Advertisement
E-Paper

নেই ক্যামেরার চেয়ে কানা ক্যামেরাও ভাল

লড়াইটা অসম। ৬৫ বনাম ৩৫। তাতেই কপালে ভাঁজ বিরোধীদের। দিল্লির নির্বাচন সদন থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যে চলতি বিধানসভার ভোটে ১৫% বুথে থাকছে ওয়েবক্যাম ও সিসিটিভি। আর ১০% বুথে ভিডিও ক্যামেরা।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১১

লড়াইটা অসম। ৬৫ বনাম ৩৫। তাতেই কপালে ভাঁজ বিরোধীদের।

দিল্লির নির্বাচন সদন থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যে চলতি বিধানসভার ভোটে ১৫% বুথে থাকছে ওয়েবক্যাম ও সিসিটিভি। আর ১০% বুথে ভিডিও ক্যামেরা।
এর বাইরে ১০% বুথের দেখভাল করবেন মাইক্রো-অবজারভাররা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৩৫% বুথে যন্ত্র-চোখ মারফত বাড়তি নজরদারির আয়োজন। অন্যত্র সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য কমিশনের ভরসা শুধু প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়েরি।

এখানেই সিঁদুরে মেঘের আনাগোনা। এটা ঠিক যে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পর্যবেক্ষকের
সংখ্যা অনেক বাড়িয়েছে কমিশন। সোমবার জঙ্গলমহলে প্রথম দিনের ভোটে বিশেষ গোলমালের খবরও নেই। কিন্তু বাইরে নিরাপত্তা বাড়ালেও ক্যামেরার নজরদারি পর্যাপ্ত না-থাকায় বুথের অন্দরের পরিবেশ অবাধ ভোটের পক্ষে কতটা সহায়ক হবে, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিরোধীদের তরফে।

এবং এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত হিসেবে সর্বাগ্রে উঠে আসছে ক’মাস আগের সল্টলেক পুরভোট। কী রকম?

বিরোধীদের বক্তব্য, সল্টলেক পুরসভার ভোটে সব বুথে (৪৫০টি) ক্যামেরার বন্দোবস্ত ছিল। তা সত্ত্বেও অধিকাংশ বুথে ছাপ্পা ভোটের খবর মিলেছে। অভিযোগ: বহু জায়গায় হয় ক্যামেরা সুইচ অফ করে রাখা হয়েছিল, কিংবা ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোথাও আবার ক্যামেরার চোখ ঢাকা পড়েছিল কাপড়ে। সব চেয়ে বড় কথা, প্রিসাইডিং অফিসারদের রিপোর্টে এ হেন ‘অনাচারের’ কোনও প্রতিফলন মেলেনি। ‘‘ক্যামেরা থাকতেও ওখানে ছাপ্পা আটকানো যায়নি। প্রিসাইডিং অফিসারদের মুখ বন্ধ করিয়ে রাখা হয়েছিল। এ বার ক্যামেরা বসানোই না-হলে ভোট-লুঠেরারা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠবে, তা তো জলের মতো স্পষ্ট! শাসকদল পাশে থাকলে প্রিসাইডিং অফিসারের পরোয়া কে করে?’’— মন্তব্য এক বিরোধী নেতার।

তাই ওঁরা চাইছেন, যত বেশি সম্ভব বুথে নজর-ক্যামেরার উপস্থিতি থাকুক। তাতে অন্তত বল্গা ছাড়ার আগে ছাপ্পাবাজেরা দু’বার ভাববে। যদিও রাজ্যের সিইও সুনীল গুপ্ত মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। এর বাইরে কমিশনের বিচারে স্পর্শকাতর ৩৫% বুথের ভিতরে ক্যামেরা ও মাইক্রো অবজারভার থাকছে। বাকিগুলোয় কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন শুধু প্রিসাইডিং অফিসার।’’

অর্থাৎ সিইও-র কথায় পরিষ্কার, সিংহভাগ বুথের অন্দরমহলে নজরদারির ভার থাকছে শুধু প্রিসাইডিং অফিসারের হাতে, ক্যামেরার উপস্থিতি আনুপাতিক নিরিখে নেহাতই নগণ্য। শুনে প্রমাদ গুনছে বিরোধী শিবির। এমনকী খোদ রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্যেও সেই আশঙ্কার প্রতিধ্বনি। কী বলছে তারা?

এই মহলের পর্যবেক্ষণ— প্রিসাইডিং অফিসার ও অন্যান্য ভোটকর্মীরা রাজ্য সরকারের কর্মচারী। অনেকে শাসক দলের কর্মী সংগঠনের সদস্য অথবা সমর্থকও বটে। এঁদের বড় অংশ দলতন্ত্রের তাগিদে ছাপ্পায় প্রশ্রয় দেন। বাকিরা চোখ বুজে থাকেন চাকরিতে হেনস্থার আশঙ্কায়। বস্তুত অতীতে দেখা গিয়েছে, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র বাদে বুথে ছাপ্পা ভোট হলেও প্রিসাইডিং অফিসারেরা ভয়ে বা ভক্তিতে ডায়েরিতে তার উল্লেখ করেন না। অতি উৎসাহী ভোটকর্মীরাই শাসকের হয়ে ভোট লুটছে, এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয়।

তাই প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়েরি থেকে সব সময় বুথের ভিতরের ‘আসল ছবি’ পাওয়ার গ্যারান্টি নেই বলে মনে করছে প্রশাসনের এই অংশ। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘গত লোকসভা ভোট ও পুরভোটে বহু জায়গায় বুথ থেকে বিরোধী এজেন্টদের তুলে দিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে ভোট করেছিল শাসকদল। প্রিসাইডিং অফিসারদের চাপ দিয়ে ডায়েরিতে আসল ঘটনা লিখতে দেওয়া হয়নি। শুধু প্রিসাইডিং অফিসারের উপর ভরসা করলে সত্যিটা না-ও জানা যেতে পারে।’’

এ প্রসঙ্গে সল্টলেক পুরভোটেরই দু’টি ছবিকে তুলে ধরছেন বিরোধীরা। একটি ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে, এইচবি ব্লকের এক বেসরকারি স্কুলের। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফাঁকা বুথের ভিতর থেকে ইভিএম মেশিনে বোতাম টেপার ‘বিপ বিপ’ শুনে উঁকি দিয়ে দেখা গিয়েছিল, প্রিসাইডিং অফিসার ও তাঁর কর্মীরা নাগাড়ে ভোট দিয়ে চলেছেন! দ্বিতীয়টির ঘটনাস্থল ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বিবি ব্লকের কমিউনিটি হল। সেখানকার এক বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনেই দেদার ছাপ্পা টিপে যাচ্ছিলেন শাসক দলের এজেন্ট!

এই প্রেক্ষাপটে বাকি সব পর্বে প্রতি বুথে ক্যামেরা রাখার দাবি উঠেছে। ‘‘কারণ, যন্ত্রের চোখই একমাত্র সত্যি কথা বলতে পারে।’’— যুক্তি এক বিরোধী নেতার। কিন্তু ক্যামেরা থাকলেও তার চোখে যদি ঠুলি পরিয়ে দেওয়া হয়? তা ছাড়া সোমবার জঙ্গলমহলের অনেক বুথে বসানো ক্যামেরা তো নেটওয়ার্কের সমস্যায় কাজেই আসেনি! সে রকম হলে লাভ কী?

তবু বিরোধীরা চাইছে, ক্যামেরা থাকুক সব বুথে। কারণ, তাতে ভোট-লুঠেরাদের কাছে একটা হুঁশিয়ারির বার্তা অন্তত যাবে।

আপাতত ‘বার্তা’ই ভরসা!

সহ-প্রতিবেদন: কাজল গুপ্ত।

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy