E-Paper

কৃষক মন পেতে আনাজ সংরক্ষণ, আশ্বাস মোদীর

আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের বন্যাপ্রবণ খানাকুল বিধানসভা এলাকা ছাড়া বাকি ৬টি বিধানসভার অধিকাংশ জমিই তিন থেকে চার ফসলি।

পীযূষ নন্দী , অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ০৯:২৯
পুরশুড়ায় নরেন্দ্র মোদীর সভার পথে চন্দ্রকোনার বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।

পুরশুড়ায় নরেন্দ্র মোদীর সভার পথে চন্দ্রকোনার বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। নিজস্ব চিত্র।

কৃষকদের জন্য প্রতিশ্রুতির ‘ট্রেলার’ শোনালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার করতালির ঝড় উঠল তাঁর পুরশুড়ার প্রচারসভায়।

‘হোমওয়ার্ক’ যে তিনি ভালই করেন, তা তাঁর অতি বড় সমালোচকেরাও বিনা বাক্যব্যয়ে স্বীকার করে নেন। রবিবার আরও একবার তাঁর প্রমাণ দিলেন মোদী। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী অরূপকান্তি দিগারের সমর্থনে জনসভায় এসেছিলেন মোদী। কৃষি প্রধান আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ার দাবি দীর্ঘদিনের। তাই মোদী বললেন, “বিজেপি সরকার দেশে আনাজ ভান্ডারের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রকল্প শুরু করেছে। এখন আমরা আলু, পেয়াঁজ, টোম্যাটোর বিশেষ ক্লাস্টার বানাচ্ছি। সেখানে আনাজ সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া যাবে।’’

শুধু সংরক্ষণ কেন্দ্র নয়। মোদী জানান, এ ছাড়া জৈব জ্বালানি প্লান্টও হচ্ছে। কিসানরাও এর সুফল পাবেন। দুই প্রতিশ্রুতি শোনার পরই শুরু হয় হাততালি। তা শুনেই মোদীকে বলতে শোনা যায়,“এটা শুধু ট্রেলার, এখন তো অনেক কিছু করা বাকি।’’

প্রসঙ্গত, আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের বন্যাপ্রবণ খানাকুল বিধানসভা এলাকা ছাড়া বাকি ৬টি বিধানসভার অধিকাংশ জমিই তিন থেকে চার ফসলি। আমন ধানের পর আলু, তারপর বোরো ধান অথবা বাদাম বা তিল চাষ। পরে হয় আনাজ চাষ। আরামবাগ লোকসভার অন্তর্গত পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা বিধানসভা মূলত আলুর চাষের জন্য পরিচিত। এখানে আলুর জন্য হিমঘর আছে বটে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। আনাজের ক্ষেত্রে নেই তেমন কোনও সংরক্ষণকেন্দ্র। ফলে, এক শ্রেণির কৃষক ফড়েদের কাছে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। মেলে না তেমন লাভ। রাজ্য সরকারের কৃষক মান্ডি আছে বটে, কিন্তু তাতে সংরক্ষণের সুবিধা নেই।

কৃষকদের মন পেতে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি মোদী উস্কে দিতে চেয়েছেন তাঁদের ক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল অন্নদাতা কিসানদেরও ছাড়েনি। ধান কেনার ক্ষেত্রে মান্ডিতে লুটেছে। ওজনে মারে। আবার পয়সাও কম দেয়।’’ ন্যায্যমূল্যে ধান কেনা নিয়ে কৃষকদের একাংশের মধ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। মোদী ছুঁয়ে গিয়েছেন সেই ক্ষোভও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদী কিসান সম্মাননিধি পাঠায়, তাতে কিসান ভাইদের কিছুটা সুরাহা হয়।’’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষে সভায় আসা পুরশুড়ার কেলেপাড়ার চাষি মদন ঘোষ বলেন, “আলু, বাদাম, তিল, ডালশস্য ফলিয়ে কোনও দিনই ন্যায্য দাম পাই না। এ বার যদি সংরক্ষণ কেন্দ্র বা আমাদের চাষিদের নিয়ে সঙ্ঘ (ক্লাস্টার) গড়ার বিষয়টা কার্যকর হয়, তা হলে দারুণ হবে।’’

মোদীর মুখে সংরক্ষণের কেন্দ্র শুনে উজ্জীবিত চন্দ্রকোনার বিজেপি শিবির। চন্দ্রকোনা বিধানসভার বিজেপির আহ্বায়ক সুদীপ কুশারী বলেন, ‘‘মোদী কতটা কৃষক দরদী সেটা গোটা দেশ জানে। আরামবাগে এসে প্রধানমন্ত্রীর মুখেও সে কথা বারে বারে শোনা গিয়েছে। এই এলাকায় আলুই বেশি হয়। আনাজও উৎপাদন হয়। তাই আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠলে এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্র পুরো পাল্টে যাবে। সেটা প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন।’’ মোদীর বক্তব্যকে কটাক্ষ করে চন্দ্রকোনার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ ধাড়া বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার অনেক আগেই কৃষক মান্ডি করে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী কতটা কৃষকদের পাশে থাকেন, দেশবাসী জানেন।’’

কয়েক বছর আগের কথা। দেশ জোড়া কৃষক আন্দোলনের জেরে তিন কৃষি বিল প্রত্যাহার করে মোদী জানিয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা তাঁরা কৃষকদের বোঝাতে পারেননি। বিজেপি শিবিরের দাবি, এ দিনের সভা থেকে মোদী বোঝাতে চাইলেন সে চে‌ষ্টা থামেনি এখনও। সিনেমা শুরুর আগে ও বিরতিতে আগামী দিনে ‘রিলিজ’ হতে চলা সিনেমার কিছু অংশ দেখানো হয়। এটাই ‘ট্রেলার’। এটাই টানে দর্শককে। মোদীও কৃষকদের ‘ট্রেলার’ দেখালেন। তৃণমূলের কটাক্ষ, মোদীকে আসলে ট্রেলার দেখিয়েছেন কৃষকরা। তাই তিনি তিন কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। অনেকদিন হয়ে গেল। মোদীর হয়তো মনে নেই। ভোটে তার পুনরাবৃত্তি করবেন কৃষকরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 BJP Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy