Advertisement
E-Paper

হাওড়ায় ছাপ্পা নিয়ে রিপোর্ট চায় কমিশন, নেতা নির্বিকার

কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রবল উপস্থিতির মধ্যেও কী ভাবে সাংবাদিকদের সামনেই উত্তর হাওড়ার কয়েকটি বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ধন্দে নির্বাচন কমিশন এবং হাওড়া জেলা প্রশাসন। অথচ ওই ঘটনার মূল কান্ডারি হাওড়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরী নির্বিকার!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৩৪
সেই ছবি। হাওড়ার সালকিয়ার ১৩৮ নম্বর বুথে অবাধ ছাপ্পা। —ফাইল চিত্র।

সেই ছবি। হাওড়ার সালকিয়ার ১৩৮ নম্বর বুথে অবাধ ছাপ্পা। —ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রবল উপস্থিতির মধ্যেও কী ভাবে সাংবাদিকদের সামনেই উত্তর হাওড়ার কয়েকটি বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ধন্দে নির্বাচন কমিশন এবং হাওড়া জেলা প্রশাসন। অথচ ওই ঘটনার মূল কান্ডারি হাওড়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরী নির্বিকার! হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ গৌতমবাবু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমি যেটা করেছি, দলের ভালর জন্যই করেছি।’’

মঙ্গলবার বিকেলে গৌতম যখন ছাপ্পার কথা মেনে নিচ্ছেন, ততক্ষণে হাওড়া জেলা শাসকের দফতরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ এসে পৌঁছেছে। নির্দেশে কমিশন হাওড়ার জেলা শাসককে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছে। তবে গৌতম জানান, তাঁর সঙ্গে কমিশন বা হাওড়া জেলা প্রশাসনের কেউ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। হাওড়া জেলার ওসি ইলেকশন অর্ঘ্যভূষণ কাজী বলেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ পেয়েছি। কমিশন হাওড়ার রিটার্নিং অফিসারকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছে। সেই মতো বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’ ওই দু’টি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার ভোট শেষে কমিশনের কাছে জমা দেওয়া ডায়েরিতে কী লেখেন, সেটাও দেখতে চায় কমিশন।

ক’টা বুথে এ ভাবে ছাপ্পা ভোট পড়েছে, সে ব্যাপারে কমিশন বা হাওড়া প্রশাসনের কাছে কোনও খবর নেই। তবে আনন্দবাজার হাওড়া উত্তর কেন্দ্রের ১২৫ ও ১৩৮ নম্বর বুথে ছাপ্পা ভোট পড়ার সাক্ষী। গৌতমবাবু নিজেই ছাপ্পা ভোট দেখাতে সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদকদের নিয়ে গিয়েছিলেন ওই দু’টি বুথে। মঙ্গলবার আনন্দবাজারে ছাপ্পা ভোটের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ইভিএম-এর সামনে তিন জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। আরও একজন বেঞ্চে বসে আছেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং ছবি ছাড়া আর কোনও তথ্য নেই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ছবিতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিক তদন্তে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও দায়ের করা হতে পারে।’’

কী ঘটেছিল সোমবার?

ওই দিন বেলা দু’টোর পরে বেশ কয়েকটি বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন গৌতম চৌধুরী। আনন্দবাজার তাঁর পিছু নেয়। সালকিয়ায় একটি বুথের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তিনি আনন্দবাজারের প্রতিবেদকদের ভিতরে ডেকে নেওয়ার সময় বলেন, ‘ভিতরে যা-হবে তা এক মিনিটের মধ্যে দেখে চলে আসতে হবে। কোনও প্রশ্ন করা চলবে না’। গৌতমকে অনুসরণ করে বুথে ঢোকার পরে আনন্দবাজারের প্রতিনিধিরা দেখেছেন, ইভিএম-এর সামনে দু’তিন জন দাঁড়িয়ে কী ভাবে একের পর এক ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। চিত্রসাংবাদিক সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিলেন। যা প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবারের আনন্দবাজার পত্রিকায়। ওই একটি বুথ নয়, গৌতমের সঙ্গে আনন্দবাজারের প্রতিনিধিরা যান অন্য একটি বুথেও। সেখানেও ছাপ্পা ভোট হয়। প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়ে দেন, তিনি কিছু জানেন না।

তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি হাওড়া জেলা নেতৃত্বের কাছে জানতে চেয়েছেন। এ দিন এই খবর প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত এমন ঘটনার কথা তিনি জানতেন না বলে দাবি হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি তথা মধ্য হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী অরূপ রায়ের। সোমবার অরূপ ভোট চলাকালীনই হাওড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সোমবার কেন্দ্রীয় বাহিনী যে ভাবে সন্ত্রাস করেছে তার মধ্যে কী ভাবে এমনটা ঘটল, তা বুঝতে পারছি না।’’

কিন্তু সাংবাদিক ডেকে নিয়ে গিয়ে কেন গৌতম এমনটা করলেন, তা নিয়ে ধন্দে তাঁর ঘনিষ্ঠেরাও। কেউ বলছেন, এ বার হাওড়া উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থীপদের দাবিদার ছিলেন গৌতম। কিন্তু তাঁর বদলে ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লকে টিকিট দিয়েছে দল। সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি এমন করে থাকতে পারেন। নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে যদি দেখে ওই দু’টি বুথের পাশাপাশি আরও অনেকগুলিতে এমন হয়েছে, তা হলে প্রায় গোটা কেন্দ্রেই পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিতে পারে তারা। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের পাশাপাশি বিড়ম্বনায় পড়বেন লক্ষ্মীও। সেটা বুঝেই সাংবাদিকদের সাক্ষী রেখে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন গৌতম। লক্ষ্মীরতনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকার করেন।

তবে গৌতমের দাবি, তিনি দলের ভালর জন্যই যা করার করেছেন। এই ঘটনায় যদি দল তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়? গৌতমের মন্তব্য, ‘‘দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, মেনে নেব।’’

বাম-কংগ্রেস জোটের তরফে হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শুভ্রজ্যোতি দাস বলেন, ‘‘দলটা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, মানুষের উপরে বিশ্বাস করে না, তা ফের প্রমাণিত হল।’’ আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারের কথায়, ‘‘গৌতম চৌধুরী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, হাওড়া পুরসভায় নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যই এমনটা করেছেন।’’

নির্বাচন কমিশন কী করে, এখন সে দিকে তাকিয়ে সব পক্ষই।

assembly election 2016 howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy