Advertisement
E-Paper

ভোট দিতে পেরে স্বস্তির শ্বাস

ভোটটা দিতে পেরেই স্বস্তির শ্বাস নিলেন গড়বেতার যুবক। সকাল থেকেই বুথের চারপাশে ঘুরঘুর করছিল সে। কখনও সুযোগ মেলে। কারও কারও মনে হতে পারে, ভোট দিতে গেলে তো বুথের লাইনে দাঁড়ালেই হয়।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫০
পাহারায় ভোট। গড়বেতার একটি স্কুলে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

পাহারায় ভোট। গড়বেতার একটি স্কুলে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

ভোটটা দিতে পেরেই স্বস্তির শ্বাস নিলেন গড়বেতার যুবক।

সকাল থেকেই বুথের চারপাশে ঘুরঘুর করছিল সে। কখনও সুযোগ মেলে। কারও কারও মনে হতে পারে, ভোট দিতে গেলে তো বুথের লাইনে দাঁড়ালেই হয়। খামোখা বুথের সামনে ঘুরতে যাবে কেন! প্রথমে ওই যুবককে দেখে ভবঘুরেই মনে হচ্ছিল। বুথের সামনে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেসও করলাম, আরে উনি এ ভাবে বুথের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন? তিনি বললেন, ‘‘উনি কাউকে খুঁজছেন হয়তো।’’ মিনিট কয়েক পরেই আমার ভুল ধারণাটা ভেঙে গেল। দেখলাম বুথে ঢুকে গেলেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে এলেন। বুথ থেকে বেরিয়ে সামনে আমাকে দেখেই ওই যুবক বলে ফেললেন, ‘‘পরে যা হবার হবে। ভোটটা দিতে পেরেছি।”

ভোট দেওয়ার জন্য এত কসরত কেন? কট্টর ওই সিপিএম কর্মীর কথায়, “গত দু’রাতে তৃণমূলের মোটরবাইক বাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে যা হুমকি দিয়েছে, তাতে মনে হয়েছিল ভোটটা বুঝি দিতে পারব না। তবে শেষ পর্যন্ত শক্তি সঞ্চয় করে বেরিয়ে পড়েছিলাম। এ বার নিশ্চিন্ত।”

সকলেই যে এমন সাহস দেখিয়ে শাসকের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ভোটটা দিলেন, এমন নয়। ফলে অনেকেই ভোট দিতে বেরিয়েও বুথের সামনে শাসক দলের কর্মীদের জটলা দেখে বিফল মনোরথ হয়ে বাড়িও ফিরে গিয়েছেন। কারণ, রাস্তায় মাঝেমধ্যে পুলিশের গাড়ি ঘোরাফেরা করলেও তাঁরা বাড়ি থেকে ভোটারদের বুথে আনার মতো সাহস জোগাতে পারেননি। তাই সিপিএমের গড়বেতা জোনাল কমিটির সম্পাদক দিবাকর ভুঁইয়া বলেন, “৫০ শতাংশের বেশি বুথে আমাদের ভোটারদের আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারেরা সাহস করে বেরিয়ে ভোটও দিয়েছেন। ২০-২৫টি বুথে তৃণমূল একতরফা ভোট করিয়েছে।”

বিরোধীদের অভিযোগ, চন্দ্রকোনাতেও একইভাবে শাসানি দিয়েই শাসক দল নিজেদের পক্ষে ভোট করিয়েছে। তবে কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত গোলমালও হয়েছে। গোপালপুর বুথ থেকে সিপিএমের এজেন্ট জুলফিকার কাজীকে পুলিশের সামনেই মেরে ধরে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আহত জুলফিকারকে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তৃণমূল কর্মীদের কথায়, “সাফ বলে দিয়েছিলাম, ভোট দিলে আমাদেরই দিতে হবে। নতুবা যাওয়ার দরকার নেই। তাতেই অবশ্য কাজ হয়ে গিয়েছে।”

গড়বেতা বিধানসভা এলাকায় ভোট নিয়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ সবদিনের। এ বার বিরোধীদের মুখে কমবেশি একই সুর। তবে ব্যতিক্রমী দৃশ্যও চোখে পড়েছে। গড়বেতার বেশ কয়েকটি বুথে নিজেদের মধ্যে খোশমেজাজে গল্প করেছেন বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি এজেন্টরা। আবার সানমুড়া, উত্তরবিল, ছোটআঙারিয়া এলাকায় বিরোধীরা এজেন্টই দিতে পারেনি। দেখা যায়নি বিরোধীদলের শিবির বা দলীয় পতাকাও।

যদিও অধিকাংশ বুথের সামনে শাসকদলের কর্মীদের জটলা করে থাকতে দেখা গিয়েছে। কোথাও তৃণমূলের পক্ষ থেকে ট্রলিতে করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বুথে নিয়ে আসা, আবার কোথাও বুথে যাওয়ার আগে ভোটারদের মনে করিয়ে দেওয়া, ‘ঠিক মতো ভোটটা দিস।’- দেখা গিয়েছে এমন ছবিও। তবে অনেক জায়গায় বিরোধীদের সঙ্গে শাসক পক্ষের গোলমালও বেধেছে। তৃণমূলের এক কর্মীর আফশোস, “আগের ভোটে (লোকসভাতে) ম্যানেজ করে নিয়েছিলাম। এ বার হল না।” সব জায়গায় এমন হয়েছে তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে খাইয়ে দাইয়ে ‘ম্যানেজ’ করা গিয়েছে বলেও জানালেন অনেকে।

কেন্দ্রীয় বাহিনীরও দু’রকম ভূমিকা চোখে পড়েছে। মেটালডোবা বুথের সামনে আটকে দেওয়া হয় শাসক দলের প্রার্থী আশিস চক্রবর্তীকে। প্রার্থী নিজের পরিচয় দিলেন। আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান বলছেন, “ক্যান্ডিডেট আবার কী? সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া বুথে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।” প্রিসাইডিং অফিসার এসে বোঝানোর পর প্রার্থীকে বুথে ঢোকার অনুমতি দিল কেন্দ্রীয় বাহিনী! আবার কোথাও পরিচয়পত্র ছাড়াই অবাধে বুথে ঘুরে বেড়ালেন শাসক দলের কর্মী সমর্থকেরা।

Assembly Election 2016 Midnapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy