E-Paper

বীরভূমে রাজনীতির ছোঁয়াচ এড়িয়ে রং বাছাইয়ে অনেকেই

সিউড়ির টিনবাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ছোট বড় আবির বিক্রির দোকান বসে প্রতি বছরই। সেখানেও খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভোটের আগে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও অনেকটা পরিমাণে নির্দিষ্ট রঙের আবির কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

সৌরভ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪০
holi

—প্রতীকী ছবি।

রং ‘মর্মে’ ও ‘সকল কর্মে’ লাগানোর কথা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভোটের মুখে দোলে কবিগুরুর কর্মভূমি বীরভূম জেলায় চোখে পড়ছে সেই রং নিয়েই বাছবিচারের ছবি। নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে রং জড়িয়ে, সেই রং মাখলে তাদের ‘কর্মের’ সঙ্গেও জড়িয়ে যেতে হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তাই দলীয় রং ছাড়াই অন্য রঙের আবিরে নজর দিচ্ছেন অনেকেই।

বিশ্বভারতী দোলের আয়োজন না করায় আবিরের চাহিদা এ বার একটু কমেছে বোলপুর-শান্তিনিকেতনে। বোলপুর চৌরাস্তা এলাকার আবির বিক্রেতা রামরতন সাউ বললেন, ‘‘বাইরে থেকে যাঁরা বোলপুরে বেড়াতে এসেছেন, তাঁরা এক সঙ্গে নানা রঙের আবির কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে আলাদা করে সবুজ আবিরের চাহিদা আছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেগুলির জন্যও সবুজ আবির কিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’

সিউড়ির টিনবাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ছোট বড় আবির বিক্রির দোকান বসে প্রতি বছরই। সেখানেও খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভোটের আগে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও অনেকটা পরিমাণে নির্দিষ্ট রঙের আবির কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবির বিক্রেতা স্বপন দাস বলেন, “সবুজ আর গেরুয়া রঙের আবির অনেকটাই বেশি বিক্রি হচ্ছে। ভোটের জন্যই হয়তো চাহিদা বেশি। তবে অন্য রঙের আবিরের বিক্রিও কম নয়।” জেলার রাজনৈতিক ময়দানের মতোই আবির বিক্রির লড়াইয়েও সবুজ বা গেরুয়ার থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে লাল। তবে রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে যাঁরা রঙের উৎসবে মেতে উঠতে চাইছেন, তাঁরা এই তিন রঙের বাইরে অন্য রঙের আবিরের খোঁজ করছেন।

এ দিন বাজারে বেশ কিছুটা নীল ও গোলাপি আবির কিনে বাড়ি ফিরছিলেন সিউড়ির বারুইপাড়ার নবনীতা দত্ত। বললেন, “ভোটের আগে রং নিয়ে চর্চাও অনেক বেশি হয়৷ তাই বাড়ির ছোট সদস্যদের উৎসবে যাতে রাজনীতির রং না লাগে, তা ভেবেই গোলাপি, নীলের মতো রং বেছে নিয়েছি।” সিউড়ির স্বপ্নদীপ বাগদি, প্রলয় মাহারা, রণজিৎ বসাক, রুদ্রদীপ মুখোপাধ্যায়েরা এক সঙ্গে বাজারে আবির কিনতে এসে ‘অরাজনৈতিক’ রঙেরই খোঁজ করছিলেন। রাজনীতির ছোঁয়াচ এড়ানোর একটা কারণ সমাজমাধ্যমের রমরমাও, মত তাঁদের। তাঁরা বললেন, ‘‘এখন সামাজিক মাধ্যম অত্যন্ত সক্রিয়। আমাদের রং মাখা ছবি কোনও রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর চোখে পড়ে যেতেই পারে৷ সেই রঙ দিয়ে যাতে আমাদের রাজনৈতিক সমর্থন বিচার করা না হয়, তার জন্যই হলুদ, বেগুনি, গোলাপি রঙের আবির কিনেছি।’’ রং নিয়ে অবশ্য রাজনীতি চায় না তৃণমূল-সিপিএম দু’পক্ষই। সিউড়ির পুরপ্রধান, তৃণমূলের উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমরা চাই সব রঙের আবির বিক্রি হোক। রাজনীতি তো সারা বছর থাকবেই, কিন্তু রঙের উৎসবে সবাই আনন্দ করুন।’’

সিপিএমের সিউড়ি এরিয়া কমিটির সদস্য রুদ্রদেব বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা রং দিয়ে মানুষকে বিচার করতে রাজি নই। আমরা রং নিয়ে রাজনীতি করারও পক্ষপাতী নই।’’ বিজেপি অবশ্য এ ক্ষেত্রে ভিন্ন সুর। দলের যুব মোর্চার সদস্য সুমন মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা সব সময়ই বেশি। তাই সব ক্ষেত্রেই রাজনীতি ঢুকে গিয়েছে।’’

বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ঘটনাচক্রে এক একটা রং, এক একটা রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে মিলে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা স্বাভাবিক নয়। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটকে রক্তকরবীর যে গাঢ় লাল রং, তা কি শুধুই বিদ্রোহের প্রতীক? তা কি একই সঙ্গে প্রেমের প্রকাশ নয়? আসলে আজকের দিনে রাজনীতি একটা বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই হয়তো সচেতন ভাবেই এই এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়াস।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Birbhum Dol Yatra

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy