E-Paper

‘টানাপড়েনে’ বিভ্রান্ত মতুয়ারা, বাড়ছে ভয়

জেলার গাজল, বামনগোলা, হবিবপুর ও পুরাতন মালদহ—চারটি ব্লকে বেশিরভাগ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনের বাস। সংগঠনগুলির দাবি, জেলায় তাঁদের সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষের কাছাকাছি।

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৫
Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

লোকসভা ভোটের মুখে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে মতুয়াদের দু’টি গোষ্ঠীর ভিন্ন সুরে ‘বিভ্রান্ত’ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন। মালদহ জেলায় সিএএ অনুযায়ী আবেদন পত্র পূরণ করার ব্যাপারে মতুয়াদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বোঝাবে ‘বিজেপিপন্থী’ মতুয়া মহাসঙ্ঘ। সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের’ মালদহ জেলার সম্পাদক-সহ কয়েকজন কলকাতার সল্টলেকে গিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন পত্র পূরণ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ওই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছেন। অপর দিকে, কেউ যাতে সিএএ-তে ফর্ম পূরণের জন্য আবেদন না করেন, তা নিয়ে পাল্টা সরব ‘তৃণমূল প্রভাবিত’ মতুয়া মহাসঙ্ঘ। তারা পাল্টা ‘নিঃশর্ত নাগরিকত্বের’ দাবিতে পথের নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জেলার গাজল, বামনগোলা, হবিবপুর ও পুরাতন মালদহ—চারটি ব্লকে বেশিরভাগ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনের বাস। সংগঠনগুলির দাবি, জেলায় তাঁদের সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষের কাছাকাছি। সারা দেশে সিএএ কার্যকর হওয়ার পরে মতুয়াদের একাংশে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও, বেশিরভাগই কিন্তু ‘উদ্বেগে’ বলে মতুয়াদের দু’টি সংগঠন সূত্রে খবর। সিএএ আবেদন পত্র পূরণ করা উচিত হবে কি না, তা নিয়েও ‘দোটানা’ রয়েছে।

বামনগোলা ব্লকের চাঁদপুরের বাসিন্দা আশুতোষ সরকার বলেন, ‘‘আমাদের মতুয়া সম্প্রদায়ের এক পক্ষ বলছে, নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করতে হবে এবং অন্য পক্ষ বলছে আবেদন করা মানেই প্রমাণ করে দেওয়া যে আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। ফলে, আমরা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছি। কিন্তু বাস্তবে আমাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড সবই তো রয়েছে। আমরা সমস্ত সরকারি পরিষেবা পাচ্ছি। আমার দুই ছেলে সরকারি চাকরি করছে। সব দিক থেকেই এই দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ফের কেন আমাকে আবেদন করতে হবে, সেটাও বুঝতে পারছি না!’’ এই পরিস্থিতিতে মালদহ জেলার তৃণমূল প্রভাবিত মতুয়া মহাসঙ্ঘ নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মতুয়া মহাসঙ্ঘের মালদহ জেলা সম্পাদক কাশীশ্বর মৈত্র বলেন, ‘‘বারুণির স্নান উপলক্ষে শনিবার ঠাকুরনগরে আমাদের বড় কর্মসূচি রয়েছে। সেখানে নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এবং তার পর জেলায় ফিরে এসে আমরা পথে নামব। তবে শুরু থেকেই নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি জানিয়েছি। নতুন করে নাগরিকত্ব পেতে আমরা কেউ আবেদন করব না।’’

‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার কলকাতার সল্টলেকে সংগঠনের বিভিন্ন জেলার নেতৃত্বদের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের একটি বৈঠক হয়েছে। মতুয়াদের কী ভাবে অনলাইনে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনদের মধ্যে কী প্রচার করতে হবে, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব সূত্রে খবর, নাগরিকত্ব পেতে ফর্ম পূরণ নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে প্রচার করতে বিধানসভা ভিত্তিক তিন জন ‘প্রমুখ’ ও ‘সহ-প্রমুখ’দের কাজে লাগানো হবে। কলকাতা থেকে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন, তাঁরাই ‘প্রমুখদের’ প্রশিক্ষণ দেবেন। সংগঠনের মালদহ জেলা সম্পাদক ঠাকুরদাস সরকার বলেন, ‘‘দেশভাগের পরে অত্যাচারিত হয়ে বা মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে সমস্ত হিন্দু বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাঁরা অনলাইনে আবেদন করলে নাগরিকত্ব পাবেন। সল্টলেকের বৈঠকে বিষয়টি পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। আসলে সিএএ আইন নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়, নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য—এটা বোঝানোই আমাদের লক্ষ্য।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Matua Mahasangha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy