সাতসকালে কলেজ স্ট্রিট বাজারের কাছে এসে আচমকা গতি কমিয়ে দিয়েছিল দূরপাল্লার একটি বাস। পিছন থেকে আসা একটি মোটরবাইকও দাঁড়িয়ে পড়ে সেখানেই। বাইক থেকে নেমে বাসে ওঠে তিন যুবক। খালাসি তাদের হাতে একটি পিসবোর্ডের বাক্স দিতেই চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে সাদা পোশাকের পুলিশ। বাক্স খুলতেই দেখা যায়, রয়েছে দু’টি পাইপগান ও আট রাউন্ড গুলি।
বিধানসভা ভোটের আগে শুক্রবার এ ভাবেই খাস কলকাতায় উদ্ধার হল অস্ত্র। পুলিশ জানায়, বাসটি বিহারের নওয়াদা থেকে আসে। গ্রেফতার হয়েছে বাসের খালাসি-সহ ওই তিন যুবক। ধৃতদের নাম শেখ রাজু, মহম্মদ জুম্মন, শেখ সিরাজ ও মহম্মদ মিন্টু। নওয়াদার বাসিন্দা মিন্টু ওই বাসের খালাসি। রাজু, জুম্মন ও সিরাজের বাড়ি কলাবাগানে। এ দিন গ্রেফতারের সময়ে যুবকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙে পবন ঠাকুর নামে এক কনস্টেবলের।
লালবাজার সূত্রে খবর, রাজু, জুম্মন ও সিরাজ কলাবাগানে পরিচিত তোলাবাজ। বছর ছয়েক আগে ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা আদায়ে সিদ্ধহস্ত ছিল তারা। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তিন জনই মধ্য কলকাতার এক কাউন্সিলর-ঘনিষ্ঠ। বাসের চালকও আটক হয়েছে। তবে জেরায় তাঁর কাছ থেকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেলেনি।
লালবাজার সূত্রে খবর, ভিন্ রাজ্য থেকে এ শহরে অস্ত্র ঢুকবে, সেই খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। খোঁজ করতেই জানা যায় দূরপাল্লার এই বাসের কথা।
পুলিশের দাবি, মিন্টু জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নওয়াদার এক ব্যক্তি তাকে ওই বাক্স দিয়ে তা সিরাজের হাতে পৌঁছে দিতে বলে। বাক্সের সঙ্গে ছিল সিরাজের নাম ও ফোন নম্বর লেখা চিরকুট। পুলিশের কাছে মিন্টুর দাবি, বাক্সে অস্ত্র আছে, সে জানত না। তাকে বলা হয়েছিল ওষুধ আছে। মিন্টু কতটা সত্যি বলছে, নওয়াদার ওই ব্যক্তি কে, অস্ত্র পাচারের সঙ্গে আর কারা জড়িত— জানতে তদন্ত শুরু করেছে লালবাজার।
ভোটে সন্ত্রাস ছড়াতে শহরে অস্ত্র আমদানি করা হবে, এই অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। এ দিনের পুলিশি অভিযান তাতে কার্যত সিলমোহর দিল বলে মনে করছে পুলিশের একাংশ। লালবাজারের ওই অফিসারেরা বলছেন, ইদানীং দাগি দুষ্কৃতীরা ৯ এমএম এবং ৭.২ এমএম পিস্তল ব্যবহার করছে। পুরভোটে কলকাতা পুলিশের এসআই জগন্নাথ মণ্ডলকে ৭.২ এমএম পিস্তল থেকেই গুলি করা হয়। দুষ্কৃতী গোপাল তিওয়ারির বাড়িতে হানা দিয়েও এমন পিস্তলই বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।
পুলিশের দাবি, ভিন্ রাজ্য থেকে সাধারণত ট্রেনে বা পণ্যবাহী গাড়িতে অস্ত্র আনা হয় এ রাজ্যে। গোয়েন্দাদের অনুমান, ভোটের আগে বিভিন্ন স্টেশন ও পণ্যবাহী গাড়ির উপরে নজরদারি বাড়ায় বাসে অস্ত্র আনছিল দুষ্কৃতীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy