Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

গ্রহণ লেগেছে বাংলায়, ঝড় উঠবে, সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বারাসতে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

পর পর রাজ্যে তিনটি সভা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আরামবাগ ও কৃষ্ণনগরের সভায় তিনি সন্দেশখালি প্রসঙ্গে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে। তবে বুধবার নানা কারণে আক্রমণের ঝাঁজ ছিল অনেক বেশি।

বারাসতে ঝাঁজালো আক্রমণ মোদীর।

বারাসতে ঝাঁজালো আক্রমণ মোদীর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪৩
Share: Save:

এক সপ্তাহের মধ্যে তিন বার বাংলায় এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আরামবাগ ও কৃষ্ণনগরের সভায় তাঁর বক্তৃতায় এসেছিল সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন ‘মূল’ অভিযুক্তকে আড়াল করা হচ্ছে বলে। কিন্তু সে সব ছাপিয়ে গেল বারাসতে বুধবারের বক্তৃতা। ‘তৃণমূল পাপ করেছে’, ‘রাজ্যে সন্দেশখালি ঝড় উঠবে’ বলাই শুধু নয়, সেই প্রসঙ্গে বাংলা তৃণমূল নামক ‘গ্রহণের কবলে’ বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

তবে এর পিছনে কারণও ছিল। সন্দেশখালির জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় বুধবার সভা ছিল মোদীর। বারাসতেরই পাশের লোকসভা আসন বসিরহাটের অন্তর্গত এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির সব চেয়ে আলোচিত এলাকা সন্দেশখালি। সেখানে মূলত অভিযোগ উঠেছে যে, মহিলাদের উপরে ‘নির্যাতন’ চালিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। আর মোদীর বারাসতের সভা ছিল বিজেপির ‘মহিলা সম্মেলন’। এ সব কারণেই মোদীর বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে ছিল মহিলাদের কথা। সেই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে মহিলাদের উন্নয়নের কথা বলেছেন, তেমনই বাংলায় মহিলা নির্যাতন নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণও করেছেন। সেই আক্রমণেই দেখা গিয়েছে আগের দুই সভার চেয়ে ঝাঁজ অনেক বেশি!

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

ওয়াকিবহালদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আরামবাগ এবং কৃষ্ণনগরের তুলনায় বারাসতে মোদীর বক্তৃতা আরও জন আকর্ষণী হয়েছে। মোদীকে অনেকেই ‘পুরনো ফর্মে’ দেখতে পেয়েছেন। হিন্দি বক্তৃতার মধ্যে মধ্যে বাংলা বাক্য মিশিয়ে দেওয়া, সেই বাক্য গড়গড় করে না বলে প্রতিটি শব্দের উপর আলাদা করে জোর দেওয়া, যাতে এমন মনে হয় যে, তিনি অর্থ বুঝেই বাক্যটি বলছেন। মুখস্থ করে নয়। সেই সঙ্গে হাতের মুদ্রার পরিচিত ব্যবহার।

তার সঙ্গেই মোদী বক্তৃতায় ঢেলে দিয়েছেন আবেগ। বাংলার নারীশক্তির বন্দনা গেয়েছেন। সারদা দেবী, রানি রাসমণি থেকে মাতঙ্গিনী হাজরার কথা উল্লেখ করে ঢুকেছেন সন্দেশখালি প্রসঙ্গে। শুরুতেই বলেছেন, ‘‘তৃণমূল এই ভূমিতে নারীশক্তির উপর অত্যাচার করেছে। মা-বোনদের উপর অত্যাচার করে তৃণমূল ঘোর পাপ করেছে। সন্দেশখালিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে যে কারও মাথা লজ্জায় নুয়ে যায়। কিন্তু তৃণমূলের কিছু যায়-আসে না।’’

অভিযোগ ওঠার বহু পরে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ায় প্রথম থেকেই সরব রাজ্য বিজেপি। আদালতের নির্দেশে সিবিআইয়ের হাতে শাহজাহানকে তুলে দেওয়া নিয়ে সিআইডি গড়িমসি করছে বলে যখন অভিযোগ উঠেছে, তখন মোদীও সেই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন। শাহজাহানের নাম না নিলেও তৃণমূলকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘এরা অপরাধীকে বাঁচাতে পুরো শক্তি লাগিয়ে দিয়েছে! কিন্তু প্রথমে হাইকোর্ট, তারপর সুপ্রিম কোর্টে এরা ধাক্কা খেয়েছে।’’ যা থেকে স্পষ্ট যে, শাহজাহান মামলার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তিনি অবহিত। বুধবার যখন সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে, তখন সেই তথ্যও দেশের প্রধানমন্ত্রীর গোচরে রয়েছে!

তবে এর জবাবও দিয়েছে তৃণমূল। দলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এক্সে (পূর্বতন টুইটার) মোদীর উদ্দেশে চারটি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘আজ নারী শক্তি নিয়ে কথা বলেছেন। আপনাকে তিনটি প্রশ্ন— কেন দেশে প্রতি ঘণ্টায় ৫১টি মহিলা নির্যাতনের মামলা হয়? কেন বিজেপির মহিলা সাংসদ মাত্র ১৩ শতাংশ? কেন লোকসভা নির্বাচনের প্রথম প্রার্থী তালিকায় ১৯৫ জনের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ মহিলা? কেন মহিলা কুস্তিগিরদের উপরে যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ শাস্তি পান না?’’

প্রত্যাশিত ভাবেই তৃণমূল সাংসদ এমন প্রশ্ন তুললেও সন্দেশখালি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে মোদী সন্দেশখালিতে ‘নির্যাতিতা’ মহিলাদের সঙ্গেও বুধবার একান্তে দেখা করেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসতে সভামঞ্চের পিছনেই মোদীর বিশ্রামের জন্য তৈরি ঘরে কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে অন্য কাউকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের থেকে অভিযোগের বিবরণ শোনেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সেই সাক্ষাতের আগেই তাঁর বক্তৃতায় নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘গরিব, আদিবাসী, দলিত মা- বোনদের উপর তৃণমূলের নেতারা অত্যাচার করছেন। তৃণমূলের নিজেদের নেতাদের উপর ভরসা থাকলেও আমাদের মা-বোনদের উপর ভরসা নেই। তাই মা-বোনেরা রুষ্ট হয়েছেন।’’ এর পরেই মোদী হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘‘মা-বোনদের এই রাগ সন্দেশখালিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। পুরো রাজ্যে সন্দেশখালি ঝড় উঠবে।’’ সন্দেশখালির মহিলাদের প্রশংসা করে মোদী আরও বলেন, ‘‘তৃণমূলের মাফিয়ারাজ শেষ করতে বাংলার নারীশক্তি এগিয়ে এসেছে। সন্দেশখালি সেটা দেখিয়ে দিয়েছে।’’

রাজ্যে মহিলা ভোট টানতে না পারলে যে ভাল ফল করা যাবে না, তা বিলক্ষণ জানে পদ্মশিবির। সেই কারণেই মোদীকে এনে জাতীয় স্তরের ‘নারী শক্তি বন্দন’ কর্মসূচি করা হয়েছে বারাসতে। সেই মঞ্চ থেকে মহিলা ভোট বিজেপির ঝুলিতে টানার জন্য মোদী বলেছেন, ‘‘মা-বোনদের সুরক্ষা দিতে পারে শুধু বিজেপি। তুষ্টিকরণ এবং তোলাবাজদের নিয়ে কাজ করা তৃণমূল সরকার কখনও মা-বোনদের সুরক্ষা দিতে পারবে না।’’ পাশাপাশিই প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়ে নিজের সরকারের কৃতিত্বও বুঝিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘সঙ্কটের সময়ে যাতে তাড়াতাড়ি অভিযোগ জানানো যায়, সে জন্য মহিলা হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার এটা চালু হতে দিচ্ছে না! এরা কখনও মা-বোনদের জন্য ভাবে না।’’ মহিলাদের জন্য কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প রাজ্যে চালু না করার অভিযোগ তুলে বক্তৃতার শেষ অংশে ভোটের বার্তা দেন মোদী। বলেন, ‘‘বাংলার তৃণমূল নামের যে গ্রহণ লেগেছে তারা বাংলার বিকাশে বাধা দিচ্ছে। তাই এদের হটাতে হবে।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE