Advertisement
E-Paper

দাগিদের ইস্তফা চেয়ে নারদে নাকাল দলে দীনেশের হুল

বিরোধীদের গোলাগুলি ছুটে আসছে প্রতিদিনই। অশান্তি দলের মধ্যেও। এই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন অধ্যাপক-সাংসদ। আবার আচমকা তারকা প্রার্থী বলে বসছেন, ‘সবাই টাকা নেয়!’ নারদ কাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে এ বার প্রকাশ্যে বোমা ফাটালেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৬

বিরোধীদের গোলাগুলি ছুটে আসছে প্রতিদিনই। অশান্তি দলের মধ্যেও। এই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন অধ্যাপক-সাংসদ। আবার আচমকা তারকা প্রার্থী বলে বসছেন, ‘সবাই টাকা নেয়!’ নারদ কাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে এ বার প্রকাশ্যে বোমা ফাটালেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী কার্যত জানিয়ে দিলেন, ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের প্রতি তৃণমূল নেত্রী যে অবস্থান নিয়ে চলছেন, তাতে তাঁর সমর্থন নেই।

দিল্লিতে এক বণিকসভার আলোচনাচক্রে আজ যোগ দিয়েছিলেন দীনেশ। সেখানেই এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি দলের সভাপতি হতাম, তা হলে ওঁদের বলতাম, ‘আমাকে বলুন কী ঘটেছিল?’ তার পর বলতাম, আপনারা ইস্তফা দিন। যত ক্ষণ না কলঙ্কমুক্ত হচ্ছেন, ঘরে বসে থাকুন।’’

আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, ‘রাজনৈতিক স্বার্থ কি এই মুহূর্তে জনস্বার্থকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে?’ সেই সভাতেই নারদ-কাণ্ড নিয়ে এক দর্শক প্রশ্ন করেছিলেন দীনেশকে। জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘আপনার দলের সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। অথচ কেউ ইস্তফা দেননি। কেন?’’

উত্তরে দীনেশের বক্তব্য, ঘুষ-কাণ্ডে নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে অভিযুক্তরা ইস্তফা দিলে তৃণমূলের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বেড়ে যেত। বিধানসভা ভোটেও দলের লাভ হতো। তিনি বলেন, ‘‘হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পরে লালকৃষ্ণ আডবাণী ইস্তফা দিয়ে যে দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন, সেটাই সময়ের দাবি। আডবাণী পদ আঁকড়ে থাকেননি। নিষ্কলঙ্ক প্রমাণিত হয়ে তবেই ফিরে এসেছিলেন। তৃণমূলেরও সেটা করা উচিত ছিল।’’

নারদ কাণ্ডে তৃণমূলের যে দু’জন নেতা-সাংসদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি উঠে এসেছিল, দীনেশ তাঁদের অন্যতম। স্টিং অপারেশনের নেপথ্যে থাকা নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, সুলতান আহমেদের মাধ্যমে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। সুব্রতবাবু কোনও উৎকোচ নিতে রাজি হননি। আর দীনেশ তো দেখাই করতে চাননি তাঁর সঙ্গে!

নারদের ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর দলের বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছিলেন দীনেশ এবং আর এক তৃণমূল সাংসদ, অধ্যাপক সুগত বসু। নেত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়ে আধার বিল নিয়ে সংসদে ধর্না দিতে হাজির হননি তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে মমতা দলের মধ্যে পইপই করে বলে দিয়েছেন— নারদ নিয়ে প্রকাশ্যে ‘স্পিকটি নট! এক দিকে তদন্তের দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা। অন্য দিকে হাইকোর্টে গিয়ে তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেছেন, ভোট চলাকালীন নারদ মামলা নিয়ে যেন কোনও নির্দেশ দেওয়া না হয়। তার পরেও বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া বলেছেন, ‘‘সব দলই তহবিলের জন্য টাকা নিয়ে থাকে!’’ তার পরে আজ দীনেশের বাক্য-বাণ শক্তিশেলের মতোই বিঁধেছে তৃণমূলকে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুকুল রায় থেকে ডেরেক ও’ব্রায়েন— কেউই মন্তব্য করতে চাননি। এমনকী সুব্রত বক্সীও বলেছেন, ‘‘আমি কিছু জানি না।’’

তবে দীনেশের মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘তাঁর নিজের দলের সাংসদই ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্ত নেতাদের ঘরে বসে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘দীনেশদার প্রতি সম্মান বেড়ে গেল। উনি সত্যি কথাটা বলার সাহস দেখালেন। উনি দৈত্যকূলে প্রহ্লাদ!’’

প্রশ্ন হল, ভোটের মাঝে দীনেশ কেন এই বোমা ফাটালেন? তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, ব্যারাকপুরের সাংসদ অনেক দিন ধরেই দলে কোণঠাসা। ইউপিএ আমলে রেল বাজেটে ভাড়া বাড়িয়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছিল দীনেশকে। ইদানীং আর দলের কোনও ব্যাপারেই তাঁর মতামত নেন না মমতা। তাই দীনেশ উসখুস করছিলেন। দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ব্যাপারেও কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন। তার উপর এ বার ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে দীনেশের মতকে পাত্তাই দেননি মমতা। তাতেই আরও বিপ্লবী হয়ে ওঠেন তিনি।

কারও কারও মতে, দীনেশ ভালই জানেন, নারদ নিয়ে জনমানসে তৃণমূল সম্পর্কে যথেষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়ে রয়েছে। তার পর এ দিনের মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে সঙ্কট আরও ঘোরালো হবে। আরও বিপাকে পড়বেন মমতা। তাই সব দেখেশুনেই দলনেত্রীর চৌকাঠে বোমাটা ফাটালেন তাঁর ‘দীনেশদা’!

assembly election 2016 MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy