Advertisement
E-Paper

কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতেই ফালাকাটা এলেন অশোক

বছরখানেক আগের কথা। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী শিলিগুড়িতে আসার দিনই দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে ‘গোপন ডেরায়’ চলে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন এক নির্দল সদস্যও। অভিযোগ তুলেছিলেন, প্রশাসনকে দিয়ে বাম কাউন্সিলরদের ভয় দেখিয়ে পুরবোর্ড গড়তেই সরকারি সফরের অছিলায় মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি এসেছেন। এই ভাবেই প্রশাসনকে পাল্টা চাপে ফেলেছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।

অনির্বাণ রায় ও সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৪:৫২
ফালাকাটায় অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার। ছবি: রাজকুমার মোদক

ফালাকাটায় অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার। ছবি: রাজকুমার মোদক

বছরখানেক আগের কথা। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী শিলিগুড়িতে আসার দিনই দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে ‘গোপন ডেরায়’ চলে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন এক নির্দল সদস্যও। অভিযোগ তুলেছিলেন, প্রশাসনকে দিয়ে বাম কাউন্সিলরদের ভয় দেখিয়ে পুরবোর্ড গড়তেই সরকারি সফরের অছিলায় মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি এসেছেন। এই ভাবেই প্রশাসনকে পাল্টা চাপে ফেলেছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।

গত বছরের শিলিগুড়ি পুরভোটে অশোকবাবুই তৃণমূলকে হারাতে বুথস্তরে বিরোধী জোটের ডাক দিয়েছিলেন। শিলিগুড়ির সেই বিরোধী জোটের ‘মডেল’-ই এবার বিধানসভা ভোটে চিন্তায় ফেলেছে তৃণমূলকে। সেই মডেলের দাপটেই উদ্বিগ্ন তৃণমূল নেত্রী শেষ দফায় কোচবিহারে ভোটের আগে লাগোয়া চালসার একটি রিসর্টে এসে ঘাঁটি গেড়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রশাসন এবং পুলিশের উপর চাপ তৈরি করতেই মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে থাকছেন। এ বারও পাল্টা চাপ নিয়ে তৈরি রাজ্য রাজনীতিতে শিলিগুড়ি মডেলের প্রবক্তা বলে পরিচিত অশোকবাবু। প্রশাসনের ওপরে পাল্টা চাপ তৈরি করতে বুধবার সন্ধ্যেবেলাতেই ফালাকাটা পৌঁছেছেন অশোকবাবু, দার্জিলিং জেলা সিপিএমের সম্পাদক জীবেশ সরকাররা। কোচবিহার ভোটে বামেদের ‘ওয়ার রুম’ হচ্ছে ফালাকাটাতেই। তার দায়িত্বে থাকছে ‘টিম শিলিগুড়ি’।

বামেদের অভিযোগ, বাছাই করা কিছু আইপিএস অফিসারদের সঙ্গে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের আগে থেকে তাঁরা কোচবিহারের বিভিন্ন পুলিশ অফিসারদের ফোনে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। বিধাননগর-কলকাতায় নিরপেক্ষ ভাবে ভোট করিয়ে পুলিশের শিরদাঁড়া যখন সোজা হতে শুরু করেছে, সে সময় চাপ দিয়ে তাদের ফের দলদাসে পরিণত করতেই আইপিএস অফিসারদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারের ভোটের দিন উত্তরবঙ্গে থাকছেন বলে কমিশনকেও অভিযোগ জানিয়েছেন বামেরা। যদিও, ‘শিলিগুড়ি মডেলে’র কারিগররা জানেন, আসল লড়াই হবে বুথে। তাই ইতিমধ্যে ফালাকাটায় সিপিএমের পার্টি অফিসে পৌঁছে গিয়েছে কোচবিহার জেলার ৯টি বিধানসভা আসনে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসার থেকে মাইক্রো পর্যবেক্ষকদের নাম, ফোন নম্বরের তালিকা। প্রতিটি থানার আইসি-ওসি এমনকী সেক্টর অফিসারদের ফোন নম্বরেরও তালিকা তৈরি হয়েছে। কোথাও কোনও বেচাল হলেই ফালাকাটা থেকে অশোকবাবু-জীবেশবাবুদের মোবাইল থেকে ফোন যাবে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কাছে। কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলেরও এ দিন সন্ধ্যায় চালসা পৌঁছনোর কথা রয়েছে। ভোটচলাকালীন কোনও গোলমাল হলে অথবা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে দু’দলের কর্মীরা যাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রুখে দিতে পারে, সে কারণেই কংগ্রেসও নেতাদের উত্তরবঙ্গে পাঠিয়েছে।

সিপিএমের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘‘এটাকে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কৌশল বলা যেতে পারে। ওঁদের হাতে যদি প্রশাসন থাকে, তবে আমাদের কাছে শিলিগুড়ি মডেল রয়েছে। বুথস্তরে বাম এবং কংগ্রেস কর্মীরা একজোট হলে তৃণমূল দূরের কথা প্রশাসনও কাছে ঘেঁষতে পারবে না। এই মনোবলটা দিতেই অশোকবাবুরা এসেছেন।’’

মুখ্যমন্ত্রীর চাপের মোকাবিলায় প্রতিরোধ গড়তেই যে তাঁর ফালাকাটায় ঘাঁটি গাড়া তা নিয়ে রাখডাকও করছেন না অশোকবাবু। তিনি বললেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্রাম নেবেন বলে চালসায় থাকছেন। বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলে কোচবিহারের ভোটে কলকাঠি নাড়তে চাইছেন। পাল্টা কলকাঠি আমিও নাড়তে পারি। পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে পারি। তার জন্যই ফালাকাটায় রয়েছি। এখানকার পার্টি অফিসে বসেই দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’’ জীবেশবাবুর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের একাধিক পদস্থ কর্তাও সঙ্গে রয়েছেন। অনেক আধিকারিক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গোপনে এসে দেখা করেছেন বলেও জীবেশবাবু দাবি করেছেন। তবে তাতে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন শোনালো না জীবেশবাবুকে, তিনি বললেন, ‘‘আমরা সব খবরাখবর পাচ্ছি। আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই, সেই মতো আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

দল সূত্রের খবর, নিচুতলার কর্মীদের উজ্জীবিত করতেই অশোক-জীবেশের ফালাকাটায় যাওয়া। জোটের অন্যতম নেতা অশোকবাবু ফালাকাটায় থাকছেন খবর পেতেই কোচবিহারের দলের নেতা-কর্মীরাও উৎসাহী হয়ে ওঠেন। সন্ধেয় ফালাকাটায় পৌঁছনোর পরেই ফোনে কোচবিহারের নেতাদের সঙ্গে বারবার কথা শুরু হয়। কখন কী করতে হবে, সেই নির্দেশ পৌঁছেছে। আজ, বৃহস্পতিবার ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অশোকবাবু-জীবেশবাবুরা ফালাকাটাতেই থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’ বুঝে নেওয়ার পাল্টা এক ইঞ্চি মাটি না ছাড়ার কৌশল।

assembly election 2016 CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy