Advertisement
E-Paper

মমতার ছোঁয়ায় বাড়ল কল-কাকলি

‘কাছে ছিলে দূরে গেলে/দূর হতে এসো কাছে...।’ কাকলি ঘোষদস্তিদারের হাল এখন অনেকটা এ রকম। নারদের ভিডিওয় টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। পরিস্থিতির আঁচে বেশ কিছু প্রার্থী বারাসতের এই সুবক্তা তৃণমূল সাংসদকে ‘দূরে’ রাখতে চাইছেন বলেই শোনা যাচ্ছিল দলের অন্দরে।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৩
কাকলি ঘোষদস্তিদার

কাকলি ঘোষদস্তিদার

কাছে ছিলে দূরে গেলে

দূর হতে এসো কাছে...।’

কাকলি ঘোষদস্তিদারের হাল এখন অনেকটা এ রকম।

নারদের ভিডিওয় টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। পরিস্থিতির আঁচে বেশ কিছু প্রার্থী বারাসতের এই সুবক্তা তৃণমূল সাংসদকে ‘দূরে’ রাখতে চাইছেন বলেই শোনা যাচ্ছিল দলের অন্দরে। এমনকী মঙ্গলবার বারাসতে চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর প্রচারে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে থাকলেও কাকলির দেখা মেলেনি। ফলে জল্পনার পাশাপাশি নারদ-কাণ্ডের পরে স্বয়ং মমতা তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন কি না, সে প্রশ্নও উঠে যায়।

কাকলির ‘কপাল’ খুলল শেষ বেলায়। যখন বারাসতের সভার এক ঘণ্টার মধ্যেই দমদমে প্রচারে গিয়ে মমতা বললেন, ‘‘নারদের মতো ৫০টা চ্যানেল কেনার ক্ষমতা কাকলির আছে।’’ ছবিটা আরও স্পষ্ট হল বুধবার, আমডাঙার হঠাৎ ডাকা (আগে ঠিক ছিল না, বারাসতের সভার পরে ঠিক হয়) সভায়। কাকলিকে দেখা গেল একেবারে ‘দিদি’র পাশে। বসলেন, বক্তব্য রাখলেন। মমতাও তাঁকে ডেকে নিলেন ‘প্রিয় কাকলি’ বলে। কে না জানে, তৃণমূলের রাজনীতিতে বরাবরই মমতার পরশ-পাথরে মাটির ঢেলাও সোনা হয়!

অতএব ফের পুরনো মেজাজ। কোমরে আঁচল জড়িয়ে দরদরিয়ে ঘামতে ঘামতেই আমডাঙা ছেড়ে মধ্যমগ্রাম, অশোকনগরের প্রার্থীর হয়ে মিছিল-জনসভায় নেমে পড়লেন কাকলি। প্রার্থী নন, তবু সাংসদ হিসেবে তাঁর উপরেই যে বারাসত লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা ‘জেতানোর’ দায়িত্ব!

তবে শুধুই কি নারদ-হুল? সিন্ডিকেটের সিলমোহরই বা ছাড়ে কই! রাজারহাট-নিউ টাউনে সিন্ডিকেটের বাড়বাড়ন্তে, মারামারিতে বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে কাকলির নাম। তিনি নিজে কখনওই সিন্ডিকেট-সংযোগের কথা স্বীকার করেনননি। তাঁর কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে কিছু জানি না।’’

রাজারহাট-নিউ টাউনে সিন্ডিকেট-রাজ নিয়ে বিধাননগর পুর-নিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে কাকলির বিবাদ, দুই গোষ্ঠীর প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব শিরোনামে এসেছে বহু বারই। এক সময়ে নিজেরই ঘনিষ্ঠ সব্যসাচীকে ‘শায়েস্তা’ করতে রাজারহাটের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূলে আনাও কাকলিরই ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’ বলে মনে করে সব্যসাচী-গোষ্ঠী। আর ধীমান রায়ের হয়ে অশোকনগর বিধানসভার মঞ্চে মাইক হাতে কাকলি নিজে বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, সিন্ডিকেটের সঙ্গে আমাদের দলের নাম জড়িয়ে বলা কাগুজে গল্প।’’

এরই সঙ্গে জুড়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। গত বিধানসভায় প্রায় ৩০টি আসন দখলের পরে জেলার ক্ষমতা কার দখলে থাকবে, তা নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর সঙ্গে কাকলির বিবাদ প্রকাশ্যে না এলেও দলের অন্দরে নতুন কিছু নয়। কোন শিবিরের কত জন অনুগামী ‘টিকিট’ পাবে, বিভিন্ন সময়ে তা নিয়ে বিব্রত হয়েছে দলও। সেই জ্যোতিপ্রিয়র কেন্দ্র হাবরা-র প্রায় ৭০টি সভায় বিশেষ দেখা যায়নি কাকলীকে। এক শিবির বলছে, ‘‘শুধু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই নয়, নারদার পরে জেলা-নেত্রীকে এনে ঝুঁকি নিতে চাননি জ্যোতিপ্রিয়।’’ অন্য শিবির পাল্টা বলছে, ‘‘না ডাকলে, উপযাচক হয়ে তিনি যাবেনই বা কেন?’’

কী বলছেন কাকলি? তখন সন্ধে। বারাসতের চাঁপাডালির সভায় ঘিরে রয়েছে মহিলাদের ভিড়। জবাব আসে, ‘‘বালুর ওখানে যাইনি, এ সব কে বলে আপনাদের? গিয়েছি তো!’’ কোথায়, কবে? ‘‘দেশবন্ধু পার্ক, পৃথিবার মতো বেশ কয়েকটি কর্মিসভা থেকে শুরু করে জনসভায়ও গিয়েছি,’’ বলেন কাকলি।

কোমর বেঁধে মাইক হাতে ফের তেতে যান নেত্রী— ‘‘এত মানুষ আমাদের সঙ্গে। ফল বেরোলেই জবাব মিলবে।’’

Kakoli Ghosh Dastidar Assembly Election 2016 Narada sting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy