Advertisement
E-Paper

মেরে হাত ভাঙা হল নেতার

কোথাও ভোটের আগে, কোথাও ভোট মেটার পরে মারধর করা হল বিরোধী নেতাদের। অভিযোগের তির সেই শাসকদলের বিরুদ্ধে। ভোটগ্রহণের আগের দিন সিপিএমের নির্বাচনী এজেন্টকে মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। সোনামুখী বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাত্রসায়র থানার নতুনবাজার এলাকার ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৫
আহত সিপিএম নেতাকে দেখতে এসেছেন দলের রাজ্য নেতা অমিয় পাত্র।—নিজস্ব চিত্র

আহত সিপিএম নেতাকে দেখতে এসেছেন দলের রাজ্য নেতা অমিয় পাত্র।—নিজস্ব চিত্র

কোথাও ভোটের আগে, কোথাও ভোট মেটার পরে মারধর করা হল বিরোধী নেতাদের। অভিযোগের তির সেই শাসকদলের বিরুদ্ধে। ভোটগ্রহণের আগের দিন সিপিএমের নির্বাচনী এজেন্টকে মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। সোনামুখী বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাত্রসায়র থানার নতুনবাজার এলাকার ঘটনা। অন্যদিকে, প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ মিটে যাওয়ার পরে, রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আদ্রার কমলাস্থান এলাকায় বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধরের ঘটনায় নাম জড়াল শাসকদলের। দু’টি ঘটনাই রবিবার সকালের।

এ দিন পাত্রসায়র থানার নতুনবাজার এলাকায় সিপিএম নেতা সাধন বাগদিকে রাস্তায় ফেলে রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সাধনবাবুকে উদ্ধার করে। সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। সাধনবাবুর ছেলে নিমাই বাগদি তৃণমূলের নির্বাচনী এজেন্ট সুব্রত ওরফে গোপে দত্ত-সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এ দিন ভীষ্ম বিশ্বাস নামে পটাশপুর গ্রামের বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সাধনবাবুর বাড়ি পাত্রসায়রের দেউলপাড়া গ্রামে। তিনি সিপিএমের পাত্রসায়র উত্তর লোকাল কমিটির সদস্য। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাত্রসায়র উত্তর আসনে জেলা পরিষদের প্রার্থীও ছিলেন। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের জানান, এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দলের কাজে যাচ্ছিলেন সাধনবাবু। অভিযোগ, ধারিমপুর গ্রামের কাছে তাঁর পথ আটকায় গোপে দত্ত, হামিরপুর পঞ্চায়েত প্রধান শেখ আসগর, স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুকুমার রায়, প্রশান্ত শাল-সহ ১৮-২০ জনের একটি দল। তাঁকে রাস্তায় ফেলে লোহার রড এবং লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়।

সুব্রতবাবু বলেন, “এলাকায় দলের সংগঠন ধরে রেখেছিলেন সাধনবাবু। সেই আক্রোশে তাঁর উপরে আগেও হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করার জন্য এ দিন তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা হয়। বরাত জোরে উনি বেঁচে গিয়েছেন।’’ এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে সোনামুখী কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএমের অজিত রায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সাধনবাবু। অজিতবাবুর অভিযোগ, “মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে দীপালি সাহা হেরে যাবেন। এটা বুঝতে পেরেই তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী আমাদের নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। মারধর করছে। পুলিশকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, পাত্রসায়র ব্লকের নারায়ণপুর, হামিরপুর, বেলুট-রসুলপুর এবং পাত্রসায়র সদর পঞ্চায়েত এলাকায় বিরোধীদের এজেন্ট দিতেও বাধা দিচ্ছে শাসকদল। বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কাছে নালিশ করা হয়েছে।

যদিও তৃণমূল প্রার্থী দীপালি সাহার দাবি, “পারিবারিক আক্রোশের জেরে এই হামলা হয়েছে। এতে তৃণমূল কোনও ভাবে জড়িত নয়। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে মিথ্যা অভিযোগ করছে সিপিএম। নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই বিষয়টি প্রমাণ হয়ে যাবে।’’ গোপে দত্তও এ দিন দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি বা দলের কেউই সেখানে ছিলেন না। পুলিশ বিনা দোষে দলের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “শনিবার সকালে দেউলপাড়া গ্রামে সিপিএম নেতা সাধন বাগদির নেতৃত্বে দীপালিদেবীকে হেনস্থার চেষ্টা হয়। নারায়ণপুর পঞ্চায়েত প্রধান রেখা রায়ের শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা হয়েছে। গণ্ডগোল তো সিপিএমের লোকেরাই শুরু করেছে।”

অন্যদিকে, অভিযোগ উঠে এসেছে গেরুয়া শিবির থেকেও। রবিবার সকালে আদ্রার কমলস্থান এলাকায় গণেশ দাস নামে বিজেপির আদ্রা মণ্ডল কমিটির সভাপতি তথা আড়রা পঞ্চায়েতের সদস্যকে এলাকার দু’জন তৃণমূল কর্মী মারধর করেন বলে অভিযোগ। এই এলাকা বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ওই এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরপর দু’ বার জয়ী হয়েছেন বিজেপির গণেশবাবু। বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলেও ভোটগ্রহণ পর্ব মিটেছিল নির্বিঘ্নেই। কিন্তু তার পরেই উঠে এল হামলার অভিযোগ।

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গরমে নিজের পুকুরের পাড়ে রাতে শুতে গিয়েছিলেন গণেশবাবু। সেই সময় তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী সেখানে ছিলেন। দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। গণেশবাবুর অভিযোগ, রবিবার সকালে তৃণমূলের ওই দুই কর্মী তাঁর উপর চড়াও হয়। লাঠি এবং লোহার রড দিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে দলের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, গণেশবাবুর হাতে চোট রয়েছে। এ ছাড়াও মাথায় চোট থাকায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

এ দিন গণেশবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘ভাল ফল করতে পারবে না বুঝতে পেরে ভোট মিটতেই সন্ত্রাস শুরু করেছে শাসকদল। এলাকার দখল নিতেই এ দিন তৃণমূলের কর্মীরা আমার উপর চড়াও হন।’’ বিজেপির আদ্রা শহর কমিটির সম্পাদক দেবু ঘোষ বলেন, ‘‘গণেশবাবু আড়রা পঞ্চায়েতের দক্ষ সংগঠক। আমাদের সংগঠনের উপর আঘাত হানতেই তাঁকে নিশানা করেছে তৃণমূল।’’

তবে গেরুয়া শিবিরের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, এলাকায় সংগঠনের ভিত নড়ে গিয়েছে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। আড়রা অঞ্চলের যুব তৃণমূল সভাপতি অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘আমাদের ওই দুই কর্মীকে তৃণমূল করলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন গণেশবাবু। প্রতিবাদ করলে তাঁদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। পরে নিজেই জখম হওয়ার নাটক ফেঁদে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।”

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, তাঁদের ওই দুই কর্মীকেও রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতাল ভর্তি করানো হলে পরে সেখান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়। দু’পক্ষই এ দিন একে অন্যের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

ভোটের আগে-পরে এই ধরণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দুই দলের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় সন্ত্রস্ত জেলার বাসিন্দারা।

assembly election 2016 Patrasayer allegation brutally beaten tmc cpm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy