Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় ভারসাম্যের নির্ভুল ছাপ, কথা রইল নেত্রী-সেনাপতি দু’জনেরই, ‘যুগলবন্দি’ শুরু

কোন প্রার্থী নেত্রীর? কোন প্রার্থী সেনাপতির? ৪২ আসনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা হতেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলে। প্রবীণ বনাম নবীন লড়াইয়ে কার জয় মিলেছে সে আলোচনাও চলছে দলের ভিতরে-বাইরে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ২২:৫৮
An image of Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

গত কয়েক দিন ধরে আলোচনা ছিল তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ কেমন হবে তা নিয়ে। রবিবার সকাল থেকে ছিল ব্রিগেডের ভিড় এবং লোকসমাগম নিয়ে উন্মাদনা। কিন্তু ব্রিগেডে তৃণমূলের ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে বদলে গিয়েছে পুরো আলোচনার বিষয়ই। সেই আলোচনায় এ-ও জল্পনায় যে, এই প্রার্থিতালিকায় কার ‘ছাপ’ বেশি? দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের না সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের?

প্রার্থিতালিকা বিশ্লেষণ করলে অবশ্য দেখা যাচ্ছে ‘ভারসাম্য’ বজায় আছে। সেখানে যেমন প্রবীণ সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা রয়েছেন, তেমনই রয়েছে তরুণ এবং অভিষেকের বর্ণনায় ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ দেবাংশু ভট্টাচার্য বা উচ্চশিক্ষিত শাহনওয়াজ আলি রায়হান অথবা সর্ব ক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী প্রকাশ চিক বরাইকরা।

বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের অন্দরে প্রবীণ বনাম নবীন লড়াই চলছে। অভিষেক ‘নতুন তৃণমূল’ স্লোগান তোলার পরেই সেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, ঘাসফুল শিবিরে এ বার প্রবীণদের দিন শেষ। যদিও অভিষেক ‘নতুন তৃণমূল’ বলতে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে আধুনিকতার কথা বলেছিলেন। যার ছবি দেখা গিয়েছে রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশের আয়োজনে।

তবে পাহাড় থেকে সাগরের কোথায় কে প্রার্থী হয়েছেন, সেই তালিকা দেখে দলের অন্দরে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে তো বটেই। সেখানে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, দলের নেতারা মনে করছেন, নেত্রী-সেনাপতির ‘যুগলবন্দি’তেই প্রার্থিতালিকা তৈরি হয়েছে। প্রবীণদের মধ্যে যেমন রয়ে গিয়েছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মালা রায়েরা, তেমনই বাদ পড়েছেন নুসরত জাহান, মিমি চক্রবর্তী, অপরূপা পোদ্দারেরা। সাংসদ হিসেবে ‘পারফরম্যান্স’-এর নিরিখে মিমি-নুসরতকে অভিষেক এ বার আর চাননি। তবে তৃণমূলের টলিউড-নির্ভরতা সে ভাবে কমেনি। এই বিষয়টি নিয়েও দলের অন্দরে বিতর্ক ছিল। অভিষেক বরাবরই চেয়েছেন, তারকা হলেও তাঁকে ১০০ শতাংশ দলের কাজে ব্যয় করতে হবে। যেমন তিনি মনে করেন, শতাব্দী রায় আর ‘অভিনেত্রী’ নন, ‘নেত্রী’ হয়ে গিয়েছেন। সাংসদ হিসেবেও তিনি দক্ষ। যেমন যাদবপুরের প্রার্থী হওয়ার পর সায়নী ঘোষ বলেছেন, ‘‘আমি তো গত আড়াই বছরে তিনটে সিনেমা করেছি। সভা করেছি ৩০০টা। আমি আর অভিনেত্রী নেই, সভানেত্রী হয়ে গিয়েছি!’’ কিন্তু সেখানেও ‘ভারসাম্য’ রাখতে হয়েছে। যেমন দেবকে প্রার্থী না-করলে ঘাটাল আসন হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা অভিনেত্রী জুন মালিয়াকেও প্রার্থী করতে হয়েছে। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদির পছন্দ’।

তৃণমূলে এ বার দু’জন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হয়েছেন। এক জন প্রাক্তন ফুটবলার তথা বর্তমান সাংসদ। অন্য জন প্রাক্তন আইপিএস। ফুটবলার প্রসূন ‘প্রবীণ’ হলেও টিকে গিয়েছেন। পুলিশ প্রসূন আবার ধরে নিয়েছিলেন, তিনি বালুরঘাটে লড়বেন। তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে মালদহ উত্তরের।

ব্যারাকপুরের প্রার্থী তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা বিশ্বজিৎ দাস, কৃষ্ণ কল্যাণী বা মুকুটমণি অধিকারীরাও তা-ই। প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের সঙ্গেও যোগাযোগের উদ্যোগ মূলত অভিষেকেরই। যেমন তাঁর যোগাযোগ আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদের ক্ষেত্রেও। রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইককে প্রার্থী করা হয়েছে আলিপুরদুয়ার আসনে। তাঁকেও অভিষেকই দলে এনেছিলেন। মালদহ দক্ষিণের প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হান অক্সফোর্ড থেকে শিক্ষিত। তিনিও সেনাপতির পছন্দের। তবে প্রার্থিতালিকা থেকে গত বারের যে সব জয়ীদের নাম বাদ গিয়েছে, তা হয়েছে নেত্রী-সেনাপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতেই।

লোকসভা ভোটের বেশ কয়েক মাস আগে নেত্রী এবং সেনাপতির ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছিল দলের অন্দরে। তখন অনেকেই শঙ্কিত হয়েছিলেন। দল পরিচালনা নিয়ে অভিষেকের নৈতিক অবস্থানের সঙ্গে মমতার মিলমিশ হচ্ছিল না বলেই দলের প্রথম সারির নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় জানাচ্ছিলেন। তবে সন্দেশখালির ঘটনায় ময়দানে নামেন অভিষেক। সূত্রের খবর, নেত্রীই সেনাপতিকে সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পর থেকেই ‘দূরত্ব’ কমতে থাকে। যা ফলিত স্তরে রূপ পেয়েছে দলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণায়। লক্ষ্যণীয়, মমতা নিজে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেননি। ঘোষণা করেছেন অভিষেক। মমতা প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে র‌্যাম্পে হেঁটেছেন। আর তার আগে নিজের বক্তৃতায় বলেছেন, ‘‘কয়েক জনকে টিকিট দিতে পারিনি। তবে তাঁদের আমি বিধানসভা ভোটে টিকিট দেব। তা ছাড়া, দলেরও অনেক পদ আছে। তাঁদের নিশ্চয়ই সেই সম্মান দেওয়া হবে।’’

Lok Sabha Election 2024 TMC Mamata Banerjee Abhishek Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy