Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Hate Speeches in Politics

কুকথার ধারা চালু শতবর্ষের ও পারে

গোমাতাদের নিয়ে রাজনীতিও নেহাৎ গোবলয়ের বিষয় নয়। ঠিক ১০০ বছর আগে দিল্লিতে ভারতীয় লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য পাঠানোর ভোটে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের দলকেও গরু-রাজনীতির তোপ সামলাতে হয়।

—প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৯
Share: Save:

মোগল, মঙ্গলসূত্র মহিমান্বিত মোদীজির মুখমণ্ডলে। ভোট-মহিমায় এটুকু অনুপ্রাসের লোভ সামলানো গেল না। ভোটের আদর্শ আচরণবিধিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা বিদ্বেষমূলক প্রচারে নিষেধ লেখা আছে। ভোট এলে ‘ছুটলে কথা থামায় কে’ ভঙ্গিতে তবু নানা অমৃতবাণীর ঢেঁকুর উঠবেই। ইতিহাস ঘাঁটলে মালুম হয় এমন শব্দ-শেল এ দেশে ভোট-রাজনীতির গোড়া থেকেই বিরাজমান।

গোমাতাদের নিয়ে রাজনীতিও নেহাৎ গোবলয়ের বিষয় নয়। ঠিক ১০০ বছর আগে দিল্লিতে ভারতীয় লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য পাঠানোর ভোটে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের দলকেও গরু-রাজনীতির তোপ সামলাতে হয়। চিত্তরঞ্জনের স্বরাজ্য পার্টি তখন ‘হিন্দু-মুসলিম প্যাক্ট’ করেছে। বাঙালিয়ানার উর্ধ্বে হিন্দু, মুসলমানকে নিয়ে চলার রাজনীতি অনেককে আলোর সন্ধান দিলেও কেউ কেউ চটেছিলেন। নির্মলচন্দ্র চন্দ্র স্বরাজ্য দলের প্রার্থী। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কলকাতার রাজপথে পর পর লরিতে গোমাতার মিছিল নামিয়ে দিলেন। গরুদের গলায় বাঁধা প্রচারপত্রের সার-কথা, মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তিকারী স্বরাজ্য দল গোহত্যা রুখবে না। গোরক্ষার স্বার্থে ওদের বর্জন করুন। স্বরাজ্য দল ধারালো রসিকতার রাজা দাদাঠাকুরকে দিয়ে মোক্ষম জবাব লিখিয়েছিল। কিন্তু নির্মলচন্দ্র ভেবেচিন্তে সেই পাশুপত অস্ত্র প্রয়োগ করলেন না। সম্ভবত ভোট-সংলাপে সাম্প্রদায়িকতার খোঁচাখুঁচি এড়াতে চেয়েছিলেন।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

এই বাক্‌-সংযমের শুভবোধটুকুই বিরল আজকের ভোটে। দাদাঠাকুর, একই সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দিতে তুখোড়। বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধে একেলে নামজাদা কমেডি-শিল্পীদেরও গোল দিতে পারতেন। তবে দাদাঠাকুর সুলভ সরস দেওয়াল-লিখনের দিন গিয়াছে। বদলে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, হাসির রিল বা সিঙ্গুরের গরুদের নিয়ে গরুর রচনারই জয়জয়কার। অধ্যাপক সৌরীন ভট্টাচার্য বললেন, ১৯৬২ সালে কলেজ রোয়ের মুখে সিপিআই এবং কংগ্রেস দু’দলই পাশাপাশি হোর্ডিংয়ে ‘রাশিয়ার চিঠি’ থেকে উদ্ধৃতি দেয়। সিপিআই রবীন্দ্রনাথের ‘এ জন্মের তীর্থ দর্শন’ নিয়ে মুখর। কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার যান্ত্রিকতা নিয়ে কবির সমালোচনা মেলে ধরে।

এ সব বৈদগ্ধ ক্রমশ মেঠো লব্জ, শালীনতার সীমা ছাড়ানো আক্রমণে ঢাকা পড়েছে। প্রবীণদের মনে আছে, ১৯৬৭-তে যুক্তফ্রন্ট সরকার জেতার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন রোড সংলগ্ন গেটের বাইরে ঝুলন্ত কানা বেগুন ও কাঁচকলায় রাজপথ ছেয়ে গিয়েছিল। খাদ্য সঙ্কটে ভাতের বদলে কাঁচকলার গুণ গেয়ে কাঁচকলা মন্ত্রী নাম কেনেন প্রফুল্ল সেন। আর ব্রিটিশ পুলিশের লাঠিতে এক চোখ খোয়ানো স্বাধীনতা সংগ্রামী অতুল্য ঘোষের নাম হয় কানাবেগুন। কেউ কেউ বলেন, এমন কুরুচিকর ব্যক্তি আক্রমণে বামেরাই রাজ্যে পথিকৃৎ। তবে ব্রিটিশ আমলে স্বরাজ্য পার্টির এক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধেও জাত তুলে প্রচার ঘটেছে বলে ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন।

প্রবীণ বাম নেতারা ইদানীং বলেন, “আমরা যা বলতাম, সংসদীয় রীতি মেনে, অপশব্দ না-বলেই। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা দিলীপ ঘোষদের মুখের আগল নেই। প্রতিপক্ষের বাপান্তও তাই গা-সওয়া।” এ দাবি পুরোটা মানা মুশকিল। অনিল বসুর কদর্য মন্তব্য বেশি পুরনো নয়। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে অনেক বাগ্মী বাম নেতার মোক্ষম উপমা ভরপুর বক্তৃতাতেও চরম নারীবিদ্বেষের নমুনা মিলবে। আদি কংগ্রেস, ডাঙ্গের সিপিআই এবং ইন্দিরা বিরোধিতার জমানায় গ্রামবাংলায় সিপিএমের জনপ্রিয় দেওয়াল লিখন, ‘আদি, মাদি, ডাঙ্গে/ ঠাঁই নাই বঙ্গে’! মাদি বা নিছক মহিলা বলে ইন্দিরাকে আক্রমণ নিয়ে বাঙালি ভদ্রমণ্ডলীর খুব তীব্র আপত্তি ছিল কি?

এ যুগে রোজই কুকথা নিয়ে রেফারি নির্বাচন কমিশনের কাছে ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়ছে। কিন্তু তার কতটা কানে ঢোকে? প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে মুসলিমদের বেলাগাম আক্রমণের পরে এ প্রশ্নটা গণতন্ত্রের গলায় কাঁটার মতো বিঁধে থাকে। (চলবে)

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Politics Lok Sabha Election 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE