এইমসের ধাঁচের হাসপাতালের প্রসঙ্গ তুলেই তৃণমূলকে নিজের ঘরের মাঠে তুলোধনা করলেন কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি। সোমবার রাতে রায়গঞ্জের বিধাননগর মাঠে রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্তের সমর্থনে একটি জনসভায় যোগ দিয়ে এই দাবি করলেন প্রাক্তন সাংসদ দীপা। এ দিনই উত্তর দিনাজপুরের ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ইটাহার, গোয়ালপোখর ও ইসলামপুরে তিনটি জনসভা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কোথাও এইমস নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। দীপাদেবীর কটাক্ষ, তৃণমূলনেত্রী নিজেই জানেন, তিনি এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল রায়গঞ্জ থেকে কল্যাণীতে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের সঙ্গে কতটা অন্যায় করেছেন।
দীপাদেবীর দাবি, রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগে ২০০৯ সালে কংগ্রেস পরিচালিত তত্কালীন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করে। তাঁর অভিযোগ, সেই সময় তিনি রায়গঞ্জের সাংসদ থাকায় ও জেলায় কংগ্রেসের সংগঠন শক্তিশালী হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে হাসপাতাল তৈরির জন্য রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ করেননি। কয়েক মাস আগে ওই হাসপাতাল তৈরির জন্য রাজ্য সরকার কল্যাণীতে জমি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্রকে হস্তান্তর করেছে।
দীপাদেবীর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জেরে উত্তরবঙ্গবাসী উন্নত চিকিত্সা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই উত্তরবঙ্গের মানুষ তৃণমূলকে কোনও দিনও ক্ষমা করবেন না, বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের মানুষ ইভিএমে এর জবাব দেবেন।’’
দীপাদেবী এ বারে ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দীপাদেবীর দাবি, প্রথমে লড়াইটা কঠিন মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রতিদিনই ভবানীপুরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। তাঁর কথায়, ‘‘সনিয়াজি যখন আমাকে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিলেন, সেদিন আমার স্বামী অসুস্থ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠল। রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি হলে হয়তো প্রিয়বাবুর মতো অনেক রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতেন। অনেক গরিব রোগীকে চিকিত্সার জন্য বাইরের হাসপাতালে যেতে গিয়ে হয়রানি ও দুর্ভোগে পড়তে হত না। তাই যিনি রায়গঞ্জে হাসপাতাল তৈরি না করে উত্তরবঙ্গবাসীকে উন্নত চিকিত্সা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করলেন, উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে লড়ে আমি জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করিনি।’’
এ দিনের দ্বিতীয় দফার ভোট পরিচালনার কাজে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দীপা। তাঁর কথায়, রাজ্য পুলিশ ও তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী এ দিন নির্বাচন পরিচালনা করল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা পাওয়া গেল না। শাসক দল অবাধে বিরোধীদের উপর হামলা, আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা নিয়ে ছোটাছুটি, বিরোধী দলনেতাকে হেনস্থা, বুথে ঢুকে ছাপ্পাভোট দেওয়ার চেষ্টা সবই করল। দিদি ও মোদীর আঁতাতের জেরেই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না বলে তাঁর সন্দেহ। তাঁর হুশিয়ারি, পরবর্তী দফার নির্বাচনে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদে নামবেন।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের পাল্টা দাবি, কংগ্রেস প্রতিবার নির্বাচনের সময় এইমসকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বাসিন্দাদের বোকা বানায়। মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেসের নেতা নেত্রীরা বিষয়টিকে জিইয়ে রেখে রাজনীতি করতে প্রস্তাবিত জমির মালিকদের দিয়ে লিখিত ভাবে জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার আবেদন করাতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের রাজনীতি বুঝতে পেরেছেন বলেই জেলায় দু’টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছেন। অমলবাবুর কটাক্ষ, কংগ্রেস ও সিপিএম নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতা দখলের স্বার্থে ঘোঁট পাকিয়েছে। তাই ওই দুই দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে রুচিতে বাঁধে। বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দামের দাবি, ‘‘স্রেফ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে জোট করে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে অপমান করেছে। তাই ওই দলের নেত্রী কেন্দ্রীয় সরকার বা মোদীর বিরুদ্ধে কী বললেন, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy