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে এই বিধিতে। কোনও যুগল ‘লিভ-ইন’ করতে চাইলে প্রথমেই তাঁদের নাম পুলিশের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কের ‘ঘোষণাপত্র’ সঙ্গে রাখতে হবে যুগলকে। সময় মতো প্রয়োজনে তা দেখাতে ব্যর্থ হলে যুগলের ২৫ হাজার টাকার জরিমানা এবং তিন মাসের জেল হতে পারে। ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কে থাকা যুগলের যদি সন্তান হয়, তবে শিশুরা আইনি স্বীকৃতি পাবে।

তবে একটি অঙ্গরাজ্যে এই বিধি কার্যকর করা গেলেও গোটা দেশে ইউসিসি চালু করতে হলে বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল ইতিমধ্যেই ইউসিসি-র বিরোধিতা করেছে। ভোটপ্রচারে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার জানিয়েছেন, তাঁর দল এই বিধি মানবে না। ইদের দিন সকালে কলকাতার রেড রোডে নমাজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, “অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) আনছে। আমরা ঘৃণাভাষণ চাই না, এনআরসি চাই না, সিএএ চাই না। আমাদের লক্ষ্য সর্বধর্ম সমন্বয়।” বিরোধী দলগুলির বিরোধিতা ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দেশের অন্য কিছু অংশে তফসিলি জাতি, জনজাতি শ্রেণির মানুষেরা এই বিধির বিরোধিতা করতে পারে। ভোটের অঙ্কে তাদের চটানো বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়।

তবে অনেকেই মনে করছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (৩৭০ অনুচ্ছেদ) লোপ এবং অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের পর বিজেপি যদি গোটা দেশকে একই আইনের আওতায় আনতে পারে, সে ক্ষেত্রে তাদের আদর্শগত বৃত্তটি প্রায় সম্পূর্ণ হবে। নিজেদের ভোটারদের কাছেও পদ্মশিবির এই বার্তা দিতে পারবে যে, তারা যে কথা দেয়, সেই কথা রাখে।

BJP Manifesto UCC Uniform Civil Code
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy