চার ‘ম’-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায় কমিশন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
হিংসামুক্ত ভোট করানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর থাকার কথা জানিয়েও জাতীয় নির্বাচন কমিশন মেনে নিল যে, তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ‘ফোর এম’ অর্থাৎ চারটি ‘ম’। তবে সেগুলির মোকাবিলা করার বিষয়েও গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানালেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।
শনিবার অষ্টাদশ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে কমিশন। সেই সাংবাদিক বৈঠকেই ‘ফোর এম’-এর কথা বলেন তিনি। এই চারটি ‘এম’ কী কী? রাজীব জানিয়েছেন, মাসল (পেশিশক্তি), মানি (অর্থশক্তি), মিস ইনফরমেশন (ভুয়ো তথ্য) এবং মডেল কোড অফ কনডাক্ট (আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি)। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘আমরা ভোটের আগে, ভোটের সময়ে এবং ভোটের পরে রক্তস্নান চাই না। হিংসামুক্ত ভোট করানোর বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু আমাদের সামনে ‘ফোর এম’-এর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা তা মোকাবিলা করব এবং দুনিয়ার বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই উৎসবকে হিংসাহীন রাখতে কাজ করব।’’ রাজীব এ-ও উল্লেখ করেছেন যে, এমন অনেক রাজ্য রয়েছে, যেখানে হিংসার ঘটনা প্রতি নির্বাচনেই ঘটে। সে সব রাজ্যের ক্ষেত্রে যে কমিশন বিশেষ ভাবে নজর দিচ্ছে তা-ও শনিবার স্পষ্ট করে দিয়েছে কমিশন।
শেষোক্ত বিষয়টি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পশ্চিমবঙ্গকে লক্ষ্য করে বলে থাকলেও থাকতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে বাংলায় ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ উঠেছিল। এমনিতেই ভোটের সময় সন্ত্রাস পশ্চিমবঙ্গের ‘ঐতিহ্য’ বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে। সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক, ৯২০ কোম্পানি, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। যা জম্মু-কাশ্মীরের চেয়েও বেশি।
হিংসা রোখার বিষয়ে দেশের সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার এবং সার্বিক ভাবে প্রশাসনকে বার্তা দিয়েছে নির্বাচন সদন। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে নির্বাচনী আচরণবিধি বলবৎ হয়ে গিয়েছে। কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পুলিশ-প্রশাসনের যা যা করার, তা দ্রুত করে ফেলতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম, এক জায়গায় যিনি তিন বছর বা তার বেশি সময় ধরে কাজ করছেন, তাঁকে অন্যত্র বদলি করে দিতে হবে।
এ বারের লোকসভা ভোট হবে সাত দফায়। প্রথম দফার ভোট ১৯ এপ্রিল। সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ হবে ১ জুন। ৪ জুন ভোটগণনা। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, ভোটে অর্থের লেনদেন রুখতেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেমন, কোনও নেতা বা নেত্রী যদি কোথাও চার্টার্ড বিমান বা চপার নিয়ে প্রচারে যান, প্রয়োজনে পুলিশ বা বাহিনী সেখানেও তল্লাশি চালাতে পারে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকাগুলিতে নজরদারির জন্য ‘ড্রোন’ উড়বে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর সময়ে যে যে রাজ্যে ভোট হয়েছে, সেই সময়ে নগদ অর্থ উদ্ধারের পরিসংখ্যানও দেন রাজীব। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে কমিশনের কাজকে অনেক গুছিয়ে করার চেষ্টা করেছি। যে কারণে এই সময়ে আদালতও কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ কোনও মন্তব্য করেনি।’’ তাঁর দাবি, গত দু’বছরে যে যে রাজ্যে ভোট হয়েছে, সেখানে সব মিলিয়ে ৩৪০০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করেছে কমিশন।
সমাজমাধ্যম বা সংবাদমাধ্যমে যাতে ভুয়ো তথ্য বা খবর না ছড়ানো হয়, সে ব্যাপারেও কড়া বার্তা দিয়েছে কমিশন। রাজীব বলেন, ‘‘মানুষ সমাজমাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন, রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সমালোচনা করতে পারেন, আমাদেরও সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু তা যেন বস্তুনিষ্ঠ হয়। তাতে যেন ভুয়ো তথ্য না থাকে।’’ পাশাপাশিই, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কথা, ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং ঘৃণাভাষণ নিয়েও সতর্ক করেছে কমিশন। এই সমস্ত বিষয় তদারকির জন্য সারা দেশে ২১০০ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy