সৌজন্যে সৌমিক
বাইরে তখন মুখ ভার করা আকাশ। বৃহস্পতিবার ডোমকল গার্লস হাইস্কুলের গণনাকেন্দ্রে তাড়াহুড়ো করে চেয়ারে বসতে গিয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন ডোমকলের জয়ী প্রার্থী সিপিএমের আনিসুর রহমান। প্রতিপক্ষ তৃণমূলের সৌমিক হোসেন তাঁকে সাবধান করছেন, ‘‘সামলে, আর একটু হলেই তো পড়তেন!’’ হাসছেন আনিসুর। সৌমিকের দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘ভাল থেকো। আর হ্যাঁ, একটা কথা বলি, তোমরাই তো ক্ষমতায় আসছো, আমি আর বেশি দিন মাঠে-ঘাটে দাপাতে পারব না, ডোমকলটাকে একটু দরদ দিয়ে দেখো ভাই!’’ চেয়ারে বসে থাকা মাঝবয়সী প্রতিপক্ষের দিকে মাথাটা নুইয়ে দিচ্ছেন সৌমিক। বলছেন, ‘‘আপনি আমার জন্য একটু দোয়া করবেন।’’
তোমায় সেলাম
খাতড়া আদিবাসী কলেজের গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছিলেন বাঁকুড়ার রানিবাঁধ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রম। গেটের সামনে মুখোমুখি দেখা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৃণমূলের জ্যোৎস্না মান্ডির সঙ্গে। সেখানে তখন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা উল্লাসে মেতেছেন। শুরু হয়েছে আবির খেলা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে জ্যোৎস্না এগিয়ে গিয়ে পা ছুঁলেন পরাজিত প্রার্থীর। এক গাল হেসে বিজয়ীর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলেন দেবলীনাও। জ্যোৎস্না বলেন, ‘‘ভোটে হার-জিত আছে। কিন্তু সৌজন্যটাই আসল।’’ আর দেবলীনার কথায়, ‘‘জ্যোৎস্না ভারী মিষ্টি মেয়ে।’’
শাপে বর
গণনা চললেও বিশেষ তাপ উত্তাপ নেই। তাই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে গণনাকেন্দ্রের মিডিয়া সেন্টারে বড় টিভির সামনে ভিড় করেছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। খবরে জানা গেল, কামারহাটি কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছেন মদন মিত্র। এক পুলিশ কর্মী বলে বসলেন, ‘‘শাপে বর হয়েছে।’’ তারপরে সহকর্মীদের দিকে তাকিয়ে তাঁর মতামত ব্যাখ্যাও করে দিলেন— ‘‘প্রভাবশালী বলে সিবিআই ওঁর জামিনের বিরোধিতা করছিল। হারার পরে তো আর প্রভাব থাকবে না। জামিন পেয়ে যাবেন নির্ঘাৎ।’’
মহুয়া ম্যাজিক
তিনি এলেন। দেখলেন। এবং জয় করলেন। করিমপুরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের আচমকা উড়ে এসে জিতে বসার পরে এমনটাই বলছে করিমপুর। পরনে মেরুন পাড়ের শাড়ি। পায়ে স্নিকার্স। বৃহস্পতিবার দুপুরে তেহট্টের গণনা কেন্দ্রের বাইরে মহুয়া বলছেন, ‘‘এ জয় কর্মীদের, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’’ আর করিমপুর বলছে, এটা মহুয়া-ম্যাজিক। না হলে মাত্র চল্লিশটা দিনে এ ভাবে কেউ ঘরের মেয়ে হয়ে উঠতে পারেন! আর প্রতিপক্ষকে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে হারাতে পারেন!