ভূতপ্রেতে যাঁরা বিশ্বাস রাখেন, তাঁরা জানেন সন্ধে সাড়ে ছ’টা ভাল সময় নয়। গ্রামের একেবারে প্রান্তে যে বটগাছটা আছে, সেই গাছের তলা ওই সময় থেকে এড়িয়ে চলার উপদেশ দেন অগ্রজেরা। গুগাবাবা-য় অন্ধকার নেমে আসা বাঁশবনে যখন পালে পালে ভূতেরা নেমে এসেছিল, কেউ বলে দেয়নি ঠিকই, কিন্তু, নির্ঘাত তখন সাড়ে ছ’টাই বেজেছিল। আলো চলে যাচ্ছে, অন্ধকার নেমে আসছে, মানুষেরা ঘরে ঢুকে যাচ্ছে, চরাচর জুড়ে এ বার ভৌতিক, নিদেন পক্ষে আধিভৌতিক বৃত্তান্ত।
চরাচরের নিয়মই যদি এটা হয়, তবে পশ্চিম মেদিনীপুরকে দোষ দিয়ে লাভ কী! সন্ধে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত ভোট পড়ার একটা হিসাব আসতেই পারে, কিন্তু সে তো মানুষের হিসাব। আচমকা ভোটের হার এই যে তিন শতাংশ বেড়ে গেল, এই যে বুথের পর বুথে নব্বই শতাংশেরও বেশি ভোট পড়ে গেল, বিকালেও খালি থাকা বুথ চট করে সন্ধ্যার পর সেজেগুজে, ফিটফাট হয়ে লেটার মার্কস নিয়ে হাজির হল— ক্ষুদ্র মানবিক দৃষ্টিতে একে বিচার করতে গেলে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই কাণ্ড আসলে অতি মানবিক। এবং সে জন্যই রক্তপাতহীন, কোলাহলরহিত আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় অজস্র জল মিশে যায় দুধে। যেখানে প্রতিরোধ, অতি মানবিকতার খাতিরে এই বিজ্ঞান সেখানে অমানবিক। জল ট্যালটেলে দুধে সেখানে রক্তের লালও এসে মেশে।
রাজ্যে প্রথম পর্যায়ের ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুর অথবা বাঁকুড়ার কিছু প্রান্তে সাড়ে ছ’টার পর তিন শতাংশের আশ্চর্য অঙ্ক বৃদ্ধির রহস্যভেদের চেষ্টা অতএব বৃথা। ভূতেরা তাথৈ নৃত্য জুড়েছেন! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভায় ঘুরে ঘুরে ক্ষমা চাইবেন আরও। গালে চড় মারার নিদান আসবে আরও। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে কেউ বেশি বোঝেন না, মানুষ বিমুখ হচ্ছে। অতএব প্রকাশ্যে থাকবে নিবেদনের পালা। অপ্রকাশ্যে, ভুতুড়ে কাণ্ড।
কে না জানে, মানুষ যখন বিমুখ হয়, ভূতেরা জেগে ওঠে তখনই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy