Advertisement
E-Paper

নড়বড়ে দল নিয়েই তিনি ময়দানে

ভোটের ডেথ ওভারে রবি ঘোষের সামনে এখন ৯ রান তোলার টার্গেট! কিন্তু তাঁর হয়ে ব্যাট করার জন্য বিরাট কোহালি কিংবা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো কেউ নেই। থাকার মধ্যে আছেন ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে আসা উদয়ন গুহ আর দীর্ঘদিন রাজনীতির ময়দান থেকে নীরবে থাকা মিহির গোস্বামী। ইতিউতি আছেন আরও কয়েকজন।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৪:৫৯
ভোটের আগে তল্লাশি। কোচবিহারে। — নিজস্ব চিত্র

ভোটের আগে তল্লাশি। কোচবিহারে। — নিজস্ব চিত্র

ভোটের ডেথ ওভারে রবি ঘোষের সামনে এখন ৯ রান তোলার টার্গেট!

কিন্তু তাঁর হয়ে ব্যাট করার জন্য বিরাট কোহালি কিংবা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো কেউ নেই। থাকার মধ্যে আছেন ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে আসা উদয়ন গুহ আর দীর্ঘদিন রাজনীতির ময়দান থেকে নীরবে থাকা মিহির গোস্বামী। ইতিউতি আছেন আরও কয়েকজন। তাঁদের কয়েকজনের ব্যাটিং নিয়ে ড্রেসিংরুমের আলোচনায় দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন খোদ ক্যাপ্টেনই। উপরন্তু, ভোটের একদম শেষ পর্বে জোটের বাতাস প্রবলতর হওয়ায় শেষ অবধি কত রান উঠবে, তা নিয়ে তৃণমূলের ড্রেসিংরুমেই শোনা যাচ্ছে নানা মত। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা নাটাবাড়ির প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘মেঘ আছে। ঝড়বৃষ্টিও হতে পারে। তাতে অসুবিধে নেই। আমরা নয়ে-নয়ের জন্যই লড়ছি। সব ঠিক থাকলে রান উঠে যাবে।’’

কিন্তু, ২০১১ সালের কোচবিহারের সঙ্গে ২০১৬-এর মে মাসের প্রথম সপ্তাহের অনেক ফারাক। সে যাত্রায় টগবগ করে ফুটতে দেখা গিয়েছিল রবি-শিবিরকে। গ্রামে-গ্রামে দীর্ঘদেহী রবিবাবুর ছায়া পড়লেই ‘দাদা’, ‘দাদা’ আওয়াজ উঠত। কিন্তু, অতীতে ভোটের ময়দানে চালিয়ে খেলে ভাল রান তুলেও রবিবাবু কোনও ‘ট্রফি’ পাননি। তাই তাঁর শিবিরের অনেকেরই মন গত ৫ বছর ধরেই খারাপ। তৃণমূলের অন্দরের খবর, নিজেদের জমানায় রবিবাবু তাঁর বিষয়-সম্পত্তির বহর কয়েক গুণ বাড়িয়ে ফেলেও একান্ত অনুগামীদের অনেকেই সেই তুলনায় ‘তেমন কিছু’ করতে পারেননি। তাঁদের অনেকেই শিবিরে থাকলেও মনপ্রাণ অন্য কোথায় দিয়ে ফেলেছেন। তার উপরে দলের ব্লকে-ব্লকে এত গোলমাল যে, কে কাকে হারাতে কী করছে, তা নিয়ে কত ধরনের গল্পই না কোচবিহারে পথে ভেসে বেড়াচ্ছে।

তাই খেলাটা যে আগের মতো অনায়াস হবে না, তা মানছেন তৃণমূলের কোচবিহারের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই। কারও হিসেবে গোটা দু’য়েক আসন আগেই হেরে বসেছে দল। আবার কেউ হিসেব কষে বোঝানোর চেষ্টা করেন, গোটা ছয়েক তো পাওয়া যাবেই। আবার কেউ আসন ২-৩-এ নেমে যাবে না তো বলে ভেঙে পড়েন। বাম-কংগ্রেস জোটের শিবিরেও এমন খবরাখবর পৌঁছচ্ছে। কারণ, তৃণমূল শিবিরের ‘খোলা-মন’-এর মানুষের অভাব নেই। ড্রেসিংরুমের আলোচনার খবর পৌঁছে দিতে তাঁরা যেন ছটফট করেন।

তাই রবিবাবুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন যিনি, সিপিএমের সেই তমসের আলি মুচকি হাসেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের কয়েকজন কর্মীরা হইহই করে বলতে থাকেন, জোট হওয়ায় কী ভাবে তাঁরা এক সঙ্গে প্রতিরোধের ঝড় তুলতে পারছেন। গত লোকসভা, পঞ্চায়েত ভোটে যাঁদের এলাকায় রাত-বিরেতে হানা দিয়ে পতাকা খুলে নেওয়া হত, সেখানে কী ভাবে হানাদারদের রোখার জন্য একজোট হয়ে পাহারা দেওয়া হয়েছে, সেই বিবরণ দেন। তমসের আলি বলেন, ‘‘ময়দানের চেহারাই পাল্টে গিয়েছে। খেলাটা মানুষ ধরে নিয়েছেন। কোথাও গেলেই যে ভাবে মানুষ হইহই করে জড়ো হচ্ছে, তা অনেক কিছু বলে দিচ্ছে। কাজেই নয়ে-নয় তোলার কথা ভাবাটা দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। জোটের বোলিংয়ের মুখে ১-২ রান তুলেই দেখাক না!’’

তৃণমূলের কোচবিহার টিমের ক্যাপটেন চিনি ছাড়া চায়ে চুমুক দেন। গরম এক গ্লাস চা শেষ করতে তাঁর মিনিট তিনেকও লাগে না। মুখ মুছে বলেন, ‘‘এত রাস্তাঘাট, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, ক্লাব, ইমামকে অনুদান দেওয়ার দাম মানুষের কাছে নেই, এটা হতে পারে না। জোটের দুই শিবিরের লোকজনকে অনেক দিন থেকে মানুষ চেনেন। তাঁরা অতীতে কে কী করছেন, সেটাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। কাজেই ময়দানের জনসমর্থন আমাদের দিকেই যে রয়েছে, সেটা শেষবেলার প্রচারে দলনেত্রীর ৬টি সভায় উপচে পড়া ভিড় বুঝিয়েছে।’’

কিন্তু, ২০১১ সালেও তো রাসমেলার ময়দানে ঠাসাঠাসি ভিড়ে সভা করেছিল বামেরা। উন্নয়নের খতিয়ানও দিয়েছিলেন নেতারা। কিন্তু, কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের হাওয়ায় উবে গিয়েছিলেন নেতা-মন্ত্রীদের অনেকেই।

এ বার সেই কংগ্রেসকে পাশে নিয়ে জোটের বোলিং জোরাল করতে কোচবিহারের গা ঘেঁষা ফালাকাটায় ‘ক্যাম্প’ করেছেন জোট শিবিরের এক সেনাপতি অশোক ভট্টাচার্য। সঙ্গে জীবেশ সরকার ও শঙ্কর ঘোষ। ক্যাম্প অফিসে টাঙানো তালিকায় শ’দু’য়েক ফোন নম্বর। ঘনঘন কথাবার্তা চলছে। কখনও নির্দেশ যাচ্ছে। কখনও অভিযোগ যাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছের মানুষ বলে পরিচিত অশোকবাবু বলছেন, ‘‘মাঠে কোনও কারচুপি করতে দেব না। ৯ রান তো দূরের কথা, একটা রানও যাতে তুলতে না পারে, সে কথা মাথায় রেখেই ফিল্ডিং দিচ্ছেন মানুষ।’’

Assembly Election 2016 election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy