Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

প্রার্থী না থাকলেও আছে, যৌথ লড়াইয়ের বার্তা বিমান-সেলিমদের

সমঝোতা করে লড়লেও বামেদের ভোট যে ভাবে কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে যায়, কংগ্রেসের ভোট সে ভাবে বামেদের দিকে আসে না— রাজ্যে এই চর্চা রয়েছে সেই ২০১৬ সাল থেকেই।

ডোমকলে কংগ্রেস কার্যালয়ে সিপিএমের প্রার্থী ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

ডোমকলে কংগ্রেস কার্যালয়ে সিপিএমের প্রার্থী ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। — নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪ ০৭:০২
Share: Save:

আসন সমঝোতা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। কয়েকটি আসন ঘিরে বাম ও কংগ্রেসের আলোচনা জারি রয়েছে। তবে তার মধ্যেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু স্পষ্ট করে দিলেন, যেখানে নিজেদের প্রার্থী নেই, সেখানে কংগ্রেসের জন্যই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। মালদহে গিয়ে বিমানবাবু এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশিই মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি ও ডোমকলে সিপিএমের প্রার্থী তথা দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের হয়ে পতাকা নিয়ে প্রচারে শামিল হলেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। তবে রাজ্যের সর্বত্র এখনও কংগ্রেসকে দেখা যাচ্ছে না বাম বা সিপিএমের পাশে। নানা মত, অঙ্ক নিয়ে চর্চায় ব্যস্ত কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশ।

মালদহ জেলায় উত্তর ও দক্ষিণ, দু’টি লোকসভা আসনই এ বার কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছে সিপিএম। সেই জেলায় কর্মিসভা করতে গিয়েই বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘মালদায় প্রার্থী আমাদের নেই কিন্তু আবার প্রার্থী আছে! আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপি নামক অশুভ শক্তি, তার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নামক যে এক মিথ্যাচারী শক্তির মিলন, এর বিরুদ্ধে যারাই লড়াই করতে চায়, আমরা তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চাই।’’ বিমানবাবুর সংযোজন, ‘‘কংগ্রেস যখন ওই দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়, তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছে। এই মালদা উত্তর ও দক্ষিণ, দু’টি কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে দক্ষিণ এবং উত্তর কেন্দ্রে ঈশা খানই হোন আর মুস্তাক আলমই হোন, তাঁদের পক্ষে জনগণের মধ্যে প্রচার করব।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

সমঝোতা করে লড়লেও বামেদের ভোট যে ভাবে কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে যায়, কংগ্রেসের ভোট সে ভাবে বামেদের দিকে আসে না— রাজ্যে এই চর্চা রয়েছে সেই ২০১৬ সাল থেকেই। সে বার বিধানসভা নির্বাচনে আসন-রফা করে লড়ে বামফ্রন্ট সংখ্যায় বেশি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু বেশি আসন জিতেছিল কংগ্রেস, আব্দুল মান্নান বিরোধী দলনেতাও হয়েছিলেন কংগ্রেস থেকে। তার পরে ভোট হস্তান্তর বিতর্ক জোরালো হয়েছিল। এ বারই প্রথম বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে দু’পক্ষ সমঝোতা করছে। বামেদের তরফে যাতে কংগ্রেস প্রার্থীর জন্য ভোটের কাজে কোনও ঘাটতি না থাকে, সেই লক্ষ্যে বিমানবাবুর বার্তা তারৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।

মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম লড়ছেন পাশাপাশি দুই কেন্দ্র থেকে। সমঝোতার বার্তা ও প্রক্রিয়া জোরালো করতেই সেলিম মুর্শিদাবাদে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। যৌথ প্রচারের পরে রবিবার ডোমকলে কংগ্রেসের দলীয় দফতরেও গিয়েছিলেন সেলিম। সেখানেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে এই রফা বা সমঝোতার ফলে বিজেপি এবং তৃণমূল চিন্তায় পড়েছে। অধীর চৌধুরী ও মহম্মদ সেলিম যদি একসঙ্গে হয়, তা হলে শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, গোটা বাংলায় একটা বার্তা যাবে যে, আমরাই বিজেপি ও তৃণমূলকে রুখতে পারি।’’ সূত্রের খবর, যৌথ প্রচার ও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আজ, বুধবার কলকাতা জেলা সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন কলকাতা উত্তরের কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য। বিমানবাবুর সঙ্গেও তাঁর দেখা করার কথা। এই বাতাবরণকে স্বাগত জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সুমন রায় চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘যাঁরা বামপন্থীদের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে ভাসবাসছেন, তাঁরা প্রকারান্তরে তৃণমূল আর বিজেপিকে সাহায্য করতে চাইছেন। এই প্রবণতা থেকে দূরে থাকুন!’’

কংগ্রেসের সর্বাংশে অবশ্য সমঝোতার বার্তা এখনও গৃহীত হয়নি। দমদমের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (শহরাঞ্চল) সভাপতি তাপস মজুমদারের কার্যালয়ে দেখা করে সহায়তা চেয়েছেন। কলকাতা উত্তরে কংগ্রেস-সিপিএম যৌথ কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতি শুরু হলেও কলকাতা দক্ষিণে প্রার্থী হতে না পেরে ক্ষুব্ধ জেলা সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ ও তাঁর সঙ্গীরা এখনও কাজে নামেননি। যদিও কলকাতা দক্ষিণের সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের সঙ্গে প্রচারে দেখা গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়কে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে আরও বেশি আসনের দাবি জানিয়ে দলের হাই কম্যান্ডের কাছে আগেই চিঠি পাঠিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার প্রদীপ এবং জলপাইগুড়ি, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের মতো জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় অবশ্য বলেছেন, বড় ও গণতান্ত্রিক দলে কিছু ভিন্ন মত থাকেই। সমঝোতার বিরোধিতা যারা করছে, তারা খুবই ছোট অংশ।

কংগ্রেসেরই একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, ২০০৯ সালে রাজ্যে ১৯ জন বিধায়ক থাকলেও কংগ্রেস লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ১৪ আসনে লড়েছিল। এখন কোনও বিধায়ক না থেকেও বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করে ১২ আসনে লড়তে পারলে অসুবিধা কোথায়? কংগ্রেসের জন্য ছাড়া আসনগুলির মধ্যে যখন উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদের ‘ইতিবাচক’ কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে উদার মনেই এই সমঝোতা মেনে নেওয়া উচিত!

নওসাদ সিদ্দিকীর আইএসএফের সঙ্গে বামেদের সমঝোতা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি। তারই মধ্যে দোলের দিনে ভাঙড়ে দেওয়াল লিখন ঘিরে বিবাদে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়িয়েছেন সিপিএম এবং আইএসএফের কর্মীরা। গিয়েছিলেন যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যও। এই ঘটনাকে সমঝোতার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বাম শিবির।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 CPM Congress Md Salim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE