তিনি অলরাউন্ডার। একাধারে ক্রিকেটার, আবার রাজনীতিকও।
ভোটের বাজারে ঘুষ ভিডিও-র সৌজন্যে বাংলার গরম হাওয়ায় ইমরান খানের বিষাক্ত ইনসুইঙ্গারের নিশানা তাই দুর্নীতিবাজ নেতারাই। যে ভঙ্গিতে ব্যাট হাতে বোলার ঠ্যাঙাতেন, অবিকল সেই মেজাজেই ছক্কা হাঁকালেন— ‘‘বুজদিল আদমি কভি লিডর নহি বনতা!’’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের কলকাতায় ইমরান অতিথি। কিন্তু পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে ভাবে পিচের চরিত্র চিনে নিতেন, বাংলায় পা দিয়ে তাঁর বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি— শনিবারের বৃষ্টির পরেও বাংলার আবহাওয়া শুধু ক্রিকেট নয়, ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়েও রীতিমতো গনগনে। ‘এবিপি আনন্দ’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঘুষ ভিডিও-র প্রসঙ্গ উঠতেই তাই চোয়াল শক্ত তাঁর। বললেন, ‘‘দুর্নীতি সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি ট্যাক্স।’’ ব্যাখ্যা দিলেন— নেতাদের দুর্নীতি আর অর্থ আত্মসাতের বোঝা তো আমজনতাকেই বইতে হয়! সুশাসনই পারে দুর্নীতিবাজদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশে সুশাসন যে দূরের স্বপ্নই!
ক্রিকেট ছাড়ার পরে কিছু দিন ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে মেতে থাকার পরে বেশ গোছগাছ করেই রাজনীতিতে নামেন ইমরান। এ দিন জানান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যই সে দিন এই সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে হয়েছিল। মানুষের সমর্থনও মিলেছে। পাকিস্তানের নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক করার দাবি তুলেছে তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। ইমরান বলেন, ‘‘নেতারা সম্পদের হিসাব দিলে প্রমাণ হবে, কী ভাবে তাঁরা সেই সম্পদের মালিক হয়েছেন। কর-ফাঁকিতে তিনি অভিযুক্ত কি না, সেটাও প্রকাশ্যে আসবে।’’
ক্রিকেটেও যখন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যখন কোনও ক্রিকেটার অর্থের বিনিময়ে ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন বলে প্রমাণ হয়, এক জন ক্রিকেটার হিসেবে তিনিও যন্ত্রনা পান— জানালেন ইমরান। যে দেশের অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি, সেই দলের কোনও ক্রিকেটার যখন ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িয়ে পড়েন, সে যন্ত্রনা আরও বাড়ে। রাজনীতিক ইমরান বলেন— কিন্তু ক্রিকেট তো এই সমাজ, এই ব্যবস্থাটার বাইরে নয়। দুর্নীতি তাই ক্রিকেটেও রয়েছে।
পাকিস্তানের সব চেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকার আক্ষেপ— ‘‘ব্যবস্থার গলদের কারণেই পাকিস্তানের সমাজ-জীবনে দুর্নীতি থাবা গেড়ে বসেছে। সে জন্য সব ক্ষেত্রে আজ পিছিয়ে পড়ছি আমরা। চেষ্টা করেও এগোতে পারছি না!’’ ইমরান বলেন, দুর্নীতিমুক্ত দেশের মানুষই সব চেয়ে সুখী। স্বচ্ছ সরকার, সুশাসন রয়েছে বলে নিউজিল্যান্ড বা সুইৎজারল্যান্ডের মতো দেশ দুর্নীতিমুক্ত। আবার ঠিক উল্টো ছবি নাইজেরিয়া বা পাকিস্তানে। তাঁর যুক্তি, সুশাসনের অভাবেই এত দুর্নীতি এই সব দেশে।
ভারতের রাজনীতি নিয়ে কী তাঁর অভিমত? দেশে থেকে প্রতি সুযোগে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে তুলোধোনা করলেও এ বার সতর্ক অতিথি ইমরান। চালিয়ে খেলতে অভ্যস্ত হলেও প্রশ্নকর্তার এই গুগলি সামলালেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতেই। বলের লাইনে পা, মাথা নিচু। বল গড়িয়ে পিচের বাইরে গেল না। উত্তর এল— ‘‘বলব, তবে আরও কিছু দিন দেখে। আরও একটা বছর দেখি। তার পর।’’
পরের প্রশ্নটি যেন টপস্পিন। বাংলার খেলোয়াড় আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও কি তিনি রাজনীতির ময়দানে নেমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার পরামর্শ দেবেন?
এ বারে আর খেললেন না। বলের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে ছেড়েই দিলেন ব্যাটসম্যান ইমরান। বল জমা পড়ল উইকেট রক্ষকের দস্তানায়।
বললেন, ‘‘সিদ্ধান্ত সৌরভই নিন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy