Advertisement
E-Paper

ভূত কম, তাই ভোট কম

জল কমলো ঠিকই। কিন্তু দুধ এখনও ট্যালট্যালে। মুখে দেওয়ার দরকার নেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে পানসে। ঘন করতে গেলে আরও জ্বাল দিতে হবে উনুনে। সোমবার প্রথম দফার ভোট হল জঙ্গলমহলে। দেখা গেল গেরস্তকে সামান্য স্বস্তি দিয়ে দুধে জল কম। কতটা? খুব বেশি নয়, গড়পড়তা জল কমেছে দুই থেকে আড়াই শতাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৪
ভোট-পাহারা। রাজ্যের প্রথম দফার ভোটে সোমবার দুবরাজপুরের একটি ভোট কেন্দ্রে। — নিজস্ব চিত্র

ভোট-পাহারা। রাজ্যের প্রথম দফার ভোটে সোমবার দুবরাজপুরের একটি ভোট কেন্দ্রে। — নিজস্ব চিত্র

জল কমলো ঠিকই। কিন্তু দুধ এখনও ট্যালট্যালে। মুখে দেওয়ার দরকার নেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে পানসে। ঘন করতে গেলে আরও জ্বাল দিতে হবে উনুনে।

সোমবার প্রথম দফার ভোট হল জঙ্গলমহলে। দেখা গেল গেরস্তকে সামান্য স্বস্তি দিয়ে দুধে জল কম। কতটা? খুব বেশি নয়, গড়পড়তা জল কমেছে দুই থেকে আড়াই শতাংশ।

তিন জেলার যে আঠারোটি আসনে সোমবার ভোট হল, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে সেখানে সর্বত্রই ভোট পড়েছিল প্রায় নব্বই শতাংশ। দূর থেকে মনে হয়েছিল বাব্বা এত দুধ! কিন্তু কাছে যেতেই মালুম হয়েছিল, ধুর দুধ কোথায়? জলই বেশি। সুযোগ সুবিধামতো জায়গায় জায়গায় বালতি বালতি জল মেশানো হয়েছে। আজ দেখা গেল, সেই দুধ উনুনে চড়াতেই জল কমতে শুরু করেছে। সব জায়গায় সমান নয়। মেদিনীপুরে জল সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে, তো শালবনিতে চার শতাংশ। আবার বাঁকুড়ার তালড্যাংরা, রানিবাঁধ বা পুরুলিয়ার বান্দোয়ান,বলরামপুরে জল কমার হার তুলনায় কম। টেনেটুনে এক শতাংশ।

দুধে জল মেশানোর খেলাটা বহু দিনের। দু’দিন আগে নারদ ফুটেজেও দেখা গেছে আগের ভোটে জল মেশানোর কথা কবুল করছেন ববি হাকিম। বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে বিরোধীরা কোথায়? আমরা আর মাওবাদীরা।’’ তাই গণনার আগেই বালতি গুনে বলে দিয়েছেন, ‘‘বাঁকুড়ায় মুনমুন জিতছেই। বীরভূমে শতাব্দীও জিতবে।’’ জানিয়েছেন, বীরভূমে জল মেশানো হয়েছে নিঃশব্দে। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের আগের রাতে সিল করে দেওয়া হয়ছিল। ফলে জল মেশাতে কেউই বাধা দিতে পারেনি। একেকটা বুথে চারশো থেকে সাড়ে চারশো জল (পড়ুন ভোট) মেশানো গিয়েছে হাসতে খেলতে।

কিন্তু ভোটের দিন ববি হাকিম তো বালতি নিয়ে বুথে বুথে ঘোরেননি। তা হলে জল মিশিয়েছিল কে?


কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরে। শালবনির গড়মালে সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

ভূতে! এ রাজ্যের ভোটার লিস্টেই ভূতের বাস। তারা কারা। এমন কেউ, যিনি মারা গিয়েছেন, কিন্তু তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েনি। এমন কেউ যিনি বাস উঠিয়ে চলে গিয়েছেন অন্য কেন্দ্রে। সেখানে ভোটার তালিকায় নামও তুলেছেন। কিন্তু থেকে গিয়েছেন আগের তালিকাতেও। আর সেই সব লোকেরা, যাঁরা কোনও কারণে ভোটের দিন এলাকায় গরহাজির থাকবেন। ফলে ভোট দিতে যেতে পারবেন না। ভোটার স্লিপ বিলি করার অজুহাতে শাসক দলের লোকেরা ভোটের ঠিক আগে এই সব ভূতের খোঁজ খবরই জেনে যেত। তার পর ভোটের দিন গায়ের জোরে ভোট দিত দেদার। সব মিলিয়ে ভূতের সংখ্যা কোনও কোনও কেন্দ্রে পাঁচ এমনকী দশ শতাংশ।

দিল্লির ওঝারা বলেছিলেন বুথে বুথে ভূতের নেত্য এ বার তাঁরা কমাবেন। সোমবার দেখা গেল, ঝাঁটা হাতে যতটা হম্বিতম্বি করেছিলেন, ততটা ফল পাওয়া গেল না। ভূতের উৎপাত সামান্য কমলেও তেনাদের উপস্থিতি ভালমতোই টের পাওয়া গেল। কোথাও কোথাও ভূতের সঙ্গে ঝামেলাও হল। বিশেষ করে শালবনি, মেদিনীপুর, নয়াগ্রামের মতো আসনে যেখানে ভূতেরা বেশি বাধা পেয়েছে, সেখানে ঝামেলাও হয়েছে বেশি। অন্যত্র কম।

তবে এটুকু জল কমতেই কলকাতার গোয়ালাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এমনই যে, ভোট কেমন হল সেই প্রতিক্রিয়া জানাতে শাসক দল রাত আটটা বাজিয়ে দিয়েছে। গোয়ালাদের কেউ কেউ অবশ্য এখনও সাহসী। তাঁদের মতে, কত বালতি জল মেশানো হয়েছে, তার পাকা হিসাব এখনও মেলেনি। সেই হিসাব পাওয়া গেলে দেখা যাবে আগের ভোটে যতটা জল ছিল এ বারও তাই। তবে তেমন সাহসীরা সংখ্যায় কম। ভিতুই বেশি। জল কমছে দেখে যাঁরা এখনই খাতা পেন্সিল নিয়ে বসে পড়েছেন।

কেন? কারণ, ২০১৪-র ভোটে জঙ্গলমহল ছিল ফাঁকা মাঠ। একে বুথে বিরোধী এজেন্ট নেই। তার ওপর এ-ও শোনা যায় যে সে বার ভূতের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল ওঝার। বুথের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও গুপি-বাঘার গান শুনে লোকেদের যেমন দশা হতো, তেমনই নিথর হয়ে গিয়েছিল তারা। অর্থাৎ সরষেতে ঝাঁঝ ছিল না। তাই ভূত নৃত্য করেছিল অক্লেশে।

এ-হেন শক্ত ঘাঁটিতেই যদি এ বার দুই থেকে আড়াই শতাংশ জল কমে যায়, তা হলে মধ্যবঙ্গে বা দক্ষিণবঙ্গে কী দশা হবে? কারণ, সেখানে বুথে বিরোধী এজেন্ট থাকবে। ওঝা ঢিলে দিলে তাকেও চেপে ধরা হবে। এবং সেখানেও জল কমার হার একই থাকলে‌ ব্যবসারই বা কী হবে? কারণ, এ ব্যবসার মূল মন্ত্রই হল জল নাম কেবলম্। অভিজ্ঞতা বলছে, দু’-আড়াই শতাংশ জল কমলে মুনাফার অঙ্কে আকাশপাতাল ফারাক হতে পারে। এমনকী লাটেও উঠতে পারে পাঁচ বছরের ব্যবসা।

state election 2016 west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy