Advertisement
E-Paper

নাকতলায় সবটাই ‘গণ-তন্ত্র’

যে কোনও মুশকিল আসানে ‘দাদা’ই ত্রাতা। এ হেন দাদার নিন্দুকেরা বলেন, রাতকে দিন, আর দিনকে রাত করার দক্ষতায় তাঁর জু়ড়ি মেলা ভার। তাই বিতর্ক আর আইনি হস্তক্ষেপের জেরে দাদার ক্লাবের দখল করা জমিতে বিয়েবাড়ি ভাড়া আটকে গেলে তিনি অনায়াসেই ব্যবস্থা করে নেন পাড়ার খেলার মাঠে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২২
ভাস্কর দাম

ভাস্কর দাম

যে কোনও মুশকিল আসানে ‘দাদা’ই ত্রাতা। এ হেন দাদার নিন্দুকেরা বলেন, রাতকে দিন, আর দিনকে রাত করার দক্ষতায় তাঁর জু়ড়ি মেলা ভার। তাই বিতর্ক আর আইনি হস্তক্ষেপের জেরে দাদার ক্লাবের দখল করা জমিতে বিয়েবাড়ি ভাড়া আটকে গেলে তিনি অনায়াসেই ব্যবস্থা করে নেন পাড়ার খেলার মাঠে। নাকতলার ‘গণ’দা ওরফে ভাস্কর দাম সর্ম্পকে এমনই প্রতিক্রিয়া বাসিন্দাদের একাংশের। খেলার মাঠে বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাসিন্দাদের আপত্তির বিষয়টি সে ক্ষেত্রে ধোপে টেকে না। কারণ, এর পিছনে এলাকার শাসক দলের নেতা ‘গণ’দা ওরফে ভাস্কর দাম রয়েছেন যে। যিনি আবার স্থানীয় কাউন্সিলরের স্বামী।

নাকতলার সেকেন্ড স্কিমের বাসিন্দাদের একাংশ জানান, সম্প্রতি দাদার ক্লাবের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে দখল করে রাখা জমিতে বিয়েবাড়ি ভাড়া দিয়ে ‘ব্যবসা’ করার অভিযোগ উঠেছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেকেন্ড স্কিমের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘জমির মালিক সেই জমি ফেরানোর আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলে আটকে যায় ওই জমিতে বুকিং হওয়া খান পাঁচেক বিয়ের অনুষ্ঠান। পরে গণদার তৎপরতায় ওই বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো হয় সেকেন্ড স্কিমের খেলার মাঠে।’’

এই খেলার মাঠটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পাশের একটি ক্লাব রয়েছে বলে জানান কিছু বাসিন্দা। তাঁদের বক্তব্য, বাম জামানায় ক্লাবটি বাম অনুগামী বলে পরিচিত থাকলেও পালা বদলের পরে দু’লক্ষ টাকার সরকারি অনুদান মেলায় ক্লাবের অবস্থান বদলে যায়। এর পিছনেও গণদার একটা বড় ভূমিকা ছিল বলে জানাচ্ছেন ওই বাসিন্দারাই। খেলার মাঠের পাশে থাকা ওই ক্লাবের ঘনিষ্ঠরাই জানাচ্ছেন, মাঠে খান পাঁচেক বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান হলেও গণদার ক্লাব থেকে তাঁরা শুধু মাঠ পরিষ্কার আর বিদ্যুতের খরচ বাবদ টাকা ছাড়া আর কিছু পাননি।

নাকতলার নাগরিক কমিটি সূত্রে খবর, ওই মাঠটি এত দিন শুধু খেলার জন্য ব্যবহৃত হত। মাঠটি পাড়ার মানচিত্রেও ‘চিলড্রেন্স পার্ক’ নামে চিহ্নিত রয়েছে। তাই খেলার মাঠে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান চালু হওয়ায় সেকেন্ড স্কিমের বাসিন্দাদের অনেকেই আতঙ্কিত। মাঠে এর পর খেলার থেকে বেশি বিয়ে হবে না তো, প্রশ্ন অনেকের।

বাসিন্দাদের এই আশঙ্কা ও গণদার কীর্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভা বা সরকারের ফাঁকা জমিতে এলাকার মানুষ কোনও অনুষ্ঠান করলে এমন ভাবার কারণ নেই যে, সেটি দখল হয়ে গিয়েছে। নাকতলার ওই জমিতে পুরসভার প্রকল্প হলে পুরসভা ঠিক ব্যবস্থা করবে।’’ কিন্তু ওই বিতর্কিত জমি নয়, পাশেই এক খেলার মাঠে গণদার মদতে বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠছে শুনে মেয়র শোভনবাবু বলেন, ‘‘কবিগুরু ধার করে বলি, আমার উপর নেই ভুবনের ভার।’’ তা হলে কি তিনি ‘ভীরু’? সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্য মেলেনি।

এলাকায় গণদার ঘনিষ্ঠরা বলেন, বৌদি কাউন্সিলর হলেও ১০০ নম্বর ওয়ার্ডটা চালান দাদাই। দাদার অনুমতি ছাড়া ওয়ার্ডের কোনও কাজ হয় না। এমনকী বাসিন্দাদের দাবি, ‘ক্যারেকটার সার্টিফিকেট’ লাগলেও দাদার সবুজ সঙ্কেত ছাড়া ‘কাউন্সিলর বৌদি’র অফিসের চৌকাঠ টপকানো যায় না।

এই ওয়ার্ডে ১০০ দিনের কাজ হারানো গড়িয়া মোড় সংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গণদার পছন্দের তালিকায় না থাকলে কাজ পাওয়া যায় না। তাই বৌদি নতুন কাউন্সিলর হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ হারাতে হয় আমার মতো অনেককে।’’ এই বিষয়ে সুস্মিতাদেবীকে ফোন করলে, ধরেন গণদাই। কেটে দেওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের সঙ্গে কথা নয়।’’

গণদার ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন ক্লাবের জমি বাঁচানো নিয়ে বিতর্কে জড়ানোর পর, এখন তাঁদের দাদা আর নিজে কাউকে ডাকেন না। নিজের ভাইকে দিয়ে ডেকে পাঠান। তার পরে সেই প্রকল্পে কি দোষ-ত্রুটি আছে জানিয়ে দেন। আর সেই দোষ কাটাতে কাকে দিয়ে কী করাতে হবে, তা-ও বলে দেন। ঘনিষ্ঠদের দাবি, সেই ফরমান না মানলে প্রকল্প নিয়ে চোখের জলে-নাকের জলে এক হতে হয় ঠিকাদারদের। গণদার ঘনিষ্ঠ রথতলার এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘এখন গণদাকে আর কেউ রুখতে পারবে না। দাদা ইজ দাদা।’’

নিজের সর্ম্পকে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ফের ফোন করলে কথা শেষ না করতে দিয়ে লাইনটা কেটে দেওয়ার আগে গণদা বলেন, ‘‘মিথ্যে কথা বলার সীমা আছে।’’

টালিগঞ্জের বিদায়ী বিধায়ক এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে এই ধরনের কিছু হলে আমার কাছে অভিযোগ আসত। এখনও পর্যন্ত ওই এলাকা থেকে কোনও অভিযোগ আসেনি আমার কাছে।’’

assembly election 2016 Naktala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy