তুচ্ছ ঘটনায় বেআইনি অস্ত্র বের করা মুর্শিদাবাদে জলভাতের মতো বিষয়। কথায় কথায় সটান বেআইনি অস্ত্র বের করে ফেলে। আর ভোট এলেই জেলায় অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে যায়। অতীতে নির্বাচনগুলিতে সে সবের সাক্ষী থেকেছে মুর্শিদাবাদ। কয়েক মাস আগে হয়ে যাওয়া ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বোমা গুলি বন্দুকের ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে মুর্শিদাবাদে। যার জেরে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে অন্ততপক্ষে ১৫ জন ভোটের বলি হয়েছেন। সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে জেলাজুড়ে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানে নেমেছে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। গত ১ ডিসেম্বর থেকে সেই অভিযান চলছে। বিশেষ অভিযানে জেলা জুড়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গুলি বোমা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। সেই অভিযান এখনও চলছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, ‘‘বছরভর বেআইনী অস্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাই। তবে লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ডিসেম্বর থেকে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করেছি। সেই মতো অস্ত্র গুলি বোমা বন্দুক উদ্ধার করা হচ্ছে, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।’’
মুর্শিদাবাদের মানুষ বলছেন, এত অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করলেও অনেক অস্ত্রর খোঁজ এখনও মেলেনি। যা পাওয়া গিয়েছে, তার অনেক বেশি জেলায় লুকিয়ে রয়েছে। বিপদ সেখানেই
২০০৮ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে সব থেকে ভোট হিংসার বলি হয়েছিল মুর্শিদাবাদে। সে বার মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে ১৪ খুন হয়েছিল। তার মধ্যে শুধুমাত্র ডোমকল বিধানসভা এলাকায় ১০ জন খুন হন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের একজন মাত্র খুন হয়েছিল। সেটাও মুর্শিদাবাদের ডোমকলে হয়েছিল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটে হিংসার জেরে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ও নওদায় দু’জন খুন হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ভগবানগোলায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে এক ভোটার খুন হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিন মুর্শিদাবাদের কোথাও খুনের ঘটনা না ঘটলেও ভোটের কিছু দিন আগে হরিহরপাড়ায় দু’জন খুন হয়েছিলেন। গত বছর হয়ে যাওয়া ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ভোট পর্বে ১৫ জন ভোটের বলি হয়েছেন। তার মধ্যে ভোটের দিন চারজন, মনোনয়ন পর্ব থেকে ভোটের আগে পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের দিন জখমদের মধ্যে থেকে জনা পাঁচেকের মৃত্যু হয়েছিল। এ সবের মাঝে লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। তার আগে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার না হলে ভোটে খুনোখুনির আশঙ্কা করছেন জেলার বাসিন্দারাও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)