E-Paper

থিসিস-ভাগ্য নিয়ে আশঙ্কা উপাচার্যহীন রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী, সমাবর্তনের অনুষ্ঠান ছাড়া পিএইচ ডি ডিগ্রি দেওয়া যায় না। স্নাতকোত্তরের শংসাপত্রেও উপাচার্যের সই থাকতে হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতি সকলের জানা সত্ত্বেও জটিলতা কাটিয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে কোনও মহলেই পর্যাপ্ত তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অনেকের অভিযোগ।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:২৩

—প্রতীকী চিত্র।

খেটেখুটে মাস নয়েক আগে থিসিস লিখে জমা দেওয়ার পরে বছর ঘুরতে চলেছে। এখনও সামনে শুধুই অন্ধকার দেখছেন ওঁরা। বারাসতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জনা ৩০ পিএইচ ডি গবেষকের অবস্থা এমনই। থিসিস কার কাছে গেল, কী গতি হল, কত দিনে মৌখিক পরীক্ষা হবে, কিছুই পরিষ্কার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে বার বার চিঠি লিখে চলেছেন শিক্ষক থেকে গবেষক ও ছাত্রেরা।

বারাসতের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বার সমাবর্তন হয়েছিল ২০২০ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী, সমাবর্তনের অনুষ্ঠান ছাড়া পিএইচ ডি ডিগ্রি দেওয়া যায় না। স্নাতকোত্তরের শংসাপত্রেও উপাচার্যের সই থাকতে হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতি সকলের জানা সত্ত্বেও জটিলতা কাটিয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে কোনও মহলেই পর্যাপ্ত তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অনেকের অভিযোগ। মাস দু’-তিন আগে উপাচার্য হয়েছিলেন সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেই তাঁকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে পাঠানো হয়। এর পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যবিহীন। এর ফলে পঠনপাঠন, গবেষণায় অভূতপূর্ব সঙ্কট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়-সহ ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে বহু চেষ্টাতেও রাজ্য সরকার এবং আচার্যের ঐকমত্য হচ্ছে না। আগামী জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে ফের শুনানি। ফলে, বারাসতে অনেক গবেষকের কাছে ২০২৫ সালটা অন্ধকারের বছর হয়েই থাকছে।

সুমন কর্মকার নামে প্রাণিবিদ্যার এক পিএইচ ডি গবেষক গত মার্চে থিসিস জমা দিয়েছেন। সেই থিসিসের ভাগ্য এখনও অন্ধকারে। এখানে গবেষণা করে কি অন্যায় করেছি, এই মর্মে সুমন আচার্যকে চিঠিও লেখেন। তাঁর অভিযোগ, পিএইচ ডি-র অভাবে বহু চাকরিতে তাঁরা পিছিয়ে পড়ছেন। প্রাণিবিদ্যা, শারীরতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, পদার্থবিদ্যা, ইংরেজি, শিক্ষাতত্ত্বের মতো বিষয়ের গবেষকেরা সঙ্কটে।

এই বিষয়টি নিয়ে আচার্য তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে আগে চিঠিও লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক অরুণ হোতা। তাতে এ-ও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পিএইচ ডি গবেষণার যে বোর্ড রয়েছে, তার জন্য উপাচার্যের সম্মতি দরকার। পিএইচ ডি-তে পড়ুয়া ভর্তি, গবেষণা খাতে বিভিন্ন শিক্ষাকর্মে অর্থ অনুমোদন, থিসিস জমা নিয়ে তা পরীক্ষকের কাছে পাঠানো থেকে মৌখিক পরীক্ষার বন্দোবস্ত— সব কিছুতেই উপাচার্যের ভূমিকা থাকে। অর্থাৎ, উপাচার্যবিহীন দশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাই কার্যত লাটে ওঠার জোগাড়।

পিএইচ ডি-র শংসাপত্রের অভাবে সম্প্রতি আমেরিকায় গবেষণারত এক ছাত্র ভিসা-সঙ্কটে পড়েছিলেন। বিষয়টির সুরাহার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ লাগে। রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল বা অস্থায়ী কোনও ডিন না-থাকাতেই সব কিছুরই এখন অত্যন্ত জটিল দশা। সুমনের মতো গবেষকেরা বলছেন, ‘‘জানি না, কোথায় গেলে সুরাহা হবে। তবু আচার্যকে বার বার অবস্থাটা বলা ছাড়া গতি নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Universitis WB Education

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy