Advertisement
E-Paper

উত্তরে দিদি নিজেই, দক্ষিণে ভরসা শুভেন্দু

গোড়ায় দিদি চেয়েছিলেন, শেষ দফার প্রচার সেরে দিঘার সৈকতাবাসে থাকবেন। সেখান থেকেই ‘মনিটর’ করবেন সবটা। তার পর কী মনে হল, বলেছেন, ‘‘নাহ্ ওটা সরকারি অতিথিশালা! নির্বাচন কমিশন আবার কী বলবে কে জানে! বরং তুমি এ দিকটা দেখো, আমি ও দিকটা।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৫:০২
ভোটের তোড়জোড়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় বাংলাদেশ লাগোয়া জারিধরলা গ্রামের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাচ্ছেন কর্মীরা। বুধবার কোচবিহারে গীতালদাতে সিংঘিজানি নদীতে।ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ভোটের তোড়জোড়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় বাংলাদেশ লাগোয়া জারিধরলা গ্রামের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাচ্ছেন কর্মীরা। বুধবার কোচবিহারে গীতালদাতে সিংঘিজানি নদীতে।ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

গোড়ায় দিদি চেয়েছিলেন, শেষ দফার প্রচার সেরে দিঘার সৈকতাবাসে থাকবেন। সেখান থেকেই ‘মনিটর’ করবেন সবটা। তার পর কী মনে হল, বলেছেন, ‘‘নাহ্ ওটা সরকারি অতিথিশালা! নির্বাচন কমিশন আবার কী বলবে কে জানে! বরং তুমি এ দিকটা দেখো, আমি ও দিকটা।’’ ঘাড় নেড়ে ভাই বলেছেন, ‘‘আপনি ও দিকে থাকলেই ভাল ‘মেসেজ’ যাবে।’’

ও দিকটা যে এ বার ‘ডিস্টার্বড’, দিদি-ভাই দু’জনেই জানেন। এ দিকটা তুলনায় ভাল। এ দিক মানে পূর্ব মেদিনীপুর। ও দিকটা কোচবিহার।

বাংলায় আজ শেষ দফার ভোট হবে পঁচিশটা আসনে। পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি, কোচবিহারের ৯টি। গত লোকসভা ভোটে মেখলিগঞ্জ ছাড়া সবেতেই এগিয়েছিল তৃণমূল। তবে জোটের প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে দেখলে দিদি এগিয়েছিলেন ২১টি আসনে।

এ বারও কী হবে?

দিদির দলে কান পাতলে শোনা যাবে, ভোট শুরুর আগে এই পঁচিশটা আসনকে ‘নিরাপদ’ চিহ্নিত করে সরিয়ে রেখেছিলেন দিদি। খুব কম হলেও বিশটা আসন এখানে হবেই। কিন্তু রাজনীতিতে নিরাপদ ব্যাপারটা এক্কেবারে মরসুমি। গত এক মাসে এ দিক-ও দিক তো কম হল না! নারদ হয়েছে, পুল ভেঙেছে। গুড়-জল-বাতাসার গন্ধে ঘুম চলে গেছে ভোট কমিশনের। তা ছাড়া, দিদির ‘নিজের লোক’ হয়ে থাকার ব্যাপারে ইদানীং অনীহা প্রকাশ করতে শুরু করেছে পুলিশ ও প্রশাসন। তাই সংশয় তৈরি হয়েছে দলে। বিশেষ করে কোচবিহারের আসনগুলি নিয়ে। অথচ দিদি জানেন, এ দফায় নিদেন বিশটি আসন না-পেলে সামগ্রিক সম্ভাবনাও নিরাপদ নয়।

সমস্যা কোথায়?

কোচবিহারে বামেরা বরাবরই শক্তিশালী। পাঁচ বছর আগে এখানে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে ফসল তুলেছিলেন দিদি। তার পর বাম শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ হয়েছিল। ২০১৪-র ভোটে অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছিল ‘মোদী ঝড়’। তখন জেলার ন’টি আসনে বিজেপি কুড়ি থেকে ত্রিশ হাজার ভোট পেয়েছিল। বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ায় সুবিধা হয়েছিল দিদির। এ বার মোদী হাওয়া নেই। বরং জোটের পালে হাওয়া বেশি। সেই সঙ্গে দিদির দলে তলে তলে অনেক ভাগ। উদয়ন গুহর মতো বহিরাগতের সঙ্গে পুরনোরা মিশ খাচ্ছেন না! বুধবারও তাই দফায় দফায় জেলার নেতাদের কাছে ফোন গিয়েছে দিদি-মুকুল রায়দের।

বিরোধীদের মতে, সেই উদ্বেগ নিয়েই প্রচার শেষে চালসার রিসর্টে থেকে গেলেন মমতা। চালসা থেকে কোচবিহারের দূরত্ব কমবেশি সওয়া’শ কিলোমিটার। কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের আশঙ্কা, আজ ভোট চলাকালীন রিসর্টে বসেই পুলিশ প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতে পারেন মমতা।

তুলনায় পূর্ব মেদিনীপুরে অবস্থা ভাল। দিদির ওপর আস্থা হারিয়ে এক সময় দল ছাড়ার ভাবনাচিন্তা পর্যন্ত করেছিলেন যিনি, সেই শুভেন্দু অধিকারীই এখানে মমতার ভরসা। তবে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন, তিনিও নাকি এ বার চাপে। কারণ, জেলার পরিস্থিতি গত ভোটের মতো নেই। নন্দীগ্রাম পরবর্তী সময়ে গ্রামের পর গ্রামে সিপিএম কর্মীদের ঘরছাড়া করে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছিলেন শুভেন্দু। এখন সেখানে ঘর ওয়াপসি শুরু হয়েছে। নিন্দুকেরা বলেন, মাওবাদীরাও আর তাঁর পাশে নেই। তা ছাড়া অধিকারী পরিবারের একাধিপত্য কমাতে সক্রিয় দলের একাংশ। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘শুভেন্দু দিদিকে বার বার শুনিয়েছেন, ‘এ বারও ষোলো-শূন্য করে দেব!’ না-পারলে দলে যেমন মর্যাদাহানি হবে, তেমনই বিপদ বাড়বে নেত্রীরও।’’ কারণ, দিদির নবান্নে ফেরার অঙ্কে বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে শুভেন্দুর ষোলো।

assembly election 2016 Suvendu Adhikari Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy