Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

রামমন্দির উদ্বোধনের পরেই বিজেপিতে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তাপস, বৃত্ত সম্পূর্ণ ‘জয় শ্রীরাম’ দিয়ে

বিজেপির পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, রামমন্দির উদ্বোধনের পর জানুয়ারি মাসের শেষ দিকেই তাপস যোগাযোগ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গে। তৃণমূলে থাকাকালীন তাপস-শুভেন্দুর সম্পর্ক ভাল ছিল।

Tapas Roy had expressed his desire to join the BJP after the inauguration of Ram Mandir

তাপস রায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অমিত রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫১
Share: Save:

বর্ষীয়ান রাজনীতিক তাপস রায়ের বিজেপিতে যোগদানের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছিল গত জানুয়ারি মাসেই। বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রে তেমনই খবর। তার কাছাকাছি সময় থেকেই তাপস বিভিন্ন সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে গুটিয়েও নিতে থাকেন তৃণমূলের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে। মাসখানেক আগে থেকে তিনি নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে নিয়মিত যাতায়াতও কমিয়ে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাপস তৃণমূলের বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে বুধবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার না-করলেও বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, রামমন্দির উদ্বোধনের অব্যবহিত পরেই তাপস বিজেপিতে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, তত দিনে, তাপসের ঘনিষ্ঠদের কথায়, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তল্লাশির পরে তৃণমূল সম্পর্কে তাঁর ‘মোহভঙ্গ’ হয়েছিল। গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, তার পরেই পদ্ম নেতৃত্বের সঙ্গে যোগযোগ শুরু করেছিলেন বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক। উদ্বোধনের পরে পরেই সপরিবার অযোধ্যা গিয়ে রামমন্দির দেখতে যাওয়ার বাসনার কথা ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন তাপস। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে তাঁর অতি ঘনিষ্ঠেরাও টের পাননি তাঁর দলবদলের ইচ্ছের কথা।

বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, রামমন্দির উদ্বোধনের পর জানুয়ারি মাসেই তাপস যোগাযোগ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। তৃণমূলে থাকাকালীন তাপস-শুভেন্দুর সম্পর্ক ভাল ছিল। কারণ, শুভেন্দুর ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাপসের কাছেই। সেই সম্পর্কের সুবাদেই দলবদলের আলোচনার সূত্রপাত। তাপসকে দলে যোগদান করানোর অনুমতি পেতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু। কিন্তু ২০২১ সালের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতার নিরিখে বিজেপির দিল্লির নেতারা এ ক্ষেত্রে একটু সাবধানী পদক্ষেপ করতে চাইছিলেন। তাই তাপসকে যোগদান করানোর আগে শুভেন্দু এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছিল।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ভোট-পরবর্তী ‘সন্ত্রাস’-এর ঘটনায় শাসক তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। বিজেপির অভিযোগ, ওই ‘সন্ত্রাস’-এ মৃত্যু হয়েছিল ৫০-এর বেশি বিজেপি কর্মীর। আরও অভিযোগ, মগরাহাট পশ্চিমের বিজেপি প্রার্থী মানস সাহা ওই ‘সন্ত্রাস’-এর বলি হয়েছিলেন। তাই তৃণমূলের যে কোনও নেতারই যোগদান নিয়ে আগে মঙ্গল এবং শুভেন্দুকে দলের জেলা ও মণ্ডল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে মতামত নিতে হবে। তাপসের ক্ষেত্রেও তেমনই করা হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহেই উত্তর কলকাতার বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে ইতিবাচক মতামত পান তাঁরা। শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়, তাপসকে দলে নিলে উত্তর কলকাতার নেতা-নেত্রীদের কোনও আপত্তি নেই। এই পর্বে বরাহনগর কেন্দ্রের নেতৃত্বেরও মতামত নেন শুভেন্দু-মঙ্গলেরা। সূত্রের খবর, ‘ইতিবাচক’ মতামত পাওয়া পরেই তা জানিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তাপসকে যোগদান করানোর অনুমতি চাওয়া হয়।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিল্লি গিয়ে তৃণমূলের নেতাদের দলে দলে যোগদান ও জেলায় জেলায় যোগদান মেলার আয়োজনের অভিজ্ঞতা ভাল হয়নি বিজেপি নেতৃত্বের। তাই এ বার যোগদানের জন্য একটি কমিটি গড়ে তার মাথায় বসানো হয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে। জানিয়ে দেওয়া হয়, পশ্চিমবঙ্গে কোনও যোগদানের বিষয় এলে তা বিবেচনা করবে শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছ থেকে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, এমন সব পর্যালোচনার মধ্যে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব একটি সমীক্ষক সংস্থাকে দিয়ে উত্তর কলকাতায় তাপসের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে একটি সমীক্ষাও করিয়েছিলেন। সেই সমীক্ষায় তাপস প্রসঙ্গে ‘সন্তোষজনক’ রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছিল বলেই ওই সূত্রের বক্তব্য। সেই অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে তাপসকে যোগদান করানোর বিষয়ে শুভেন্দুকে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়।

শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদনের পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু তাপসকে জানিয়ে দেন, বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর মতো ‘প্রবীণ ও অভিজ্ঞ’ নেতাকে দলে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। মার্চ মাসেই তাঁকে যোগদান করাতে চায় রাজ্য বিজেপি। গত ২ মার্চ, শনিবার বিজেপি নেতৃত্বকে নিজের সম্মতি জানান তাপস। নতুন দলে যোগদানের আগে ১ মার্চ, শুক্রবার দল এবং বিধানসভার যাবতীয় দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। নৈতিকতার কারণে তাপস বিধায়ক পদে থাকতে চাননি। সেই পরিকল্পনা মতোই সোমবার বিধানসভায় গিয়ে বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন পাঁচ বারের এই বিধায়ক। ‘পদ্ধতিগত’ কারণে এখনও তাঁর ইস্তফা গৃহীত হয়নি। তা না-হলেও বুধবার বিকেলে বিধাননগরে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে গেরুয়া উত্তরীয় গলায় চাপিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে তাপস শামিল হয়েছেন বিজেপিতে। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা যাকে আখ্যা দিচ্ছেন, রামমন্দির উদ্বোধনের পর শুরু হওয়া রাজনৈতিক বৃত্ত সম্পন্ন হল রামের নামে জয়ধ্বনি করে শেষ হওয়া বলে।

রাজনীতিতে তাপসের ভাবমূর্তি মোটের উপর ‘স্বচ্ছ’। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে এত বিচার করা হল কেন? এত সময়ই বা নেওয়া হল কেন? রাজ্য বিজেপির এক নেতার জবাব, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের পরামর্শে বিজেপিতে যোগদানের দরজা হাট করে খুলে দেওয়া হয়েছিল। তার ফল কী হয়েছে, তা সকলেই দেখেছেন। মুকুলদা তৃণমূলে ফিরে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছেন। আর কৈলাসজিকে বাংলা ছেড়ে গিয়ে মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে জায়গা করতে হয়েছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ওই সব অভিজ্ঞতার থেকেই বিজেপি এ বার যোগদানের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সর্তক। তাই নেতারা বললেই কাউকে হুট করে দলে নেওয়া হবে না। কারণ, শীর্ষ নেতৃত্বের তরফেও সব সময় আলাদা নজরদারি থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tapas Roy TMC BJP Ram Mandir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE