Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার নালিশ

গাড়িতে করে নিয়ে এসে গ্রামের ভোটারদের ভুরিভোজ করিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ সোমবারই শাসক দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষকের কাছে করেছিলেন বিরোধীরা। তার ২৪ ঘণ্টা পরে একই অভিযোগ ঘিরে ফের সরগরম হয়ে উঠল বিষ্ণুপুর। কাঁকিলা এলাকার একটি হিমঘরে মাংস ভাত রান্না হয়েই গিয়েছিল বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তিন গ্রামের কয়েক হাজার ভোটারকে খাওয়ানোর জন্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৮
বিষ্ণুপুরের কাঁকিলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা যেতেই সব ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।—নিজস্ব চিত্র

বিষ্ণুপুরের কাঁকিলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা যেতেই সব ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।—নিজস্ব চিত্র

গাড়িতে করে নিয়ে এসে গ্রামের ভোটারদের ভুরিভোজ করিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ সোমবারই শাসক দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষকের কাছে করেছিলেন বিরোধীরা। তার ২৪ ঘণ্টা পরে একই অভিযোগ ঘিরে ফের সরগরম হয়ে উঠল বিষ্ণুপুর। কাঁকিলা এলাকার একটি হিমঘরে মাংস ভাত রান্না হয়েই গিয়েছিল বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তিন গ্রামের কয়েক হাজার ভোটারকে খাওয়ানোর জন্য। শেষ পর্যন্ত সব ভেস্তে গেল প্রশাসন নড়েচড়ে বসায়। কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে আসায় রান্না করা খাবার পড়েই থাকল। ভুরিভোজ আর হল না গ্রামবাসীদের!

এ দিন জয়কৃষ্ণপুর হাটে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে একটি সভার আয়োজন করে তৃণমূল। ওই সভায় রাধানগর, জয়কৃষ্ণপুর ও কাঁকিলা গ্রামের হাজারেরও বেশি বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই সভায় আসা গ্রামবাসীদের জন্যই এ দিন হিমঘরে মাংস-ভাত রান্না করিয়েছিল তৃণমূল। যাতে ওই গ্রামবাসীদের তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করা যায়। যেখানে তৃণমূলের সভা হচ্ছিল, সেই জয়কৃষ্ণপুর হাট থেকে কাঁকিলা কোল্ড স্টোরেজ কয়েকশো মিটারের মধ্যেই। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, প্রথমে সভাস্থলের কাছেই রান্নার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি প্রশাসনিক মহলে জানাজানি হতে পারে সেই ভয়েই রান্না করা খাবার দাবার কোল্ড স্টোরেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সভা শেষ করে যখন গ্রামবাসীদের খেতে বসার আয়োজন করা হচ্ছে ওই হিমঘরে, ঠিক তখনই সেখানে এসে হাজির কেন্দ্রীয় বাহিনী! হিমঘরের ভিতর থেকে লোকজনকে ‘ধমক’ দিয়ে বের করলেন জওয়ানেরা। বাইরে দাঁড়িয়ে তখন ফুঁসছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা থেকে সভায় আসা গ্রামবাসীরা। অনেকেই বললেন, “খাওনদাওন হবে আশ্বাস দিয়ে ভর দুপুরে আমাদের সভায় ডেকে আনা হয়েছিল। পেটে ছুঁচো ডন মারছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেতেই পেলাম না।’’ শাসক দলের তরফে যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের দাবি, হিমঘরের কর্মীরাই একটি পিকনিকের আয়োজন করেছিল। এর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই। যদিও এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে হিমঘরের সামনে স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েতের জন প্রতিনিধিদের দেখা গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, কাঁকিলায় যে এ দিন ভোজের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে, সেই বিষয়টি সোমবারই বাঁকুড়া সার্কিট হাউসে সর্বদল বৈঠকে তুলেছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোরঞ্জন পাত্র। অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই বিষয়টির উপর নজর রাখছিল প্রশাসন। এ দিন সকালেও ঘটনাটি নিয়ে ফের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানায় সিপিএম। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “আদর্শ আচরণ বিধি কার্যকর হয়ে গিয়েছে। আইনবিরুদ্ধ কোনও কিছু হলেই প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করছে। এর আগেও কয়েকটি বিষয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, কাঁকিলায় ওই খাওয়াদাওয়ার আয়োজনের অভিযোগ পেয়েই তা বন্ধ করতে তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠান। ঘটনার পিছনে কোনও রাজনৈতিক দল যুক্ত রয়েছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সর্বদল সভায় এসে বিরোধীরা জেলা প্রশাসনের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এ দিনের ঘটনার পরে অবশ্য প্রশাসনের প্রতি সুর নরম হয়েছে তাঁদের। মনোরঞ্জনবাবু বলেন, “আমরা যে মিথ্যে অভিযোগ করিনি, তা প্রমাণ হয়ে গেল। মানুষকে ভোটের আগে প্রভাবিত করা তৃণমূল প্রার্থী শ্যামবাবুর বরাবরের অভ্যেস।” বিষ্ণুপুরের জোট প্রার্থী, কংগ্রেসের তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “মানুষকে কিনে আর ভোটে জেতা যাবে না। প্রশাসন সজাগ হয়েছে।’’

বিরোধীদের অভিযোগ মানেননি শ্যামবাবু। তিনি বলেন, “আমি জানি না, কারা ওখানে সভার আয়োজন করেছিল। আমি নিজে কেন্দ্রের বাইরে রয়েছি। আসলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা বিরোধীদের অভ্যাস।’’ অন্য দিকে, এই সভার উদ্যোক্তা তৃণমূলের রাধানগর অঞ্চলের কার্যকরী সভাপতি মনোরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁরা জয়কৃষ্ণপুরে সভার আয়োজন করেছিলাম। খাওয়া দাওয়ার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু এ দিন হিমঘরের সামনের জটলায় তাঁকেও দেখা গিয়েছে। সেখানে কী করছিলেন, জানতে চাওয়া হলে মনোরঞ্জবাবু বলেন, “ঝামেলা হচ্ছে শুনেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম।’’

assembly election 2016 allegation oppositions code of conduct violated
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy