ইটাগড়িয়ার লাল্টু চিত্রকর।
উনিশ শতকের পটচিত্র ও গান এখন বিলুপ্তপ্রায়। যে কয়েক জন এখনও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সিউড়ি ১ ব্লকের আলুন্দা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ইটাগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা লাল্টু চিত্রকর। তিনি নিজেই পটের ছবি আঁকেন, গান লেখেন এবং এলাকায় ঘুরে পরিবেশনও করেন। তবে এ কাজ থেকে রোজগার এখন প্রায় তলানিতে। এ বার ভোটের সময়ে কিছু রোজগারের আশায় বুক বেঁধেছিলেন এই প্রবীণ শিল্পী। কিন্তু সেই আশাও পূরণ হল না৷ ভোটে কোনও রাজনৈতিক দলের তরফ থেকেই পট তৈরি বা পটের গান বাঁধার বরাত পাননি লাল্টু।
এক সময় ভোট এলেই ডাক পড়ত লোকশিল্পীদের। বাউল, কীর্তনীয়া, পটুয়া, ঢাকি— সকলেই তাই পুজোর মরসুমের পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতেন ভোটের মরসুমের দিকেও। এখন সময় বদলেছে। বদলেছে প্রচারের কৌশলও। জনসভা বা রোড-শোতে বাউল, রণপা, ঢাকিদের কিছুটা কদর থাকলেও পটুয়াদের কার্যত দেখা মেলে না। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে লাল্টু বলেন, “প্রায় ৫০ বছর হয়ে গেল এই পেশার সঙ্গেই জুড়ে আছি। আগে ভোটের সময় সিপিএম আর কংগ্রেস দুই দলের থেকেই বরাত মিলত। তাদের দাবি মতো, পট বানাতে ও গান লিখতে হত। ভাল রোজগারও হত।”
তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই পরিস্থিতি বেশ খানিকটা পাল্টে গেছে বলে দাবি লাল্টুর। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘পটের গানের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে গিয়েছে বলেই হয়তো নেতারাও আর পটুয়াদের খোঁজ করেন না। লাল্টু বলেন, “গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময় সাঁইথিয়ার এক তৃণমূল নেতার কথা মতো একটি পট বানিয়ে ছিলাম। সেখানে গল্প ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি খেলায় হারিয়ে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদীকে। ‘খেলা হবে’ স্লোগানটা মাথায় রেখেই সেই পট বানিয়েছিলাম। চার দিন লেগেছিল কাজ শেষ করতে। কিন্তু কাজ শেষের পরে ওই নেতা আমাকে মাত্র ৫০০ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। আমি ওই টাকা নিই নি। সেটাই শেষ। আর আমার কাছে কোনও কাজ আসেনি।”
এ বার লোকসভা ভোট ঘোষণা হতেই ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে বানানো সেই পট নিয়েই রাস্তায় বের হচ্ছেন লাল্টু। যদি কোনও তৃণমূল নেতা পছন্দ করে তাঁর ওই পট ঠিক দামে কেনেন, তা হলে অন্তত তাঁর খাটনির দামটুকু উঠবে। আর তাঁর সেই পটের কাজ দেখে আবার কোনও দলের তরফ থেকে তাঁকে বরাত দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy