E-Paper

তিন আসনের জট ছাড়াতে বৈঠকে বিজেপি নেতৃত্ব

শনিবার সন্ধ্যা থেকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠক বসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪৪
BJP

—প্রতীকী ছবি।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকের আগে পশ্চিমবঙ্গের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আসন নিয়ে জট ছাড়াতে শনিবার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠকে বসলেন।

বাংলায় এখনও ২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি। তার মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে জট এখনও পুরোপুরি খোলেনি বলে বিজেপির একটি সূত্রের দাবি। আসন তিনটি হল, দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও মেদিনীপুর। তিনটি আসনেই ২০১৯ সালে জিতেছিল বিজেপি। ফলে আসনগুলি দখলে রাখার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে দল। অন্য দিকে, তিন ক্ষেত্রেই বিদায়ী সাংসদকে নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যা থেকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠক বসে। তার আগে বিজেপি নেতারা দিল্লিতে দলের সদর দফতরে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, তিনটি আসনে জট ছাড়িয়ে বিজেপি রবিবার বা হোলির পরে মঙ্গলবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিতে পারে। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী তালিকা নিয়ে বৈঠকে বসার আগেও মোদী-শাহ-নড্ডার দফায় দফায় বৈঠক হয়।

দার্জিলিং আসনে প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এ বার বিজেপির প্রার্থী হবেন বলে বহু দিন ধরেই ইঙ্গিত মিলছে। গত কয়েক বছর ধরেই পাহাড়বাসীদের একাংশের মধ্যে বর্তমান সাংসদ রাজু বিস্তাকে নিয়ে অসন্তোষ বেড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে পাওয়া তো যায়ই না, তার উপরে সংসদে কয়েক বার বিবৃতি দেওয়া এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের হাতে দাবিপত্র দেওয়া ছাড়া পাঁচ বছরে পাহাড়ের জন্য তিনি কিছুই করেননি। এমনকি পাহাড়ের দীর্ঘ দিনের দাবি যে ১১ জনজাতির জন্য তফসিলি জনজাতি মর্যাদা, তা-ও এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

এই অবস্থায় নরেন্দ্র মোদীর পছন্দ ও তাঁর আস্থাভাজন বলে পরিচিত শ্রিংলার নাম সামনে আসে। সিকিমের বাসিন্দা এই প্রাক্তন আমলা কিছু দিন ধরে দার্জিলিং জেলায় যাতায়াত বাড়িয়েছেন। সূত্রের খবর, দার্জিলিংয়ের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নামে সিলমোহর হলেই বিজেপিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিয়ে ময়দানে নেমে পড়বেন শ্রিংলা। অন্য দিকে রাজু বিস্তাকে প্রার্থী করা না হলে পাহাড়ে বিজেপির কয়েক জন পদাধিকারী দাবি করেছেন, তাঁরা সকলে মিলে পদত্যাগ করবেন। দার্জিলিঙের বিধায়ক নীরজ জিম্বার মতো রাজু-ঘনিষ্ঠও নিজেদের বৃত্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাজু প্রার্থী না হলে পুরো জিএনএলএফ বসে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সব দিক ভেবেচিন্তে রাজুর দিকেই পাল্লা ভারী, বৈঠক থেকে এমন ইঙ্গিত মিলেছে বলে রাতে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

মেদিনীপুর আসনে ২০১৯ সালে জিতেছিলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু গত এক বছর ধরে তিনি দলের কোনও পদেই নেই। দলেরই একাংশের মতে, পদে না থাকায় এখন বিজেপির কোনও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেই দেখা যায় না দিলীপকে। সেই অংশটির মতে, দিলীপের মুখে লাগাম পরানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কথা শোনেননি। তার উপরে খড়্গপুরের বিধায়ক এবং এ বারে ঘাটালে বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিলীপের ‘দূরত্ব’র কথা অনেকেই জানেন। হিরণ আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দিলীপ-শুভেন্দুর ঠান্ডা সম্পর্ক নিয়েও দলে গুঞ্জন আছে। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিন ধরে দিলীপ ছাড়াও মেদিনীপুরে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আরও অনেকেরই নাম শোনা যাচ্ছে। সেই তালিকায় আছেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা ভারতী ঘোষও। দিলীপ অবশ্য সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের বদলে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত খড়্গপুরে বাড়ি নিয়েছেন। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা হলেও তাঁর মেদিনীপুরে প্রার্থী হতে অসুবিধা নেই, তবু তাঁর ঘনিষ্ঠদের মতে, তিনি যে কেন্দ্রে বাড়তি সময় দিচ্ছেন, সেটা বোঝাতেই এই বাসা বদল।

রায়গঞ্জের বিদায়ী সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীকে নিয়েও জট রয়েছে। ওই এলাকায় বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ীর সঙ্গে দেবশ্রীর তীব্র সংঘাত রয়েছে। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের মুখে বিশ্বজিৎকে সরিয়ে জেলায় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় দেবশ্রী-ঘনিষ্ঠ বাসুদেব সরকারকে। তখন থেকেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সম্প্রতি এই গোলমাল তুঙ্গে উঠেছে। মাস দু’য়েক আগে লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জে দেবশ্রীর বদলে জেলার কোনও ‘ভূমিপুত্র’ বা ‘ভূমিকন্যা’কে প্রার্থী করার দাবিতে রায়গঞ্জ শহরে ‘দণ্ডি-যাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেন বিশ্বজিৎ ও তাঁর অনুগামীরা। এর পরেই বিশ্বজিৎকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিজেপি। একই দাবিতে কয়েক দিন আগে রায়গঞ্জে বিজেপির জেলা কার্যালয়ের সামনে পর পর দু’দিন অবস্থান বিক্ষোভ করেন বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতা-নেত্রীরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 BJP West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy