Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

প্রধানমন্ত্রী হবেন রাহুল, আশা ছেড়েছে ওয়েনাড়

পাঁচ বছর আগে চমক দিয়ে রাহুল যখন উত্তর কেরলের টিলাভূমির উপরে ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন সর্বত্র একটা উত্তেজনার আবহ।

ভোট মরসুমে ওয়েনাড় জেলা কংগ্রেসের দফতর। কলপেট্টায়।

ভোট মরসুমে ওয়েনাড় জেলা কংগ্রেসের দফতর। কলপেট্টায়। — নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলপেট্টা (ওয়েনাড়) শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১১
Share: Save:

আগে হলে বলা যেত, সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। এখন আর তা বলার জো কই? বলতে গেলেই অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রাম ফিরে এসেছেন রামলালা হয়ে, নতুন অযোধ্যায়। কিন্তু ওয়েনাড়ে অবশ্য রাহুল গান্ধীর জন্য আগের বারের সেই পুরনো ‘হাওয়া’ এ বার অন্তত এখনও পর্যন্ত ফিরতে দেখা যাচ্ছে না।

পাঁচ বছর আগে চমক দিয়ে রাহুল যখন উত্তর কেরলের টিলাভূমির উপরে ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন সর্বত্র একটা উত্তেজনার আবহ। সাবেক আমল থেকে কেরলের রাজনৈতিক জমি বিজেপি-বিরোধী। পাঁচ বছর আগে দক্ষিণী এই রাজ্যের মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন, কেন্দ্রে বিজেপিকে সরিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে দেশের সরকার হলে, রাহুলই হবেন প্রধানমন্ত্রী। অঙ্ক কঠিন, কিন্তু তবু তা মিললে রাহুলই হবেন সরকারের মুখ। কেরল থেকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী দেখার আশায় নিজের কেন্দ্রে রাহুল তো বটেই, সারা রাজ্যে ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৯টিতেই কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের প্রার্থীদের জিতিয়েছিল জনতা। কিন্তু এ বার?

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

সুলতান বাতেরির বাজারে, ওয়েনাড়ের সদর শহর কলপেট্টার নির্বাচনী কার্যালয়ে, কিংবা তিরুভামবাড়ির ভরা রাস্তায় এ বার সেই রব নেই। এমনিতেই ভোটের বাজার বেশ চাপা। প্রশ্ন করলে সুলতান বাতেরির পোশাক ব্যবসায়ী মোহনদাস বলছেন, ‘‘আগের বার ব্যাপারটা অন্য রকম ছিল। এখান থেকে সাংসদ হয়ে রাহুল গান্ধী তো লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দলের নেতাই হননি। কংগ্রেসের সভাপতিও থাকেননি। এখন আর প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে ভাবছেন না কেউ।’’

কলপেট্টার সিপিআই নেতা বেবি কাস্ত্রো আরও স্পষ্ট করে বোঝাচ্ছেন, ‘‘রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে, এই আহ্বানে গত বার বামপন্থী অনেক মানুষও ওঁকে ভোট দিয়েছিলেন। চার লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছিলেন রাহুল। কিন্তু লোকে পরে দেখেছে, সীমানাবর্তী এই এলাকা থেকে মহীশূরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় রাতের গাড়ি চলাচলে কর্নাটক সরকারের নিষেধাজ্ঞায় সামান্য ছাড়ের ব্যবস্থাটুকুও উনি করতে পারেননি। বাঁধের জলের বেলাতেও তা-ই। অথচ এখন কর্নাটকে ওঁর দলেরই সরকার!”

ভোটের প্রচারে বিজেপি এবং কেরলে বামেদের লাগাতার আক্রমণ করলেও রাহুল নিজে কখনও তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে কিছু বলেন না। কেরলে রাহুলের মূল প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে কেন ইডি-সিবিআই ধরছে না, কেন তিনি জেলে যাচ্ছেন না? কিন্তু বাকিরা? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের ভি ডি সতীশনের বক্তব্য, “এখন জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ আছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী-পদ নিয়ে বিরোধী দলগুলির কারও কিছু বলা সমীচীন নয়। বরং, রাহুলকে সংসদ থেকে বরখাস্ত করার জবাব এ বার ভোটে দিতে হবে।”

প্রত্যাশিত ভাবেই এই পরিস্থিতির পূর্ণ ফায়দা তুলছে বিজেপি। রাহুলের প্রধানমন্ত্রিত্বের ভাবনা দূর অস্ত, তাঁর রাজনৈতিক স্থিরতা নিয়েই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে তারা। ওয়েনাড়ে রাহুলের বিরুদ্ধে বিজেপি এ বার প্রার্থী করেছে দলের রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনকে। বাংলায় যেমন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী বাছাইয়েই বিজেপির ময়দান ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন আছে, এখানে জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও বার্তা ঠিক উল্টো। সেই সুরেন্দ্রনকে পাশে নিয়ে রোড-শো করতে এসে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা বলেছেন, “দিল্লিতে সনিয়া গান্ধী এবং তাঁর নিজের মাঝের আসনটি যিনি সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজাকে দেন, সেই রাজার স্ত্রী অ্যানির বিরুদ্ধে ওয়েনাড়ে লড়ছেন রাহুল! ওঁর রাজনৈতিক অবস্থানে কোনও স্থিরতা আছে? ওঁরাই বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই এখন রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া। সবটাই দ্বিচারিতায় ভর্তি।”

সিপিআই প্রার্থী অ্যানির সাফ কথা, “কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট আগে ছিল না, এখনও নেই। রাহুলই অমেঠী ছেড়ে ওয়েনাড়ে এসেছেন। সাংসদ হলেও এই কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর আন্তরিক যোগ তৈরি হয়নি। আমি এখানে অতিথি সাংসদ হতে আসিনি।” বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রনও মনে করেন, “অমেঠীতে আগে বিরাট ব্যবধানে রাহুল জিতেছেন। তার পরে সেখানে কী হাল হয়েছে, দেখা যাচ্ছে। অমেঠীতে যদি তিনি হারতে পারেন, ওয়েনাড়েও তাঁকে হারানো যায়।”

তা হলে কি রাহুলের লোকসভায় যাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে? পাঁচ বছর আগের মতো প্রধানমন্ত্রিত্বের রব না থাকলেও ওয়েনাড়ের সাতটি বিধানসভাতেই ইউডিএফ শক্তিশালী। মুসলিম এলাকায় বিশেষত মুসলিম লিগ। খ্রিস্টান সংখ্যালঘু ভোটও আছে। অঙ্কের বিচারে অন্তত অমেঠীর চেয়ে ঢের বেশি নিরাপদ ওয়েনাড়।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE