Advertisement
E-Paper

পাহারা নেই, জেদেই বুথে ঘরছাড়ারা

পাক্কা পাঁচ বছর পর।মাঝের সময়টা পরিবর্তনের। যা বদলে দিয়েছিল কানাইদিঘি গ্রামের গোটা তিরিশেক বাসিন্দার ভোটের দিনটাও। গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের দিন এলাকাতেই থাকতে পারেননি তাঁরা। বৃহস্পতিবার শেষ দফা ভোটে ফের পরিবর্তন। দীর্ঘ দিন পরে নিজের এলাকার বুথেই ভোট দিলেন এক সময়ের ঘরছাড়া ওই বাম কর্মী-সমর্থকেরা। কেউ কেউ আবার সামলালেন জোট প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০৪:১০
পাঁচ বছর ঘরছাড়া থাকার পর, এ বার সিপিএম প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হলেন বাম নেতা হংসপদ জানা (বাঁ দিক থেকে প্রথম)। বৃহস্পতিবার উত্তর কাঁথিতে কানাইদিঘির ভোটকেন্দ্রে সোহম গুহর তোলা ছবি।

পাঁচ বছর ঘরছাড়া থাকার পর, এ বার সিপিএম প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হলেন বাম নেতা হংসপদ জানা (বাঁ দিক থেকে প্রথম)। বৃহস্পতিবার উত্তর কাঁথিতে কানাইদিঘির ভোটকেন্দ্রে সোহম গুহর তোলা ছবি।

পাক্কা পাঁচ বছর পর।

মাঝের সময়টা পরিবর্তনের। যা বদলে দিয়েছিল কানাইদিঘি গ্রামের গোটা তিরিশেক বাসিন্দার ভোটের দিনটাও। গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের দিন এলাকাতেই থাকতে পারেননি তাঁরা।

বৃহস্পতিবার শেষ দফা ভোটে ফের পরিবর্তন। দীর্ঘ দিন পরে নিজের এলাকার বুথেই ভোট দিলেন এক সময়ের ঘরছাড়া ওই বাম কর্মী-সমর্থকেরা। কেউ কেউ আবার সামলালেন জোট প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব।

কাঁথি-৩ ব্লকের কানাইদিঘি এলাকাটা পড়ে উত্তর কাঁথি বিধানসভার মধ্যে। স্থানীয় বীণাপাণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে জোট প্রার্থী সিপিএমের চক্রধর মেইকাপের এজেন্ট ছিলেন বিবেকানন্দ প্রধান। গত ১৬ মার্চ পুলিশ পাহারায় বাড়ি ফেরার পরেও, খোদ পুলিশ সুপার বাড়িতে এসে অভয় দিয়ে যাওয়ার পরেও বিবেকানন্দবাবু অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এ দিন ভোটে দলের হয়ে খাটতে পেরে খুশি এই সিপিএম কর্মী। বললেন, ‘‘তৃণমূল অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মানুষ চাইলে সব বাধাই পেরোতে পারে।’’

বীণাপাণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি আর বাণীভবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি বুথে এ দিন
ভোট দেন মোট ৩৩ জন বাম কর্মী-সমর্থক। ২০১১-র ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর থেকেই এঁরা
সকলে ছিলেন ঘরছাড়া। এ বার ভোটের আগে পুলিশ পাহারায় ধাপে ধাপে গ্রামে ফিরেছেন। সেই দলে ছিলেন সিপিআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য হংসপদ জানা, বাম কর্মী ননীগোপাল জানা, কানাই পাত্ররা। গ্রামে ফিরে হংসপদবাবু দেখেছিলেন, মাথার নীচের ছাদটা আর নেই। তৃণমূলের লোকজন বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। সেই হংসপদবাবুও
এ দিন বাণীভবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে বাম প্রার্থীর এজেন্টের দায়িত্ব সামলেছেন।

এ দিন সকালে জোট প্রার্থী চক্রধরবাবু নালিশ করছিলেন, ‘‘ভাজাচাউলি, বাসন্তিয়া, ধোবাবেড়িয়া-সহ উত্তর কাঁথির বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখা যায়নি। কমিশনের নির্দেশ উড়িয়ে বাহিনীকে পঙ্গু করে রেখেছিল স্থানীয় প্রশাসন।’’ কিন্তু ভয় ভাঙলে যে পুলিশ পাহারার অপেক্ষায় থাকতে হয় না, তা এ দিন প্রমাণ করে দিয়েছেন কানাইদিঘির ওই ৩৩ জন। রোদ চড়া হওয়ার আগেই দল বেঁধে বুথের বাইরে লাইন দিয়েছেন। ভোট দিয়ে ফিরেও গিয়েছেন। যাতায়াতের পথে কোনও পাহারা লাগেনি।

তবে কি সব ভয় ভেঙে গিয়েছে?

কানাই মণ্ডল জানালেন, স্ত্রী শিবানী আর দুই ছেলে রাজু-তাপুকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার পথে গ্রামের রাস্তায় দল বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিল তৃণমূলের ছেলেরা। ঠান্ডা চোখে, চাপা গলায় তারা শুনিয়ে রেখেছে, ‘‘খুব সাহস না? রাত হোক, দেখা যাবে।’’

ভয় করছে না?

কানাইবাবুর জবাব, ‘‘ওরা তো প্রচারের শেষ দিনও শাসিয়ে ছিল। তার পরেও তো ভোট দিলাম। ভয়ে মরে আর কত দিন বেঁচে থাকা যায়!’’

assembly election 2016 cpm central forces
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy