Advertisement
E-Paper

হারের কারণ ‘কাঠিবাজি’! পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে তিনি তৈরি বলে দলকে বার্তাও দিয়ে রাখলেন দিলীপ ঘোষ

মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর। ২০১৯ সালে এই দুই আসনে বিজেপি জিতলেও বর্ধমান-দুর্গাপুর ছিল মেদিনীপুরের তুলনায় ‘কঠিন’ আসন। নতুন কেন্দ্রে গিয়ে দিলীপের লড়াইও সহজ ছিল না।

আনন্দবাজার অনলাইন

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ ১৬:২৮
What will be the future strategy of BJP leader Dilip Ghosh after his deafet in Lok Sabha Election 2024

দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

সাধারণ পরাজয় নয়। বড় মাপের হার। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ভোটে হারার পরে আপাতত নিজেকে ‘গৃহবন্দি’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, তাঁকে হারানোর দলেই ‘চক্রান্ত’ হয়েছিল। সরাসরি কারও নাম না-করলেও তিনি মনে করেন, ‘কাঠিবাজি’ করেই তাঁর আসন বদলে দেওয়া হয়েছিল। সেই কারণেই তাঁকে হারতে হয়েছে। বুধবার দিলীপ বলেন, ‘‘আমি হারিনি। বিজেপি হেরেছে।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘আমাকে যে কাঠি করে মেদিনীপুর থেকে সরানো হয়েছে, সেটা তো সকলেই জানে! মাঝখান থেকে আমাকে হারাতে গিয়ে মেদিনীপুর আসনটাও হাতছাড়া হয়ে গেল!’’ এর পরে কী করবেন তিনি? জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘আগে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় দেখি। তার পরে আমি আমার সিদ্ধান্ত নেব। সকলকে জানিয়েই নেব।’’

মঙ্গলবার গণনার শুরুতে পিছিয়ে থাকলেও আশায় ছিলেন দিলীপ। ভেবেছিলেন দুর্গাপুরের দিকে গণনা শুরু হলে জয়ে ফিরবেন। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে যান, ফেরা সম্ভব নয়। ব্যবধান এক লাখের উপরে উঠে যেতেই গণনাকেন্দ্র ছেড়ে চলে যান দিলীপ। রাতেই বর্ধমান থেকে চলে আসেন কলকাতায়। আপাতত কয়েকটা দিন নিউ টাউনে নিজের ফ্ল্যাটেই কাটাবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি। একই সঙ্গে ঠিক করেছেন এখনই দলকে কিছু বলবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ হয়েছে বলে দাবি করলেও দিলীপ কারও নাম নিতে চাননি। তবে তাঁর অনুগামী বিজেপি নেতারা স্পষ্ট করেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে আঙুল তুলছেন। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘দিলীপদাকে মেদিনীপুর থেকে সরানোর পিছনে কার হাত ছিল সকলেই জানে। নিজের পছন্দের প্রার্থীর (অগ্নিমিত্রা পাল) হাতে দিলীপদার তৈরি করা মেদিনীপুরের জমি তুলে দিতে চেয়েছিলেন। মাঝখান থেকে আম গেল, ছালাও গেল। দিলীপদার পরাজয় দলের বড় ক্ষতি করে দিল।’’

আসন বদলের জন্যই তাঁর পরাজয় কি না, সে প্রশ্নে দিলীপ বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে থেকেই অনেকে এই প্রশ্ন তুলেছেন। আমি কিছু বলতে চাই না। আমি শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মী। কোথায় কার কী ভূমিকা ছিল, সে সব আমি ভাবতে চাই না। দল আমাকে লড়তে পাঠিয়েছিল। আমি সাধ্যমতো লড়েছি। এর বেশি তো কিছু করতে পারি না। আর রাজনীতিতে ওঠানামা থাকেই। তৃণমূলও তো অনেক তলানিতে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে অনেক বড় জায়গায় নিয়ে এসেছেন। হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি যে লড়েছি সেটা তো ঠিক। কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। গোটা রাজ্যে দলের এমন কেন হাল, সেটা নিয়েও আমার ভাবার কথা নয়। দল ভাববে। যখন আমার উপরে দায়িত্ব ছিল, আমার হাতে অনেক ক্ষমতা ছিল। কিন্তু এ বার তো নিজের কেন্দ্রে লড়া ছাড়া আরও কোনও কিছুই আমার হাতে ছিল না।’’

রাজনীতিতে আসার পর এই প্রথম ভোটে হারলেন দিলীপ। শুরুতেই দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক, দুই দফায় প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর রাজ্য সভাপতি এবং পরে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি থেকেছেন। খড়্গপুর সদর বিধানসভা আসনে প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েই হারিয়েছিলেন ছ’বারের কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহনপালকে। তিন বছরের মধ্যে মেদিনীপুর লোকসভা আসনে জয়। এ বারের দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে মেদিনীপুর আসন নিশ্চিত পাচ্ছেন ধরে নিয়ে অনেকটাই সময় দিয়েছিলেন ওই কেন্দ্রে। রাজ্য বা সর্বভারতীয় দায়িত্ব চলে যাওয়ার পরে আরও বেশি করে সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হতে পারেননি। রাজ্য বিজেপির একাংশের ইচ্ছায় দিলীপকে বর্ধামান-দুর্গাপুরে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই সময়ে দিলীপ কিছুটা বেঁকে বসলেও তাঁর মূল সংগঠন আরএসএস দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বলে। সে সব কথা মনে করিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘সবেই তো নির্বাচন শেষ হয়েছে। আমি সঙ্ঘের পূর্ণ সময়ের কর্মী। সংগঠনের ইচ্ছাতেই রাজনীতিতে এসেছি। দল সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছে। সভাপতি বানিয়েছে। এখন আমাকে নিয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে। নয়তো আমি নিজের ডিসিশন জানিয়ে দেব।’’

দিলীপের আমলেই রাজ্যে বিজেপির শক্তি বেড়েছে। এখন ‘কঠিন’ দিনে তিনি তাঁকে যদি আবার রাজ্যে দলের দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তিনি মেনে নেবেন কি তিনি? জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘যদি দিয়ে কোনও কথা হয় না। আগে হোক, তার পরে ভেবে দেখব। আমার শর্তও দল মেনে নেবে এমনটা তো না-ও হতে পারে।’’ কী কী শর্ত দেবেন, তা নিয়ে অবশ্য দিলীপ একটি কথাও বলতে চাননি। তিনি যে বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতৃত্বকে এবং জেলা স্তরের বিভিন্ন বদল মানতে পারছেন না, তা অতীতে প্রকাশ্যেই বলেছেন দিলীপ। তবে তিনি থাকলেও এমন ফল হতে পারত বলে মনে করেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘এমন ফল কেন হল সেটা আলোচনা করে দেখতে হবে। আমি নেতৃত্বে ছিলাম না বলেই সাফল্য আসেনি, এমন ভাবার কারণ নেই। আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। সে সব নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।’’

কবে বিপর্যয়ের কারণ বিশ্লেষণ হবে, তা এখনও ঠিক করেনি রাজ্য বিজেপি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজে জিতলেও তা নাটকীয় লড়াইয়ের পরে। তবে দলের ফল নিয়ে শীঘ্রই বিশ্লেষণে বসবেন জানিয়ে বুধবার সুকান্ত বলেন, ‘‘আমি আপাতত নিজের কেন্দ্রেই থাকব। বিশ্লেষণ তো করতেই হবে। আমরা বসব। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা হবে।’’ তবে দিলীপের আসন বদলে যাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। যদিও বিজেপির অন্দরে দিলীপের হার নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে। দলের ‘আদি’ নেতারা যে ক্ষুব্ধ, তা টের পাওয়া যাচ্ছে।

Dilip Ghosh BJP Leader Lok Sabha Election BJP Candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy