কেন্দ্রের সহযোগ পোর্টাল ব্যবহার করে এক বছরে দু’হাজারেরও বেশি ‘ব্লক’-নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ, দিনে গড়ে ৬টি করে ‘ব্লক’ নিদান পাঠানো হয়েছে। শুধু অনলাইন পোস্ট বা লিঙ্কই নয়, গোটা অ্যাকাউন্ট ‘ব্লক’ করারও নির্দেশ গিয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগই পাঠানো হয়েছে হোয়াট্সঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে।
গত বছরের অক্টোবরে অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই পোর্টালটি চালু করে। পোর্টালের দায়িত্বে রয়েছে মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ (আইফোরসি)। পোর্টালটি চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল অনলাইন মাধ্যম অবৈধ বিষয়বস্তু দ্রুত সরিয়ে ফেলা। সাইবার অপরাধ দমনকারী তদন্তকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন ইন্টারনেট প্লাটফর্মের মধ্যে সমন্বয় রাখাও এই পোর্টালের অন্যতম উদ্দেশ্য। কেন্দ্রীয় সংস্থার পাশাপাশি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংস্থাগুলিও এই পোর্টাল ব্যবহার করতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে তারাও এই পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইন প্লাটফর্মগুলিকে ‘ব্লক’ আদেশ দিতে পারে।
এই পোর্টালের মাধ্যমে কী কাজ হয়েছে, তা জানতে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আবেদন জানিয়েছিল ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’। সম্প্রতি সেই রিপোর্টটি প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে ২,৩১২ টি ‘ব্লক’ আদেশ জারি হয়েছে। হোয়াট্সঅ্যাপ, ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম-সহ মোট ১৯ অনলাইন প্লাটফর্মকে পাঠানো হয়েছে এই ‘ব্লক’ আদেশগুলি। সবচেয়ে বেশি গিয়েছে মেটা (হোয়াট্সঅ্যাপ, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম)-র কাছে। মোট ‘ব্লক’ আদেশের ৭৮ শতাংশের বেশি পাঠানো হয়েছে মেটা-কে। তিনটি প্লাটফর্ম মিলিত ভাবে পেয়েছে ১,৮১৬টি আদেশ। এর মধ্যে শুধু হোয়াট্সঅ্যাপই পেয়েছে ১,৩৯২টি। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম পেয়েছে যথাক্রমে ২৫৫ এবং ১৬৯টি।
এ ছাড়া ইউটিউবের কাছে ১৭৬টি, টেলিগ্রামের কাছে ১২৩টি ‘ব্লক’ আদেশ গিয়েছে। একই রকম ভাবে গুগ্ল ৯৩টি, অ্যাপ্ল ৪৩টি, অ্যামাজ়ন ২৩টি, মাইক্রোসফ্ট ১০টি, লিঙ্কডইন দু’টি এবং স্ন্যাপচ্যাটকে একটি ‘ব্লক’ আদেশ পাঠানো হয়েছে। বস্তুত, একটি আদেশে একটিই লিঙ্কের কথা বলা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। এক একটি আদেশে একাধিক লিঙ্কের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্যও বলা হয়ে থাকতে পারে। যেমন চলতি বছরের শুরুতেই কর্নাটক হাই কোর্টে আইফোরসি জানিয়েছিল, গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চের মধ্যে তারা বিভিন্ন সংস্থাকে ৪২৬টি নোটিস পাঠিয়েছিল। তবে তাতে মোট ১ লক্ষ ১০ হাজার লিঙ্ক এবং অ্যাকাউন্ট ব্লকের নিদান দেওয়া হয়েছিল।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, গত বছরের মার্চ থেকে এক বছরের মধ্যে গড়ে একটি করে ‘ব্লক’ আদেশ জারি হয়েছিল। সহযোগ পোর্টাল চালু হওয়ার পরে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এক বছরের মধ্যে দৈনিক গড় ‘ব্লক’ আদেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬টি। যা থেকে অনুমান করা যায়, সহযোগ পোর্টাল চালু হওয়ায় অবৈধ অনলাইন কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে আরও বেশি সুবিধা হচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলির।
আরও পড়ুন:
এই এক বছরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল মে মাসের সিঁদুর অভিযান এবং তার আগে-পরের সময়। ওই সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন কনটেন্ট এবং অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য সেগুলি পাকিস্তান থেকে পরিচালনা করা হচ্ছিল বলে সন্দেহ কেন্দ্রের। সেই কারণেই সেগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে দিল্লি। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ‘এক্স’ ওই সময়ে দাবি করেছিল, সরকারের কাছ থেকে তারা আট হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট ব্লক করার আদেশ পেয়েছিল। এক্স-এর বক্তব্য ছিল, এর মধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ছিল। বিভিন্ন বিশিষ্ট এক্স ব্যবহারকারীও ছিলেন ওই তালিকায়।
সাধারণত কোনও ‘ব্লক’ আদেশ পাঠানোর জন্য সহযোগ পোর্টাল ব্যবহার করা হলেও এটিই একমাত্র মাধ্যম নয়। সহযোগ পোর্টালে কোনও সময়ে সমস্যা থাকলে ইমেলেও এই ধরনের আদেশ পাঠানো হয়েছে সংস্থাগুলিকে। ফলে গত এক বছরে মোট ‘ব্লক’ আদেশের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানানো হচ্ছে ওই প্রতিবেদনে। তা ছাড়া এই সহযোগ পোর্টাল কেন্দ্রের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তদন্তকারী সংস্থাও ব্যবহার করতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে তারাও এই পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইন প্লাটফর্মগুলিকে ‘ব্লক’ আদেশ দিতে পারে। এই আরটিআই তথ্যের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, মেটা, গুগ্ল, মাইক্রোসফ্ট, অ্যাপ্ল, অ্যামাজ়ন এবং টেলিগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তবে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।