Advertisement
E-Paper

ভূতের ভবিষ্যতের ওপরেই নির্ভর ভোটের ভবিষ্যৎ

মিথ্যা, ধাপ্পা, সংখ্যা। সংখ্যা বিদ্যা বড় বিদ্যা, চুরির চেয়েও। যে পাত্রে রাখা হয়, সংখ্যা তার আকার ধারণ করে। জলের মতো। একই সংখ্যা, কিন্তু ভিন্ন রূপ। ভিন্ন সূত্র প্রমাণের জন্য ভিন্ন ভাষ্য ব্যবহার করা যায়। অনায়াসে। এটুকু বুঝলেই সামনের বিধানসভা ভোটকে বোঝা যাবে।

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:২২

মিথ্যা, ধাপ্পা, সংখ্যা।

সংখ্যা বিদ্যা বড় বিদ্যা, চুরির চেয়েও। যে পাত্রে রাখা হয়, সংখ্যা তার আকার ধারণ করে। জলের মতো। একই সংখ্যা, কিন্তু ভিন্ন রূপ। ভিন্ন সূত্র প্রমাণের জন্য ভিন্ন ভাষ্য ব্যবহার করা যায়। অনায়াসে। এটুকু বুঝলেই সামনের বিধানসভা ভোটকে বোঝা যাবে।

অঙ্কটা দেখে নেওয়া যাক:

১) ২০১৪ সালে কংগ্রেস ও বামেদের ভোট যোগ করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে তারা।

২) হঠাৎ করে বিজেপি এক লাফে তাদের ভোট বাড়িয়ে ফেলল তিন গুণের বেশি। প্রশ্ন: এই ভোট কি ধরে রাখতে পারবে তারা? যদি না পারে, ‘ঘর ওয়াপসির’ ভোট কার ঘরে যাবে?

৩) ব্রাত্য বসু রাজ্য জুড়ে সব ভূতের বাড়ি খুঁজে বের করেছিলেন। ভেবেছিলেন ভূত-পর্যটন শুরু করবেন। দিদি-র পছন্দ হয়নি। বন্ধের নির্দেশ দেন। ভূতেরা কিন্তু রয়ে গিয়েছে। তাদের ভোটের এ বার কী হবে? তাদের সংখ্যাই বা কত? রাজনীতির পরমব্রতরা হয়তো জানেন। অন্যরা?

৪) জোটের ভোট আর দিদি-র ভোট প্রায় সমান। আমরা যদি ২৯৪টি আসন আলাদা আলাদা করে দেখি, তখন পাওয়া যাবে ভিন্ন ছবি। দেখা যাবে ২৯৪ আসনের মধ্যে ১৮৫-তে তৃণমূলই এগিয়ে আছে।

কেন?

কংগ্রেস দশ শতাংশ ভোট পেলেও তার অধিকাংশ পেয়েছে উত্তর থেকে। দক্ষিণে, যেখানে আসন সংখ্যা বেশি, সেখানে কংগ্রেসের ভোট কিন্তু নগণ্য। তাই ছবিটা আলাদা। অঙ্ক তা হলে সরল? পুরোপুরি না। কেননা আছে সংখ্যার ধাপ্পা। এ বার উল্টো দিক। দক্ষিণে শাসকের প্রতাপ বেশি। ভূতের সংখ্যাও তাই বেশি। হরেদরে তাই একই দাঁড়ায়। ভিন্ন ছবি কি আসলে ভিন্ন? প্রশ্ন থেকে যায়। লোকসভা ভোটের সময় একটা জ্যান্ত সমস্যা তৈরি হয়েছিল: বিজেপি-র ভোটটা রাতারাতি বেড়ে গেল! নরেন্দ্র মোদী নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। দিদি-বিরোধী দলে রক্ত কম। রাজনীতিও তাই ফ্যাকাসে। প্রতিকারের আশায় ঘর ছেড়েছিলেন অনেকেই।

এঁদের মধ্যে অনেকেই হতাশ হয়েছেন। যা বলা হয়েছিল, সে রকম কাজ হয়নি। সারদা অনুসন্ধান হঠাৎ নিস্তব্ধ। মোদীর দল নানা রকম উল্টোপাল্টা বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে আর অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে না। ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু রাজনীতির তাগিদে নানা রকম বন্ধু সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়েছেন।

নির্বাচন তাই যত এগোবে, মেরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। মূল স্বর হয়ে দাঁড়াবে, হ্যাঁ দিদি। না দিদি। এই লড়াইয়ে বাকিরা অনেকটা ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো, রাজনীতির কাবাবে অদরকারি হাড়।

ঘরে তাই ফিরবেন। কিন্তু ক’জন? ফিরলে কোন ঠিকানায়? বলা হচ্ছে, বিজেপি-র ভোট প্রতিবাদী ভোট। তাই প্রতিবাদীর ঘরেই যাবে। কংগ্রেস থেকে যদি বেশির ভাগ ভোট গিয়ে থাকে, তা হলে সেখানে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। গড়ের মাঠের একটা যুক্তি আছে। মোহনবাগানের সমর্থক যদি দেখেন, তাঁদের প্রিয় দল বারবার গোল খাচ্ছে, তাঁরা আহত হবেন। চাইবেন মহমেডান স্পোর্টিং বাঙালদের হারিয়ে দিক। সেখানেই তাঁদের স্বস্তি। আবার যদি দেখেন সুনীল ছেত্রী মোহনবাগানে আসছেন, উৎসাহিত ভক্তরা মন্দিরে ফের পুজো দেবেন। ঘর ওয়াপসি।

এর পরে আছেন ভূতেরা। অনিল বিশ্বাসের আমল থেকে রাজ্যে ওঁনাদের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। মার্ক্সবাদের মতো এঁরাও এখন বৈজ্ঞানিক সত্য। ওঁনারা বায়বীয়। পরমব্রতরাও বলিতে পারিবেন না ওঁনাদের সংখ্যা কত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের নিরিখে অনুমান করা যায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ। তবে এটা নিছক অনুমান। দিল্লির ওঝাদের পাল্লায় পড়ে যদি দু-তিন শতাংশও কমে, সেটায় কিন্তু জোটেরই লাভ হবে।

ভূত এখানে দু’রকম। বিহারি লাইনের ভূত আর বাঙালি লাইনের ভূত। কলকাতা পুরসভা বা রাজারহাটে বিহারি ভূতদের উৎপাত বেশি দেখা গিয়েছিল। এই ভূতেরা কায়িক পরিশ্রমে বিশ্বাস করেন। বুথ নৃত্য প্রায়ই দেখা যায়। বাঙালি ভূতের অবিসম্বাদিত নেতা আলিমুদ্দিনের প্রয়াত অনিল বিশ্বাস। যাঁকে তৃণমূলের মুকুল রায় আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে মানেন। এঁরা সভ্য ভব্য। নব্য তো বটেই। সাবাং মেখে ফরসা হওয়ার চেষ্টা করেন। বলা যেতে পারে বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহ আছে। বৈজ্ঞানিক ভূতরা পুরোপুরি বায়বীয় নন। এঁদের কথা ব্রাত্য বসুরা জানবেন না। এঁরা কারা, থাকেনই বা কোথায়? কাঁঠালি কলার মতো এঁরা সর্বত্র আছেন। ভোটার লিস্টে তো আছেনই। যে কোনও ভোটে কিছু ভোটারকে খুঁজে পাওয়া যায় না। হয় তাঁরা মারা গিয়েছেন, নয় ঠিকানা বদল করেছেন, নয় নিরুদ্দেশ বা অনেক সময় নিরুৎসাহী। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এঁদের একটা আলাদা লিস্ট করা হয়। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এঁদের ভোট ভূতেরা দিয়ে আসেন। এই ভূতেরা বাঙালি এবং বৈজ্ঞানিক। তাই নিরাকার নন। বুথ পিছু চল্লিশ-পঞ্চাশটা বা বেশি ভোট যদি এঁরা দিতে পারেন, তা হলে একেকটি বিধানসভায় হাজার দশেক জল মেশানো অসাধ্য নয়।

হিসাব করতে গেলে ভুল হতে পারে। সংখ্যা ধাপ্পা বড় ধাপ্পা। তাই দিদি জিতবে যেমন ধরে নেওয়া কঠিন, এ-ও বলা যায় না দিদি হারবে। ভোটের দিন ভূতেরা ব্রাত্যর খুঁজে বের করা বাড়িতেই থাকবেন, নাকি বাইরে বেরিয়ে আমোদ প্রমোদ করবেন? পশ্চিমবাংলায় ভূতের ভবিষ্যতের ওপরেই নির্ভর করছে রাজ্যের ভবিষ্যৎ।

assembly election 2016 false voting difference MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy